-samakal-635e37ec17d4a.jpg)
উনিশ শতকের সেই ত্রিশের দশক- জাহাজে করে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে খেলতে আসা থেকে শুরু। তার পর তো বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্ব রাজনীতিতে মুসোলিনি-হিটলারের দাপট- সবই দেখেছে বিশ্বকাপ ফুটবল। সাক্ষী থেকেছে ফুটবলের কিংবদন্তি পুসকাস, ক্রুয়েফ, পেলে, ম্যারাডোনা, প্লাতিনি, জিদান হয়ে বড় রোনালদোর পায়ে এই খেলাটার শৈল্পিক রূপ পাওয়ার। আর এসব নিয়েই বিশ্বকাপের গত শতাব্দীর কিছু চাপা পড়ে থাকা ইতিহাস তুলে আনার চেষ্টা করেছেন সঞ্জয় সাহা পিয়াল
লাতিন থেকে ইউরোপ হয়ে ফের লাতিন- এমনটাই ধরে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ফিফার কাছে তারা আবেদন করে ১৯৩৮ বিশ্বকাপের আয়োজক হতে। ওদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দোরগোড়ায় ইউরোপজুড়ে তখন টালমাটাল অবস্থা। ১৯৩৬-এর ফিফা কংগ্রেসে আর্জেন্টিনার পক্ষ থেকে এসবই তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তাদের সে দাবি অগ্রাহ্য করে বার্লিনের অপেরা হলে সিদ্ধান্ত হয় ১৯৩৮ বিশ্বকাপ হবে ফ্রান্সে। ক্ষুব্ধ আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা যাবে না ইউরোপে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু তাদের সেই দাবির পেছনে আম-আর্জেন্টাইনের তেমন সমর্থন ছিল না, যেমনটি পেয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপে উরুগুয়ে। উরুগুয়ের ফুটবল সংস্থা তাদের জনগণের কাছে এটা প্রমাণ করতে পেরেছিল যে তাদের স্বাধীনতার শততম বার্ষিকীকে উপেক্ষা করেছে ইউরোপিয়ানরা! আর্জেন্টিনার ফুটবল সংস্থার হাতে তেমন কোনো যুক্তি ছিল না। তাই বিশ্বকাপ বয়কট করার সিদ্ধান্তের পর বুয়েন্স আয়ার্সে তাদের ফুটবল সংস্থার সামনে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে, পুলিশ ডেকে পরে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। সেবার আর্জেন্টিনা আর উরুগুয়ে নয় লাতিন আমেরিকা থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল ব্রাজিল। বিশ্বকাপের মঞ্চে সেবারই প্রথম সেরা চারে থেকে তারা ইঙ্গিত দিয়েছিল সামনে আসছে ব্রাজিলীয় রাজত্বের দিন।
তবে সেবারও সবচেয়ে বড় চমক কিংবা আশ্চর্যজনক ঘটনা ছিল অস্ট্রিয়ার না থাকাটা। থাকবেই বা কি করে, হিটলার তার আগেই দখল নিয়েছে অস্ট্রিয়া। ৪ জুন শুরু হয় বিশ্বকাপ, এর আগে ১২ এপ্রিল উঠে যায় অস্ট্রিয়ার ফুটবল সংস্থাও। ফিফা তাদের জায়গায় ইংল্যান্ডকে প্রস্তাব দেয় বিশ্বকাপ খেলার জন্য। কিন্তু স্বভাবসিদ্ধ ব্রিটিশরা তখনও নাক সিঁটকেই রয়েছে বিশ্বকাপের এই আনন্দযজ্ঞ নিয়ে। তাই ষোলো দলের জায়গায় ১৫ দল নিয়েই শুরু হয় কোয়ালিফাই রাউন্ড। অস্ট্রিয়া খেলার সুযোগ না পেলেও পরে তাদের ৯ খেলোয়াড়কে জার্মান দলে ভিড়িয়ে ছিলেন জার্মান কোচ শেপ হার্বারজার। শোনা যায় হিটলারের নির্দেশেই নাকি তিনি সেটা করেছিলেন।
সেবার বেশ কয়েকটি ম্যাচ 'টাই' হয়। আর তখন ফুটবলে টাইব্রেকারও আসেনি। টাই ম্যাচগুলো পরে রিপ্লে ম্যাচে ফল নির্ধারণ করা হতো। সেবার প্রথম পর্বে জার্মানি আর সুইজারল্যান্ড ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে ১-১ এ টাই হয়েছিল। তার পাঁচ দিন পর রিপ্লে ম্যাচে জার্মানদের ৪-২ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। ব্রাজিলের তারকা খেলোয়াড় ছিল লিওনিদাস। যদিও তখনও ফুটবলে ব্রাজিলীয় শৈলী ধরা পড়েনি, যা পরে ব্রাজিলকে আলাদা করে চিনিয়েছিল ফুটবল বিশ্বের কাছে। ওই ধাক্কাধাক্কি আর গা জোয়ারি করেই ব্রাজিল সেমিতে পৌঁছেছিল। কাদায় পা দেবে যাওয়া ব্রাজিল তারকা লিওনিদাস নাকি একসময় বুট খুলেও খেলেছিলেন একটি ম্যাচ। সেই লিওনিদাসকেই সেমিফাইনালে ইতালির বিপক্ষে নামাননি কোচ আধেমার পিমেন্তা। কেন কে জানে, পরে অবশ্য তিনি বলেছিলেন, পরপর দুই ম্যাচ খেলে ক্লান্ত লিওনিদাসকে তিনি ফাইনালে খেলানোর জন্য রেখে দিয়েছিলেন! ফাইনাল ছিল প্যারিসে, শোনা যায় সেমিফাইনালের আগেই পুরো ব্রাজিল দল প্যারিসের বিমানের টিকিট কেটে রাখে। তৃতীয় স্থানের জন্য খেলা ছিল আবার ফ্রান্সের অন্য শহর বোরদ্যঁতে। ব্রাজিল দল এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে সেমিফাইনালে তারা ইতালির বিপক্ষে দলের সেরা আট খেলোয়াড়কে বাদ দিয়েই মাঠে নামে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই ফাইনাল আর খেলা হয়নি ব্রাজিলের। ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে চলে যায় ইতালি। কথিত আছে, পরে ব্রাজিলের ওই প্যারিসের টিকিট নাকি কিনে নিয়েছিলেন ইতালিয়ান কোচ পেজো!
প্যারিসের সেই ফাইনালে মুখোমুখি চ্যাম্পিয়ন ইতালি আর হট ফেভারিট হাঙ্গেরি। ফাইনালে ৪-২ গোলে জেতে ইতালি। আনন্দ-কান্নায় ভেঙে পড়েন ইতালির কোচ পেজো। আজ এত বছর পরও তাঁর ওই রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেননি, কোচ হিসেবে পরপর দু'বার বিশ্বকাপ জয়।
মন্তব্য করুন