বৈচিত্র্যের কারণে এক ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুতে ম্যাচ খেলার একটা রোমাঞ্চ থাকে। অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ হলেও কন্ডিশনের এই বৈচিত্র্য উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের জন্যও। হোবার্টে দেখা যেতে পারে স্পিনারদের শাসন। সিডনিও মাতাতে পারেন সাকিব আল হাসানরা। ব্রিসবেনের গ্যাবা আর অ্যাডিলেড ওভালের স্পোর্টিং উইকেটের বাউন্স উন্মাদনা ছড়াতে পারে পেস বোলিং ইউনিটে। 

বাংলাদেশের পরামর্শক কোচ শ্রীধরন শ্রীরাম কন্ডিশনের সুবিধা নেওয়ার ছক করে ফেলেছেন। হোবার্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বোলিং লাইনআপ সাজাতে পারেন স্পিনারদের অগ্রাধিকার দিয়ে। ভিডিও অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরন ল্যাপটপে ডাচদের ব্যাটিং-বোলিংয়ের ভিডিও ডাউনলোড করে রেখেছেন কাটাছেঁড়া করে সাকিবদের গেম প্ল্যান বুঝিয়ে দেবেন বলে।

টি২০ বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ছয়টি ম্যাচ হয়েছে হোবার্টে। বেশিরভাগ ম্যাচেই স্পিনাররা ভালো করেছেন। জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা বিশেষজ্ঞ স্পিনার না হয়েও ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪ ওভারে ১৯ রানে তিন উইকেট নিয়ে। ক্যারিবীয়দের সারপ্রাইজ দেওয়া স্কটল্যান্ডের জয়ের নায়কও ছিলেন দুই স্পিনার মার্ক ওয়াট ও মিচেল লেস্ক। মার্ক ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে তিন, আর মিচেল ৪ ওভারে ১৫ রানে দুটি উইকেট শিকার করেন। সিকান্দার বা মার্ক ওয়াটের কাছ থেকে প্রেরণা পেতেই পারেন সাকিব, মিরাজরা। ব্যবহৃত উইকেটে নেদারল্যান্ডসকে কাবু করার হাতিয়ার বানাতে পারে স্পিন বোলিং। 

অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতা থেকে শ্রীরাম কন্ডিশনের বিশ্নেষণ দিলেন এভাবে, 'হোবার্টে মনে হয় কিছুটা স্পিন ধরবে। কারণ ওখানে এর মধ্যেই বেশ কিছু ম্যাচ হয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। তবে টিভিতে দেখে মনে হচ্ছে, স্পিনে কিছু সহায়তা সেখানে আছে। সিডনি তো ঐতিহ্যগতভাবেই স্পিনারদের কিছুটা সহায়তা করে। আমরা যা শুনতে পাচ্ছি, এক প্রান্তের সীমানা সেখানে বড় থাকবে, আরেক প্রান্তে তুলনামূলক ছোট। সেখানে গিয়ে বোঝা যাবে আরও ভালো। ব্রিজবেন ঐতিহ্যগতভাবে ব্যাটিংয়ে জন্য ভালো। কিছুটা বাড়তি গতি ও বাউন্স অবশ্য এখানে থাকে। তবে স্কয়ার বাউন্ডারি এখানে বড়, কাজেই স্পিনারদের জন্য তা ভালো। যদি ব্যাক অব লেন্থে বল করতে পারে, স্পিনারদের ভূমিকা থাকবে এখানেও। অ্যাডিলেডে সোজা বাউন্ডারি অনেক বড়, স্কয়ার বাউন্ডারি ছোট। সেখানেও ঐতিহ্যগতভাবে বছরের এই সময়টায় বল একটু গ্রিপ করতে পারে। সেখানে ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা, স্পিনে যারা ভালো দল। সেখানে নিয়ে কন্ডিশন পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।'

কোচ সব ভেন্যু নিয়ে যে বিশ্নেষণ দিলেন, তাতে করে স্পিনারদের খুশি হওয়ার কথা। সত্যিই তেমন কিছু হলে বিশ্বকাপের দল গঠন করা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। শেখ মেহেদীর মতো কার্যকর একজন স্পিনারকে বাদ দেওয়ার কারণ কী? বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার সময় এই শ্রীরামই বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ায় উইকেটের বৈশিষ্ট্যের কারণেই স্পিনারদের সুবিধা কম থাকবে। সে যাই হোক, সাকিব, নাসুম, মিরাজ, মোসাদ্দেককে নিয়ে শক্তিশালী স্পিন লাইনআপ এখনও বাংলাদেশের। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নাসুম ছাড়া বাকি তিনজন খেলবেন হয়তো। চন্দ্রশেখরন ভিডিও বিশ্নেষণ করে স্পিনের কৌশল বলে দিচ্ছেন। 

গতকাল সমকালকে তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো দলের ফুটেজ পাওয়া এখন আর কঠিন না। যদিও পূর্ণ সদস্য দেশের সঙ্গে খুব বেশি ম্যাচ খেলেন না তাঁরা। তবে অন্য দলের মতো আমাদের হাতেও ফুটেজ আছে। এগুলো পর্যালোচনা করে কোচ গেম প্ল্যান দেবেন।' 

খেলা অস্ট্রেলিয়ায় হলেও স্পিন শক্তিতে বলিয়ান বাংলাদেশ দল হোবার্ট থেকে জয়ের ভেলায় ভেসে পাড়ি জমাক নয়নাভিরাম সিডনি হারবারে।