হতে পারে মাঠে তাঁরা একে অন্যের প্রবল প্রতিপক্ষ। কারও দল হয়তো র‌্যাঙ্কিংয়ে ওপরে, কেউ বা আছেন ফর্মের তুঙ্গে। কিন্তু একটি সম্পর্কের সুতোয় তাঁরা প্রত্যেকেই বাঁধা। ক্রিকেটই তাঁদের আত্মীয়তার সেই বন্ধন। আর সে কারণেই ঊনত্রিশে পা রাখার দিন বাবর আজমকে শুভেচ্ছা জানান রোহিত শর্মা। জন্মদিনের কেক কেটে বিশ্বকাপের সব অধিনায়ককে খাইয়ে দেন বাবর। মেলবোর্নে আইসিসির ক্যাপ্টেনস মিডিয়া ডে-এর ফটোশুটে অসি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ পাশে বসিয়ে নেন নামিবিয়ার অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমুসকে। আসলে এভাবেই প্রশান্তপাড়ে অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপের উৎসবে সব রং এক হয়ে মিশেছে। ষোলো দল নিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে অষ্টম টি২০ বিশ্বকাপ। কভিডের কারণে দুই বছরে গায়ে গায়ে দুটি টি২০ বিশ্বকাপ মাঠে গড়াচ্ছে। তাতে অবশ্য এর আকর্ষণ কমছে না। এবার সরাসরি সুপার টুয়েলভে খেলতে নামছে বাংলাদেশ; ২৩ অক্টোবর ভারত-পাকিস্তান দিয়ে সুপার টুয়েলভ পর্ব শুরু। ১৩ নভেম্বর গিয়ে ফাইনাল। তার আগে গতকাল সব দলের অধিনায়ককে নিয়ে আইসিসির সঞ্চালক গল্প-আড্ডায় মেতেছিলেন। সমকাল পাঠকের জন্য সেই আড্ডারই চুম্বক অংশ।
কেন (নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক), নিউজিল্যান্ডের পারফরম্যান্স নিয়ে সবাই বেশ আশাবাদী। টি২০-তে আপনারা বিশ্বমানের খেলা খেলছেন। কিন্তু তার পরও বিশ্বকাপে কেউ আপনারদের ফেভারিট বলে না।
কেন উইলিয়ামসন: ঠিকই বলেছেন। আসলে মানুষ আমাদের নিয়ে কী বলছে, তা আমরা আটকাতে পারব না। কিন্তু আমরা এখানে সেরা খেলাটাই খেলতে এসেছি। চেষ্টা করব নিজেদের লক্ষ্য পূরণের। বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের দারুণ কিছু স্মৃতি রয়েছে। কয়েক মাস আগেই আমরা টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছি। প্রায় একই দল নিয়ে এবারও এসেছি। তবে এটা ঠিক, ক্রিকেটে অনেক কিছুই হতে পারে, নির্দিষ্ট দিনে যে কেউ জিততে পারে। বিশ্বকাপে আসা প্রতিটি দলই যে কোনো ম্যাচ জয়ের ক্ষমতা রাখে।
জস (ইংল্যান্ড অধিনায়ক), ইংল্যান্ড গতবার দারুণ শুরু করেও সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নিয়েছিল। এবারে নকআউটের জন্য আপনাদের মানসিক প্রস্তুতি কেমন।
জস বাটলার: সত্যি কথা বলতে কি, আগে কী হয়েছে, না হয়েছে- তা নিয়ে খুব বেশি আমরা কখনোই ভাবি না। যেটা কেন (কেন উইলিয়াসমন) বলল, বাস্তবতা আমাদের সবাইকে মেনে নিতেই হবে। এখানে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের যে কেউ যে কোনো দিন আপনার হাত থেকে ম্যাচ বের করে নিতে পারেন। তাই খুব বেশি না ভেবে শুধু পরের ম্যাচটি নিয়ে ভাবুন, তাহলেই হবে। ইতিহাস বলে, এ ধরনের বড় টুর্নামেন্টে স্বাগতিকরাই ফেভারিট থাকে। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আপনি যতই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বেশি বেশি ম্যাচ খেলুন কিংবা যতই অভিজ্ঞতা থাক- কোথাও গিয়ে স্বাগতিকরা একটু এগিয়ে থাকেই।
সাকিব (বাংলাদেশ অধিনায়ক), আপনি মাত্রই নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে এসেছেন। বিশ্বকাপে আপনাদের দলে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। এই আসরে বাংলাদেশের কাছ থেকে কী ধরনের খেলা সমর্থকরা প্রত্যাশা করতে পারেন।
সাকিব আল হাসান: আমাদের দলটি নিয়ে আপনি উত্তেজনা অনুভব করতে পারেন। দলের বেশিরভাগ মুখই নতুন। এবারের বিশ্বকাপ তাদের জন্য ভালো অভিজ্ঞতা এনে দিতে পারে। আমাদের সবাই এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো টি২০ খেলতে নামছি, এমনকি আমার নিজেরও প্রথম অভিজ্ঞতা হবে এখানে টি২০ খেলা। সুতরাং আমাদের সবকিছুই নতুন। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি ভালোই হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চে দুটি ভালো দলের বিপক্ষে চারটি ম্যাচ খেলে এসেছি আমরা। আমরা বুঝতে পেরেছি, এখানে অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের কীভাবে খেলতে হবে। আমরা প্রস্তুত ভালো খেলতে।
সাকিব, সত্যিই কি অস্ট্রেলিয়ায় আপনি আগে কখনও টি২০ খেলেননি?
সাকিব আল হাসান: হ্যাঁ, এটাই বাস্তবতা। পনেরো বছর ধরে আমি আন্তর্জাতিক টি২০ খেলছি।
দাসুন (শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক), আপনারা এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন। অথচ শ্রীলঙ্কাকে প্রথম পর্ব খেলতে হচ্ছে। আপনারা যতই ভালো খেলুন না কেন, কেউ এটা বলে না যে শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপ জিতবে।
দাসুন শানাকা: টি২০ ক্রিকেটে আমরা কেউ জানি না, কখন কোন দল ভালো হবে কিংবা খারাপ। সবকিছুই নির্ভর করে নির্দিষ্ট ওই দিনটির ওপর। তবে এটা ঠিক, এশিয়া কাপ জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া দলে লাহিরু কুমারা আর চামেরার মতো পারফর্মার ফিরেছেন। ব্যাটিংয়ে আমাদের গভীরতা রয়েছে। বোলাররাও ভালো করছে। সব মিলিয়ে এটুকু বলতে পারি, বিশ্বকাপের জন্যও তৈরি রয়েছে শ্রীলঙ্কা।
অ্যারন (অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক), অস্ট্রেলিয়া দলটি অনেকটা ফেরারির মতো। ফেরারিতে যেমন আটটি সিলিন্ডার থাকে, তেমনি আপনার কাছে ১৫টি বিলাসবহুল সিলিন্ডার রয়েছে। ম্যাচেও কি ফেরারির মতো ছুটতে দেখা যাবে অস্ট্রেলিয়াকে।
অ্যারন ফিঞ্চ: এটা ঠিক যে, ম্যাচের এগারো ক্রিকেটারই আপনাকে জয় এনে দেবে, তবে বিশ্বকাপ জিততে হলে আপনার ১৫টি সিলিন্ডারই দরকার হবে। এবং সেটা আমার হাতে রয়েছে। আমাদের ব্যাটে-বলে ম্যাচ জেতানোর মতো পারফর্মার রয়েছে। দলের প্রত্যেকে জানে, কোন সময়ে তাঁকে কী করতে হবে। আর সঠিক সময়ে সঠিক ক্রিকেটারকে ব্যবহার করাই হচ্ছে ফেরারি ড্রাইভারের কাজ। টি২০ ক্রিকেটে শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঝুঁকিটা এখানেই নিতে হয়, ওপেনিংয়ের আগ্রাসনটা তখন পুরো ইনিংসে ধরা থাকে। তবে সময়ে এই পরিকল্পনা আপনার কাজে আসবে না। অনেক ম্যাচ খেলতে খেলতে আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন, প্রথম পরিকল্পনা ভেস্তে গেলে পরবর্তী কী করতে হবে। আমার মনে হয়, আমরা সেটা জানি।
নিকোলাস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক), টি২০-তে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে সব সময়ই প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু এবার আপনাদের প্রথম রাউন্ড খেলতে হচ্ছে। দলে বেশ কিছু অভিজ্ঞ মুখ অনুপস্থিত। এ অবস্থায় আপনাদের চ্যালেঞ্জ কতটা বেশি, দল নিয়ে আপনার নিজের প্রত্যাশাই বা কতটুকু?
নিকোলাস পুরান: সত্যি কথা বলতে কি, প্রত্যাশার কোনো চাপ নেই আমাদের মধ্যে। এটা ঠিক, নতুন একটি সেটআপ নিয়ে এবারে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছি আমরা। তবে দলের প্রত্যেকেই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে প্রস্তুত। আমরা নিচের থেকে খেলা শুরু করছি ওপরে ওঠার জন্য। এটা একদিক থেকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি আশীর্বাদও বটে। আমরা মূল পর্বে যাওয়ার আগে বেশ কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব, যাতে দল আরও গোছানো হবে। দলের প্রত্যেকে উপলব্ধি করতে পারবে, কতটা পরিশ্রম করলে সেরাটা দেওয়া যায়।
রোহিত (ভারত অধিনায়ক), ২০০৭ থেকে ২০২২, আপনি ও সাকিব আল হাসান- এ দু'জন ক্রিকেটারই প্রতিটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন। লম্বা এ সময়ে এই ফরম্যাট কতটা কঠিন হয়েছে, খেলার কৌশলই বা কতটা বদলেছে? নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যদি মূল্যায়ন করেন।
রোহিত শর্মা: ঠিকই বলেছেন, পনেরো বছরের লম্বা সময়। সেটা ছিল আমার প্রথম বিশ্বকাপ। আমি শুধু এই ফরম্যাটটি উপভোগ করতেই নেমেছিলাম। এই ফরম্যাটে অনেক কিছুই বদলেছে। ২০০৭ সালে ১৪০-১৫০ করেও ম্যাচ জেতা যেত। আর এখন ওই রান ১৪-১৫ ওভারেই তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এখন প্রতিটি দল ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে। উইকেট হারানোর ভয় না পেয়ে শুরুতে সবাই ঝুঁকি নেয়। এই ফরম্যাটে ঝুঁকি নিতে হয় এবং তার পুরস্কারও পাওয়া যায়। এটাই টি২০ ফরম্যাটের সৌন্দর্য। আর এটা লোকে পছন্দ করে।