টি২০ বিশ্বকাপ মাঠে গড়াচ্ছে কাল থেকে। ক্রিকেট বিশ্বের নজর এখন অস্ট্রেলিয়ায়। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষও আশায় ঘরবসতি করছেন টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে। সাকিব আল হাসানরা দেশের মানুষের সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমিনুল ইসলাম বুলবুলও রয়েছেন ধোঁয়াশায়। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ, বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং ভুল ডিরেকশন ইস্যুতে মেলবোর্নে বুলবুলের যৌক্তিক ব্যাখ্যা শুনেছেন সেকান্দার আলী
সমকাল: অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপের হাওয়া কেমন?
বুলবুল: আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। মেলবোর্নে প্রচুর বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এমসিজি সাজানো হয়েছে। বিমানবন্দরে কিছু ফেস্টুন দেখেছি। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় এত প্রচারণা দেখিনি। সত্যিই মেলবোর্নে এবার বিশ্বকাপ বিশ্বকাপ মনে হচ্ছে।
সমকাল: অস্ট্রেলিয়া টি২০ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। টুর্নামেন্ট আয়োজনে এর কোনো প্রভাব পড়েছে?
বুলবুল: কিছু প্রভাব তো থাকেই। তবে আমার কাছে মনে হয় কভিডের পরে অস্ট্রেলিয়া বড় কোনো স্পোর্টস ইভেন্ট আয়োজন করছে, সে কারণে উৎসবমুখর একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অবশ্যই সেটা এশিয়ার মতো নয়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেট বিশ্বকাপ হলে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যে সাড়া ফেলে, অস্ট্রেলিয়ায় তা কোনোভাবেই পাওয়া যাবে না। এ দেশে অনেক স্পোর্টস। টেনিস খুব জনপ্রিয়। হকি খুব বড় খেলা। ফুটি (রাগবি), ফুটবল পছন্দ করে। ইউরোপের প্রচুর মানুষ অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তাঁরা ফুটবল নিয়ে মাতামাতি করেন। ক্রিকেটের দর্শক আলাদা। খেলাটিকে আরও বেশি জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে। আইসিসিও এতে সহযোগিতা করছে। তবে বিশ্বকাপের সত্যিকারের আমেজ পাওয়া যায় বাংলাদেশে।
সমকাল: টি২০ বিশ্বকাপে দলের কাছে বাংলাদেশি কমিউনিটি কী আশা করছে?
বুলবুল: সবাই তো দেশের ভালোটাই দেখতে চায়। জয় দেখতে চায়। যদিও আমরা টি২০ ক্রিকেটে সম্প্রতি ভালো করতে পারছি না। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ভালো করার সামর্থ্য আছে। এশিয়া কাপে হেড কোচ যাননি, টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট গেছেন। তিনি এক মাসে কী পরিবর্তন করবেন? টিম ডিরেক্টর দলের সঙ্গে থাকছেন। তাঁর কাজটা কী? তিনি যখন দলের সঙ্গে থাকেন, তখন তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে। বাংলাদেশ দলটা কারও সম্পত্তি না। ১৬ কোটি মানুষের দল। কেউ সম্মানি নিয়ে দলের সঙ্গে থাকলে সেটা চাকরি। কেন দলের এই পরিণতি, তার জবাব টিম ডিরেক্টরের কাছে চাওয়া উচিত।
সমকাল: তাহলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ভালো জায়গায় রাখছেন না?
বুলবুল: দেখুন, আমাকে আমিরাত দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। তাদের কোচরা খুব আক্ষেপ করছিলেন, সিরিজের প্রথম ম্যাচটা তাঁরা জিততে পারতেন। আমিরাত, আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ে- সবাই বাংলাদেশকে সহজ টার্গেট মনে করে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা টি২০ তে পাত্তা দেয় না। এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। টি২০ ক্রিকেট তো বিশ্বের সব দেশ একসঙ্গে শুরু করেছে। এই সংস্করণে আমাদের খুব ভালো করার সম্ভাবনা ছিল। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উন্নতির পথেই ছিল। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে। নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল খেলেছে। এখন কেন এত খারাপ অবস্থা? এই পরিস্থিতি কারা তৈরি করে দিয়েছেন? এর পরও বিশ্বকাপে ভালো করার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
সমকাল: টি২০-তে বাংলাদেশের দুর্বলতা কোথায়?
বুলবুল: আমরা কাছে মনে হয়েছে, আমরা হয় বোল্ড আউট হচ্ছি, নয়তো ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হচ্ছি। প্রথম দিকে কিছু রান করতে পারছি। মিডল ওভারে উইকেট হারাচ্ছি। সোজাকথা এই পরিস্থিতি থেকে ব্যাটারদের বের করে আনতে ভালো প্র্যাকটিস লাগবে। সেটা হচ্ছে না। বিষয়গুলো গেমপ্ল্যানেও রাখতে হবে। বিশ্বকাপে দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচ আছে, সেখানে সঠিক প্ল্যান দিলে এবং ক্রিকেটাররা সেটা কার্যকর করতে পারলে মূল ম্যাচে ভালো করার সুযোগ থাকবে। একটা কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে, বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার এই দলে নেই। তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর জায়গায় যারা সুযোগ পেয়েছে তারাও ভালো। একটু সময় দিলে ভালো করবে।
সমকাল: বিশ্বকাপের মাঠে সমর্থন থাকবে তো?
বুলবুল: অবশ্যই থাকবে। বাংলাদেশিরা টিকিট কেটে রেখেছে। আমরা তো এই একটি খেলাতেই ভালো করি। বিশ্বমঞ্চে খেলি। আমরা সবাই মাঠে থাকব। বাংলাদেশ দলের পাশে থাকব। এখানকার কমিউনিটিও একটি টুর্নামেন্ট খেলবে। অ্যাডিলেডে টুর্নামেন্টটি হবে। বিশ্বকাপের মতো এটাও আইসিসির আয়োজন। আমরা চাই টি২০ বিশ্বকাপটা উপভোগ করতে।