- খেলা
- শ্রীরামের চুক্তি বাড়াবে কি বিসিবি
শ্রীরামের চুক্তি বাড়াবে কি বিসিবি

শ্রীধরন শ্রীরাম
শ্রীধরন শ্রীরামের খুব প্রশংসা চারদিকে। এরই মধ্যে ভালো কোচের একটা স্বীকৃতিও জুটে গেছে তাঁর। সবচেয়ে বড় সার্টিফিকেট ক্রিকেটারদের কাছ থেকেই পেয়েছেন তিনি। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো বিশ্বকাপের সংবাদ সম্মেলনে শ্রীরামকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন কয়েক দিন আগে। যাঁদের নিয়ে কাজ করেন, সেই খেলোয়াড়রা ভালো বলার পর একজন কোচের যোগ্যতা মাপার জন্য অন্য কোনো মানদণ্ডের প্রয়োজন হয় না। সেদিক থেকে দল এবং ক্রিকেটারদের স্বার্থে এই কোচকে দীর্ঘ মেয়াদে নিয়োগ দিতেই পারে ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু বিসিবির গড়িমসি দেখে যে কারও মনে হতে পারে, শ্রীরামের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে আগ্রহী না। এর পেছনে একটা কারণও রয়েছে। ভারতীয় এ কোচ সোজাসাপটা কথা বলেন। ভুল করলে বিসিবি পরিচালকদেরও ছাড় দেন না। বিশ্বকাপ দলের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনকে দলের তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে চার্জ করেছিলেন শ্রীরাম। যেটা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পর্যন্ত গড়িয়েছে। কোচের এ আচরণকে উদ্ধত মনে করা হচ্ছে। প্রভাবশালী পরিচালকদের কেউই বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না। এ কারণে বিশ্বকাপের শেষ পর্যায়ে এসেও কোচের নিয়োগ নিয়ে আলোচনা এগোয়নি। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের কাছে শ্রীরামের চুক্তি নবায়নের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
এশিয়া কাপের ঠিক আগে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে সরিয়ে টি২০ দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় শ্রীরামের হাতে। সেই থেকে টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারের অন্তরালে প্রধান কোচের কাজই করছেন তিনি। বাংলাদেশ টি২০ দলকে মাত্র দুই মাসে একটা শেপ দিতে পেরেছেন। এই অল্প সময়ে ক্রিকেটারদের খুব কাছের একজন হয়ে গেছেন শ্রীরাম। একাধিক ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা দীর্ঘ মেয়াদে এই কোচের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তাই জাতীয় দলের সঙ্গে থাকা হেড অব ডেলিগেট জালাল ইউনুসের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোচ শ্রীরামের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে। তিনি বলেন, 'শ্রীরামকে তো ভালোই মনে হচ্ছে। ক্রিকেটাররা খুবই পছন্দ করে। ভুল করলে খেলোয়াড়দের বকাও দেয়, আবার বুকে জড়িয়ে নেয়। বিশ্বকাপের এ ক'দিন খুব কাছ থেকে দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে, সে ক্রিকেটারদের ভালো হ্যান্ডেল করতে জানে। একটা অগোছালো দলকে সুন্দর একটা শেপ দিয়েছে। বিশ্বকাপে একটা দল হয়ে খেলছে বাংলাদেশ।' এমন একজন ভালো কোচের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হবে কিনা- জানতে চাওয়া হলে বিসিবির এ পরিচালক বলেন, 'আমরা এটা নিয়ে একদমই ভাবছি না। আমরা এখন বিশ্বকাপের মধ্যেই থাকতে চাই। টুর্নামেন্ট শেষ হলে ভাবা যাবে।'
ভারতীয় এ কোচের নিয়োগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে সুজনের সঙ্গে সেই কোচের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে জানান একজন ক্রিকেটার। নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, 'শ্রীরাম খুবই ভালো কোচ। আমাদের স্বার্থেই রাখা উচিত তাঁকে।' কোচ এবং টিম ডিরেক্টরের সঙ্গে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে কিনা- জানতে চাওয়া হলে জালাল ইউনুস বলেন, 'সুজনের সঙ্গে শ্রীরামের সম্পর্ক তো ভালো। কোনো ঝামেলা দেখিনি তো।' ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সুজনকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছিল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিস্ময়কর হলো, যে রাসেল ডমিঙ্গোকে সারিয়ে টি২০ দল শ্রীরামের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল সেই টি২০ কোচের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। অস্ট্রেলিয়ায় গুঞ্জন, সুজনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিসিবি কর্তাদের বিরাগভাজন হয়েছেন তিনি। অথচ বিসিবির পরিকল্পনা ছিল বিশ্বকাপের পর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে শ্রীরামকে নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু জালাল ইউনুস জানালেন, হোম সিরিজে দায়িত্ব পালন করবেন রাসেল ডমিঙ্গো। কিছুদিন আগে যে কোচ ছিলেন বাতিলের তালিকায়, তিনিই এখন পছন্দের শীর্ষে। কে জানে, বিশ্বকাপ শেষে হয়তো আর বড় কোনো চমক উপহার দেবে বিসিবি।
মন্তব্য করুন