
বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলে জমকালো উদযাপন করার ইচ্ছা সবারই থাকে। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদেরও ফাইনাল জিতে ভিক্টোরি ল্যাপ দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। পাকিস্তানকে হারিয়ে সে উপলক্ষও পেয়ে গিয়েছিল তারা। কিন্তু মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বিশালতায় নিজেদের সমর্থকদের অভাব উদযাপনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। প্রেস বক্সের নিচে ভিআইপি গ্যালারিতে কিছু সমর্থক এবং বার্মি আর্মিদের কাছে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া তেমন কিছু করা হলো না বাটলারদের। মেলবোর্নে ভিক্টোরি ল্যাপ দেওয়া না হলেও বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ কমেনি একটুও। কিছু সমর্থক আর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উদযাপনে বিভোর ছিলেন বেন স্টোকসরা।
ফাইনাল ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হলো মেলবোর্নের ঐতিহ্য অনুযায়ী। ট্রফি নিয়ে বিজয়ী দলের ফটোসেশন হলো লম্বা সময় ধরে। খেলোয়াড়, কোচিং এবং সাপোর্ট স্টাফদের সবাই আরাধ্য ট্রফিতে ভালোবাসার চুম্বন এঁকে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। ইংল্যান্ড শিবির যখন উল্লাসে মাতোয়ারা, পাশের ড্রেসিংরুমে তখন কবরের নিস্তব্ধতা। বাবর আজম সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কতবারই না ঢোক গিললেন। আইসিসির বেঁধে দেওয়া এই নিয়মটুকুকে বড্ড একঘেয়ে লাগছিল বাবরের কাছে। সে কারণেই হয়তো সংবাদ সম্মেলনের পরিসর ছোট করে এনেছিলেন। যুদ্ধে জয়ীদের পক্ষে যেমন ইতিহাস লেখা হয়, ক্রিকেটও তেমনি মেতে থাকে বিজয়ীদের নিয়ে। গতকাল মেলবোর্নে তাই হলো। শান মাসুদরা মিডিয়া জোনে ভালো ভালো কথা বলেও গুরুত্ব পেলেন সামান্যই। সেখানে জস বাটলারের সংবাদ সম্মেলনে জমজমাট পরিবেশ। মঈন আলি ট্রফি হাতে অধিনায়কের সঙ্গে প্রবেশ করেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। হাই টেবিলে ট্রফি রেখে বাটলার উত্তর দিতে থাকেন রোমাঞ্চকর জয়ের পাথেয় সম্পর্কে।
সেরা ছন্দ নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনও ছিল তাদের অনুকূলে। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়ে প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করেছে দলটি। অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে একপেশে খেলে সেমিফাইনাল জিতে নিয়ে মেলবোর্নে শিরোপার মঞ্চে এসেছিল তারা। ছন্দটা ধরে রেখে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করে দলটি। বিজয়ী অধিনায়ক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'অসাধারণ। দুর্দান্ত একটি টুর্নামেন্ট ছিল। আমরা এখানে ট্রফি নিয়ে এসেছি। এ রকম একটি সাফল্য পাওয়া গর্ব করার মতো। যোগ্য দল হিসেবেই আমরা এটা করতে পেরেছি।' বাটলারের মতো বেন স্টোকস দুই সংস্করণের দুই বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। রোমাঞ্চকর জার্নিতে বেন হলেন সাহসী নাবিক। যে কিনা ফাইনাল ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি ইনিংস খেলেছেন। ৪৯ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও লো স্কোরিং ম্যাচে ইনিংস বিল্ড করতে পারা বেনের বড় গুণ বলে মনে করেন বাটলার, 'যে কোনো বড় অর্জনে সে থাকে। সে রাজ্যের চাপ নিতে পারে নিজের কাঁধে। সে ক্রিজে থাকলে জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত।' বেনের চেয়েও ফাইনাল জিততে বড় ভূমিকা ছিল পেসার স্যাম কারেনের। পাকিস্তানের মতো বড় দলকে ১৩৭ রানে বেঁধে ফেলার পেছনে বড় ভূমিকা তাঁর। ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের কোমর ভেঙে দেন। ফাইনালে লো স্কোরিং ম্যাচ হওয়ার পেছনেও ইংলিশ বোলারদের কৃতিত্ব অনেক। পেস এবং স্পিন দুই বিভাগেই সমন্বিত পারফরম্যান্স করে জয়ের ভিত গড়েছিলেন কারেনরা। সেটা সফল পরিণতি পায় ব্যাটারদের হাতে।
মন্তব্য করুন