তাসকিনের মধ্যে এখনও ওই সারল্যটা রয়েছে। স্নায়ুক্ষয়ী কোনো ম্যাচ হেরে গেলে চোখ ভিজে যায় তার। এর আগে সতীর্থরা এসেই তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। তবে সেদিন দুবাইয়ে তাসকিনের মাথায় হাত রেখেছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। যদিও এর কিছুক্ষণ আগেই লঙ্কান ড্রেসিংরুমের সামনে মুশফিকদের দেখিয়েই নাগিন ডান্স দিয়েছিলেন তাঁরা।

মাথার ওপর দুই হাত তুলে সর্পনাচের ওই ভঙ্গিমাটা বছর চারেক আগে নিদহাস ট্রফিতে মুশফিকরাই শুরু করেছিলেন। তারপর থেকে দুই দেশের মুখোমুখিতে এই নাগিন ডান্সই হয়ে ওঠে বিশ্বক্রিকেটের বাণিজ্যিক প্রচারক !

এবারও মাঠে নামার আগেই দুই দলের বোলাররা কে বিশ্বমানের, সেটা নিয়েই তেতে ছিল দুই পক্ষ। তবে সাকিব মনে করেন এসব আবেগ ঝেড়ে ফেলে মস্তিস্ক ব্যবহার করা উচিত। 'এটা ঠিক যে আমরা ভীষণ আবেগী। তবে সময় এসেছে এসব আবেগ একদিকে সরিয়ে রেখে ম্যাচে মস্তিস্ক ব্যবহার করা।' এই আবেগের কারণে শুধু প্রতিপক্ষকে শত্রুর জায়গাতেই দাঁড় করানো নয়, দল বাছাইয়েও অনেক ভুল থেকে যায়।

কে কবে কী করেছে, কার কবে কী অবদান রয়েছে, সেটা ভেবে অনেক কঠিন সিদ্ধান্তও নিতে পারে না টিম ম্যানেজমেন্ট। সে কারণেই মুশফিকুর রহিম ১৭ বছর ধরে একশর বেশি আন্তর্জাতিক টি২০ খেলে স্ট্রাইক রেট ১১৫.০৩ আর গড় ১৯.৪৮। এই পারফরম্যান্স নিয়েই যদি কেউ একশর বেশি ম্যাচ খেলতে পারেন, তাহলে ধরে নিতেই হবে তাঁর এই সামর্থ্যের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের।

কিন্তু দলের যে সিনিয়রের কাছ থেকে শেষ তিন বছরে রান এসেছে ম্যাচপ্রতি ১৬ গড়ে, যার স্ট্রাইক রেট নেমে এসেছে ৯৬ এ। তাঁর কাছ থেকে আর কতটা আশা করতে পারে দল। সমর্থকরা আশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেক আগেই, কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট বোধহয় সেটা ধরে রেখেছে। সে কারণেই অটো চয়েজে থাকেন তিনি।

বয়সের ছাপ পড়েছে তাঁর চোখেমুখে, ব্যাটিংয়েও সেই ধার নেই, ক্যাচ ফেলছেন নিয়মিত, আবার ক্যাচ ধরেও বুঝতে পারছেন না সেটা ব্যাটে লেগেছিল কিনা, পেসারদের লেগ সাইড দিয়ে যাওয়া বলগুলো আটকাতে পারছেন না। মুশফিকের এই হতশ্রী পারফরম্যান্সের খেসারত দিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ম্যাচের পর ক্যামেরার সামনে যদিও সাকিব মুশফিকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলেছেন হয়তো প্রত্যাশার চাপ ছিল সামলাতে পারেননি। কিন্তু সাকিবের এই কথার মধ্যেও তো সেই ' আবেগ'ই লুকিয়ে!

দীর্ঘদিনের সহযাত্রী হওয়ার কারণেই কি কেবল তাকে সমর্থন করতে হবে। যদি আবেগ ছাপিয়ে পেশাদারিত্বের জায়গায় যেতে পারত টিম ম্যানেজমেন্ট, তাহলে হয়তো অনেক আগেই তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হতো। ক্যারিয়ারের প্রথম ছয় বছর যিনি কিনা একশর নিচে স্ট্রাইক রেটে টি২০ খেলেছেন, তিনি এখনো দলে রয়েছেন সেই আবেগের কারণেই।

একই অবস্থা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাপারেও। জিম্বাবুয়ে সফরে তাকে বাদ দেয়ার পরেও বিসিবি সভাপতির বিশেষ অনুরোধে একাদশে রাখা হয়েছিল, যা চাননি তখনকার কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। টি২০ বিশ্বকাপের পরই অবসর নেবেন- এমন একটা অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে গিয়ে দিনের পর দিন তলিয়ে যাচ্ছে একটি দল। অথচ সেই আবেগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট।