হোসে ড্যানিয়েল ভ্যালেন্সিয়াকে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা একাদশের একজন হিসেবে সম্মান দেওয়া হয়। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ৫০ ম্যাচে ১৪ গোল করা আলবেসেলেস্তে দলের সাবেক এ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আক্রমণে দিয়েগো ম্যারাডোনারও সঙ্গী ছিলেন ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সিটি ম্যারাডোনার আগে ভ্যালেন্সিয়াই পরতেন। ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপের সেই ১০ নম্বর জার্সিটি তাঁর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। কিংবদন্তি ম্যারাডোনা দুই বছর আগে পরলোকে পাড়ি জমালেও ভ্যালেন্সিয়া কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল মেসিদের খেলা নিয়মিতই ফলো করছেন। তাঁর কাছে মনে হচ্ছে, আর্জেন্টিনা দুই ম্যাচ খেলে একটিতে হারলেও বিশ্বকাপ ট্রফি উঠবে মেসির হাতেই।

প্রশ্ন: কোচ মেনোত্তি প্রথম কখন আপনাকে জাতীয় দলে ডেকেছিলেন?

ভ্যালেন্সিয়া: মনে আছে, ১৯৭৪ সালে সিজার (কোচ মেনোত্তি) সাল্টায় (আর্জেন্টিনার উত্তরাঞ্চলের শহর) প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় বাছাই ক্যাম্প করেছিলেন। সেখান থেকে জাতীয় দলে খেলার প্রস্তাব পাই আমি। কোচ আগেই আমার সম্পর্কে এবং উত্তরাঞ্চলের আরও কিছু ফুটবলার সম্পর্কে জেনেছিলেন।

প্রশ্ন: ভ্যালেন্সিয়া-ম্যারাডোনা জুটি কি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জন্য আতঙ্কের নাম ছিল?

ভ্যালেন্সিয়া: দিয়েগোর সঙ্গে খেলাটা দারুণ উপভোগ্য ছিল। চমৎকার বোঝাপড়া ছিল আমাদের। অনুশীলনে আমাদের খুনসুটি দেখে কোচ মেনোত্তি হাসতেন। এটা বলছি কারণ, ওই চিকন লোকটা (কোচ মেনোত্তি) অনুশীলনে মাঠের মধ্যে থাকতেন আর এমন মন্তব্য করতেন, দেখ দেখ ওই দু'জন কী করছে? ম্যারাডোনার সঙ্গে খেলতে ভালোবাসতাম। কারণ আমাদের মধ্যে অভিন্ন ফুটবল অনুরাগ ছিল।

প্রশ্ন: সতীর্থদের মধ্যে অনেক তারকা খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও ১০ নম্বর জার্সি আপনি পেয়েছিলেন কী করে?

ভ্যালেন্সিয়া: সিজার মেনোত্তি ছিলেন সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা একজন কোচ। আমার সম্পর্কে তাঁর বিশ্বাস ছিল এই যে, আমি শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে দক্ষতায় এগিয়ে থাকা ফুটবলার। সমসাময়িক মিডফিল্ডারদের মতো শুধু ড্রিবলিং নৈপুণ্য সর্বস্ব ছিলাম না। মাঠজুড়ে খেলে প্রতিপক্ষের ফাঁকা জায়গা খুঁজে তাদের হতচকিত করে দিতে পারতাম। এই সামর্থ্যের কারণেই আমাকে পরিপূর্ণ একজন খেলোয়াড় মনে করতেন তিনি। সিজার আমার সামর্থ্যের সবটুকু কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন।

প্রশ্ন: এটা কি সত্যি, বিশ্বকাপ ট্রফি ছুঁয়ে দেখেননি?

ভ্যালেন্সিয়া: হ্যাঁ, এটা তেমন ব্যাপারই। বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ হওয়া মাত্রই আমি মা ও ভাইয়ের সঙ্গে বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিলাম। সে জন্য আগেই কোচের অনুমতি চেয়ে নিয়েছিলাম। তিনি আমাকে থাকতে বলেছিলেন, বিশ্বকাপ ট্রফি নেওয়ার পর পরবর্তী পার্টিগুলো উপভোগ করতে। কিন্তু হোটেলে আমার মা-ভাই অবস্থান করছিলেন। যে কারণে ট্রফি হাতে না নিয়েই হোটেলে ফিরেছিলাম বাড়িতে যাত্রা করতে।

প্রশ্ন: শোনা যায়, ম্যারাডোনা ১০ নম্বর জার্সিটি আপনার কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিলেন?

ভ্যালেন্সিয়া: মাঠ থেকে হোটেলে ফেরার সময় আমার গাড়িতে ম্যারাডোনা ছিল এটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। সে আমার পিছু নিয়েছিল জার্সির জন্য। আমি তখন এতটাই আবেগে ভেসে চলেছিলাম, জার্সি পরেই বাড়ি ফিরছিলাম। ম্যারাডোনা আমার জার্সি চেয়েছিল, তা ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার ভাই বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়, দিয়েগো জার্সি নিতে অপেক্ষা করছে। পরে আমি সেটা তাঁকে পাঠিয়ে দিই।

প্রশ্ন: এবার কাতার বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ, সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার পরাজয় নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

ভ্যালেন্সিয়া: ম্যাচের ফলাফল আমাদের সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। ম্যাচ শেষে আমি খুবই দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়েছি। এটা অপ্রত্যাশিত ম্যাচের একটি। এই পরিস্থিতিতে সবার মনে হতে পারে, বিশ্বকাপে আমাদের আগের আর্জেন্টিনা হতে হবে। এখন কাউকে দোষারোপের সময় নয়, একতাবদ্ধ হওয়ার এবং একসঙ্গে কাজ করার সময়। আমি বিশ্বাস করি, প্রথম ম্যাচটি জাতীয় দলের একটি 'ফলস পারফরম্যান্স'। মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল ফাইনাল। মেসির নেতৃত্বে ম্যাচটি আমরা জিতেছি। সবাই ছন্দ দেখালে পোল্যান্ডের বিপক্ষেও জিতব।

প্রশ্ন: আপনি কি এখনও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা দেখেন?

ভ্যালেন্সিয়া: আমার বিশ্বাস, এবার মেসির হাতেই ট্রফি উঠবে। এটা সহজ নয়, কিন্তু আমার কেন জানি এটা মনে হচ্ছে। তবে যেটা আমাকে শঙ্কিত করে সেটা হচ্ছে, আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা সেরা শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বকাপে যায়নি। কেউই আসলে শারীরিক সক্ষমতার ঊর্ধ্বে নয়। তবে আমাদের দলটি নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া। দলে মাঝমাঠ থেকে আক্রমণভাবে খেলোয়াড় বৈচিত্র্য রয়েছে। আর্জেন্টিনার সাম্প্রতিক ম্যাচগুলো দেখে ছেলেদের আমার পছন্দ হয়েছে। যে কারণে এই ছেলেদের নিয়ে আমার এত উৎসাহ ও আশা। আপনার বিশ্বাস রাখা উচিত, এ দলটির অনেক কিছু দেওয়ার আছে।