২ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ভিডিও; ৩ নভেম্বর স্থানীয় সময় সাড়ে ১১টার দিকে নিজের টুইটার পেজে ছেড়েছিলেন জেরার্ড পিকে। এক মিনিটের মাথায় মিলিয়ন মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছিল ভিডিওটি। কী ছিল ওই ২ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে? হ্যাঁ, ২ মিনিট ১৭ সেকেন্ড কেন; ১৭ ঘণ্টার ভিডিও দিয়েও পিকের বর্ণিল ক্যারিয়ারের আগাগোড়া বোঝানো যাবে না। কিন্তু এ যে বিদায়ের বারতা। এ যে শেষের দৃশ্য। যে দৃশ্যে লেগে আছে পিকের শৈশব, কৈশর আর তারুণ্যের আবেগি আলো।

১৯৮৭ সালে বার্সেলোনা শহরে জন্ম, ব্যবসায়ী বাবার আদুরে ছেলে পিকের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে বার্সার ফুটবলার হওয়া। মুখে কথা ফোটার পর বাবার এনে দেওয়া বার্সার মেরুন জার্সিটা জড়িয়েই রাস্তায় নামতেন ফুটবল নিয়ে। একদিন তাঁর মনে আশা জাগে ইয়োহান ক্রুইফকে দেখার। বাবার হাত ধরে ক্যাম্প ন্যুতে যান ফুটবল দেখতে। সে সময় আর ক্রুইফের দেখা পাননি। কেননা ১৯৯৬ সালের দিকেই বার্সার কোচিং চেয়ার ছেড়ে দেন এই ডাচ কিংবদন্তি। আশাটা আর পূরণ হয়নি। ততদিনে পিকেও ফুটবলটা একটু-আধটু রপ্ত করে নেন। ১৯৯৭ সালের দিকে বার্সার 'বি' দল দিয়েই তাঁর হাতেখড়ি। এর পর সেখান থেকে ম্যানইউ ও জারাগোজা হয়ে বার্সার মূল দলে নাম লেখানো।

তবে শুরু আর শেষটা একই ক্লাব থেকে হলেও গত কয়েক মাসের তিক্ত অভিজ্ঞতা পিকেকে অনেকটাই কাঁদিয়েছে। একদিকে পারিবারিক যন্ত্রণা, অন্যদিকে ক্লাবের নানা কথা। পাশাপাশি তো সমালোচনা ছিলই। সব কিছুর ইতি যেন টেনে দিলেন এক বাক্যে, 'আলমেরিয়ার বিপক্ষেই আমি শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি। সেটাই হবে বার্সার হয়ে আমার ইতি টানার দিন।'

লম্বা সময় বার্সায় কাটিয়েছেন। মেরুনে জড়িয়ে আছে তাঁর বহু আবেগ, বহু স্মৃতি। হয়তো সতীর্থরা ভাবেননি এভাবে বিদায় বলবেন। কিন্তু আচমকা তাঁর চলে যাওয়ার কথা শুনে তাঁদের অনেকেই স্তব্ধ হয়ে যান। পিকের সাবেক সতীর্থ পুয়োল এক বার্তায় বন্ধুকে শুভকামনা জানিয়ে লিখেছেন, 'পিকের মতো এমন কম খেলোয়াড়ই বার্সার জন্য লড়াই করেছে।' দলটির হয়ে প্রায় সব শিরোপাই জিতেছেন পিকে। বার্সার সুসময়ে ছিলেন, আবার দুঃসময়েও হাত ছাড়েননি। করোনার কঠিন সময়ে যখন অনেকেই ক্লাব বদলানোর জন্য তোড়জোড় লাগিয়ে দেন। পিকে নিজের বেতন কমিয়ে বাকিদের জন্য স্বস্তির পথটা করে দেন। তবে শেষটা একটু তিক্তই হলো তাঁর। বার্সার কর্তাদের সঙ্গে নানা কারণে দূরত্ব। সংসার ভাঙার একটা বাড়তি চাপ। নতুন ব্যবসায় সময় দেওয়া আবার ফর্মহীনতায় ভোগা- সব মিলিয়ে হয়তো এই সময়টিকেই উপযুক্ত মনে করেন পিকে। সেজন্য বিদায়ের ডাক, 'গত কয়েক দিন ধরেই অনেকে আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলছেন। এ পর্যন্ত আমি কোনো কিছুর জবাব দিইনি। আপনাদের অনেকের মতো আমি বার্সার একজন সমর্থক। আমি জন্মেছি ফুটবল পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ফুটবলার হওয়ার, বার্সায় খেলার। চেষ্টা করেছি যতদিন ছিলাম সর্বোচ্চটা দিতে। ধন্যবাদ আমার সব বন্ধু, সতীর্থদের। যারা আমাকে এতদূর আসতে সহযোগিতা করেছে। আমি সব সময় বলেছি, বার্সাই আমার প্রাণ। এই ক্লাব ছাড়া অন্য কাউকে মনে জায়গা দেওয়া কঠিন। এবার মনে হয় বিদায় বলার পালা। শনিবারের ম্যাচটাই আমার শেষ ম্যাচ।'