জিম্বাবুয়ে প্রতিপক্ষের চেয়েও বন্ধুত্বের জায়গায় আসীন ছিল দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে। বাংলাদেশ দলের কোনো খেলা না থাকলে জিম্বাবুয়েকে আমন্ত্রণ জানাত বিসিবি। ক্রিকেটারদের ছন্দে ফেরাতেও জিম্বাবুয়েই ছিল ভরসা। এই বন্ধুত্বের আড়ালে পুনর্গঠিত হওয়া জিম্বাবুয়ে এখন বেশ ভালো দল। ২০২২ সালে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলে সমীহের জায়গায় পৌঁছে গেছে তারা। টি২০ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ভালো ক্রিকেটও খেলেছে তারা। পাকিস্তানের মতো দলকে হারিয়ে সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে জিম্বাবুয়ে। সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই বাংলাদেশ আজ প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে টি২০ বিশ্বকাপে। যে ম্যাচ ঘিরে অন্যরকম একটা উত্তাপ পাওয়া যাচ্ছে ব্রিসবেনে। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ থেকে উভয় দলই পূর্ণ পয়েন্ট পেতে চাচ্ছে। যে দলই জিতুক, সেমিফাইনালের রেসটা জমে উঠবে। জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চায়। যাতে আত্মবিশ্বাস নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে পারে অ্যাডিলেডে।

এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সিডনিতে রীতিমতো গুঁড়িয়ে দিয়েছে সাকিবদের। বোলিং-ব্যাটিং কোনো কিছুই ঠিকমতো করতে পারেনি। জিম্বাবুয়ে সেখানে পরীক্ষা দিয়ে বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে শক্ত ভিত গড়ে ফেলেছে। সেদিক থেকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত থেকে গ্যাবায় আজ খেলতে পারবে তারা। জিম্বাবুয়ের মতো এতটা মনোবল বাংলাদেশ শিবিরে নেই। নেদারল্যান্ডসকে হারানোর পর খেলোয়াড়দের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা গেছে, সেটা কেড়ে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে সাকিবদের পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে কাজটি কঠিন। কারণ এমনিতেই দল হিসেবে বিশ্বকাপে ভালো করে দারুণ ছন্দে আছেন সিকান্দার রাজারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে সাম্প্রতিক রেকর্ডও তাঁদের পক্ষে। গত জুলাই-আগস্টে হোম সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টি২০ সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। দ্বিপক্ষীয় ওই সিরিজে ক্যারিয়ারসেরা সাফল্য দেখান সিকান্দার রাজা। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠানরত টি২০ বিশ্বকাপেও দারুণ ছন্দে আছেন তিনি। দুটি ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা হয়ে গেছে তাঁর। ধারাবাহিকতা রাখতে পারলে রেকর্ডটা আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে পারবেন তিনি।

গত এক দশকে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে নিজেদের মধ্যে এত বেশি ক্রিকেট খেলেছে, একে অন্যের সবল-দুর্বলতা ভালোভাবে জানা। জিম্বাবুয়ে আবার টি২০ তে বেশি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের চেয়ে। ক্রেইগ আরভিনরা এই সংস্করণটা ভালো বোঝেনও। বাংলাদেশ দলে কতিপয় ক্রিকেটার ছাড়া যেটা এখনও ধরতে পারেননি। বিশেষ করে ব্যাটাররা ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলতে পারেন না। তবে আজকের ম্যাচে মনস্তাত্ত্বিক গেম খেলে এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। পরামর্শক কোচ শ্রীধরন শ্রীরাম গ্যাবায় জয়ের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। জিম্বাবুয়েকে সমীহের জায়গায় রেখে গেম প্ল্যান করেছেন কোচ। গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমরা জিম্বাবুয়েকে সমীহ করছি। তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। ওই ম্যাচের প্রতিটি বল দেখেছি। যেভাবে তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলল, এটা অবিশ্বাস্য। পুরো কৃতিত্ব তাদের দিতে হবে, পুরো সম্মানও। আমাদের একটা পরিকল্পনা অবশ্যই আছে এই ম্যাচ নিয়ে। সেটা অপ্রকাশিতই থাক।'

ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) এবং নিউজিল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে দারুণ ক্রিকেট খেলেছেন সাকিব। যদিও বিশ্বকাপে সেই ছন্দটা এখনও দেখাতে পারেননি তিনি। নেদারল্যান্ডস বা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রান পাননি। বোলিংটাও কাঙ্ক্ষিত মানে রাখতে পারেননি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের জ্বলে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ। নুরুল হাসান সোহান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, ইয়াসির আলী রাব্বিদের জ্বলে উঠতে হবে ব্যাট হতে। ওপেনিং জুটিতে সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্তকে ইনিংস বড় করতে হবে। মোট কথা ব্যাটার এবং বোলারদের ইউনিট হিসেবে পারফর্ম করতে হবে আজ।

সিডনি থেকে ব্রিসবেনে ফিরে বাংলাদেশ দল বিমানবন্দর থেকে সোজা গ্যাবায় গিয়েছিল উইকেট এবং আউটফিল্ড দেখতে। সে রাতে টিম মিটিংয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে গেম প্ল্যানও হয়েছে। কোচ শ্রীরাম জানান, গ্যাবার উইকেটে পেসারদের জন্য সুবিধা থাকে। যেটা কাজে লাগাতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব। এককথায় গ্যাবার উইকেট স্পোর্টিং। যেখানে ব্যাটারদের জন্য ভালো সুযোগ থাকে। লিটন কুমার দাস বা আফিফ হোসেনরা এক'দুটি বিস্ম্ফোরক ইনিংস খেলে দিলে বড় সংগ্রহ পেতে পারে দল। কোচের বিশ্বাস জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেটা করতে পারবেন ব্যাটাররা।