
ওই পরিবারের কেউ আসেননি কাতারে। বুয়েন্স আয়ার্সে সব ভাইবোন আজ একসঙ্গে হবেন তাঁদের বাবার সমাধিতে ফুল দেওয়ার জন্য। আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করবেন। বেলেভেস্তা সিমেট্রিতে আজ দু'বছর ধরে মা-বাবার পাশের সমাধিতে শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। আজ তাঁর প্রয়াণবার্ষিকী। দুই বছর আগে বিশ্বকে স্তব্ধ করে অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছিলেন। বেঁচে থাকতে যে মানুষটি সারাক্ষণ হৈহুল্লোড় আর মানুষের ভিড়ে থাকতে পছন্দ করতেন, অন্তিমের নীরবতায় আজ তাঁর পাশে শুধুই রক্তের সম্পর্কগুলো! কেউ কি আজ যাবেন বেলেভেস্তার সমাধিক্ষেত্রে? আর্জেন্টিনার রেডিও মার্তেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনাপুত্র জুনিয়র ম্যারাডোনা অনেকটা অভিমান চাপা দিয়েই বলেছেন, 'তিনি আমাদের বাবা, তাঁর সমাধিতে আমরা ভাইবোনরাই যাব। আর দেখুন, যাঁরা আমার বাবার সঙ্গে মেসির তুলনা করেন, তাঁরা ফুটবল দেখেন না, বোঝেন না। এখানে আমরা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা গ্রহের কথা বলছি। ওই বুড়ো মানুষটি আমার বাবা, তাঁর সঙ্গে কারও তুলনা আমি কখনোই সহ্য করি না।'
জীবদ্দশায় এভাবে শুধুই পরিবারের মধ্যে আটকে থাকতে কখনোই পারেননি ম্যারাডোনা। আজ তাঁকে নিয়ে পুত্রের এমন বালখিল্যতা দেখলেও হয়তো ধমক দিতেন। বিশ্বকাপে দলের কোণঠাসা অবস্থা, বিষণ্ণ মেসির পাশে দাঁড়িয়ে হয়তো কাঁধ চাপড়ে দিতেন। উপদেশের আগে নিশ্চয় বকাও দিতেন- কেন অমন মুখ করে আছো তুমি লিও! মন খুলে হাসো। আমাকে দেখো, চাপের মুখেই তো জিনিয়াসরা শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে থাকে। আমি পেরেছিলাম, তুমি কেন পারবে না! এটা তো জানাই, বিশ্বমঞ্চে আমার তোমার মতো মানুষের উত্থান-পতন নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। প্রত্যাশা আর সমালোচনার চাপের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসাই তো তারকাদের কাজ।
হয়তো নব্বইয়ের ইতালি বিশ্বকাপের কথাই বলতেন। যেখানে প্রথম ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত হারের পরও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন ম্যারাডোনা। ফাইনালে রেফারির একটি বিতর্কিত পেনাল্টিতে হেরে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। হাতজোড় করে রেফারির কাছে মিনতি করেছিলেন ম্যারাডোনা, কেঁদেছিলেন ভরা গ্যালারির সামনে। দেশের জন্য বিশুদ্ধ সেই আবেগ আর নিজের ভেতরের ঐশ্বরিক ক্ষমতা- সবকিছু দিয়েই তো ম্যারাডোনা দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া দলকে শৃঙ্গে তুলেছিলেন। তাহলে মেসি কেন পারবেন না? হাতে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় তাঁদের। এরই মধ্যে মেক্সিকোর বিপক্ষে পরের ম্যাচের জন্য নিজেকে তৈরি রাখতেই হবে মেসিকে। আর্জেন্টিনা শুধু ঘুরে দাঁড়ালেই শান্তি পাবে ম্যারাডোনার আত্মা। ফুল নিয়ে সমাধিতে না গিয়েও মেসির শ্রদ্ধার্ঘ্য হবে শুধুই মেক্সিকোর বিপক্ষে জয়ে ফিরে আসা।
এই মেক্সিকো ম্যাচের আগে আর্জেন্টাইন মিডিয়া কাল হন্য হয়ে খুঁজছিল একজনকে। হোয়াটসঅ্যাপের কল ধরছিলেন না তিনি, মেসেজ সিন করলেও রিপ্লাই দেননি তাতে। এদিকে রোজারিওর হেড অফিস থেকে জরুরি বার্তা, যেভাবেই হোক তাঁর প্রতিক্রিয়া নিতেই হবে। কাতার কনভেনশন সেন্টারের মিডিয়া হাবে সকাল সকাল আর্জেন্টাইন তরুণ সাংবাদিকের অস্থির অবস্থা। তিনি খুঁজছেন সার্জিও আগুয়েরোকে। আর্জেন্টিনায় নাকি তাঁর এই সাত মাসের পুরোনো ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। যেখানে একটি ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আগুয়েরো আর্জেন্টিনা-সৌদি আরব ম্যাচ নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণের কথা বলেছিলেন। তাঁর সেই ভবিতব্য নাকি ১০০ শতাংশ মিলে গেছে। আগুয়েরো ওই ভিডিওতে আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনিকে ভিএআর প্রযুক্তি নিয়ে সতর্ক ও আরও বেশি বেশি কাজ করতে বলেছিলেন। বিশেষ করে অফসাইডের ব্যাপারে। এ ছাড়া সৌদি আরবের ১০ নম্বর ফুটবলার দাওসারি সম্পর্কেও বিশেষ বার্তা দিয়েছিলেন। এটাও বলেছিলেন, 'কোচ, আপনি চাইলে আমার এই ভিডিও ছেলেদের দেখাতে পারেন।'
এখন আগুয়েরো মেক্সিকো ম্যাচ নিয়ে কী বলেন, তা জানার কৌতূহল নাকি গোটা আর্জেন্টিনার আমজনতার। কিন্তু আগের দিন মেসিদের ট্রেনিংয়ে গিয়ে একরকম অপমানই হতে হয়েছিল তাঁকে। রুদ্ধদ্বার ট্রেনিং থাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি আগুয়েরোকে। তার পর থেকেই নীরব আগুয়েরো।
মন্তব্য করুন