
আসল আর্জেন্টিনাকে অবশেষে দেখা গেল। মেক্সিকোর বিপক্ষে ট্যাকটিক্যালি আর্জেন্টিনা অসাধারণ ছিল। কারণ তারা জানত, ম্যাচটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিশ্বকাপে টিকে থাকার জন্য। শেষ ষোলোতে উন্নীত হওয়ার রেসে থাকতে হলে মেক্সিকোকে হারাতেই হতো। যদিও ম্যাচের প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার খেলায় ছন্দ ছিল না। এর বড় কারণ হলো স্নায়ুর চাপ। আগের ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের ধাক্কা সামাল দিতে হবে বলেই শুরুর দিকে সতর্ক ছিলেন মেসিরা। দ্বিতীয়ার্ধে সম্পূর্ণ ভিন্ন চেহারায় দেখতে পেলাম আর্জেন্টিনাকে। এককথায় অলআউট গেম খেলার পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিল। কোচ স্কালোনি ফরমেশনেও পরিবর্তন এনেছিলেন। খেলায় ধার বাড়তেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পান খেলোয়াড়রা। মেসি তাঁর পায়ের জাদুতে গোল করে জয়ের পথ তৈরি করে দেন। আমি বলব, মেক্সিকোর বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে হাই-প্রেসিং ফুটবল খেলেছে আর্জেন্টিনা।
মেক্সিকানদের কাছে বল গেলেই কয়েকজন মিলে দৌড়ে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা ছিল সবার মধ্যে। আবার দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলেছেন। মোটকথা, জেতার জন্য সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। ফিনিশিংগুলোও ছিল দেখার মতো। বিশেষ করে এনজো ফার্নান্দেজের করা দ্বিতীয় গোলটি তো চোখ ধাঁধানো। সেই সময় মেক্সিকোর ডিফেন্ডার বেশি ছিল গোল পোস্টের সামনে। মেসি ড্রিবলিং না করে ফার্নান্দেজের উদ্দেশে বল বাড়িয়ে দেন। তিনিও দুর্দান্ত শটে সফল পরিণতি দেন। আর মেসির গোলটি তো আর্জেন্টিনার জন্য ছিল নতুন জীবনের মতোই। ওই গোলের পর আর্জেন্টিনার খেলার ধার আরও বেড়ে যায়। পুরোপুরি আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় দল। আসলে মেসির মতো খেলোয়াড় থাকা মানেই যে কোনো সময় ম্যাচের মোড় ঘুরে যেতে পারে। শনিবার তাই হয়েছে। আমার কাছে একটা জিনিস বেশি ভালো লেগেছে, প্রথম গোলের পর আর্জেন্টিনার মনোযোগ ছুটে যায়নি। মেক্সিকোর বিপক্ষে যে পারফরম্যান্স করেছে, তা ধরে রাখতে পারলে গ্রুপ পর্ব শুধু পার হওয়া নয়, আরও অনেক দূর যাবে আর্জেন্টিনা। আমি বিশ্বাস করি, আর্জেন্টিনার সুযোগ আছে এবং থাকবে। তাদের সেই সামর্থ্য আছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে যে ফুটবল খেলেছে, তা অব্যাহত রাখতে পারলে যে কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই জিততে পারবে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনা মেক্সিকোকে হারানোয় সমর্থকদের মাঝে প্রাণ ফিরে এসেছে। আজ ব্রাজিল সমর্থকদের দিন। প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে দু'বারের দেখায় কখনোই জিততে পারেনি ব্রাজিল। কাতারে এবার ইতিহাসটা বদলে যাবে বলে মনে করছি আমি। যদিও নেইমারকে ছাড়াই নামতে হচ্ছে তিতের দলকে। নেইমারের না থাকায় মনস্তাত্ত্বিকভাবে সুইজারল্যান্ড কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে। তবে সার্বিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ব্রাজিল যে ফুটবল খেলেছে; তাতে আমি মনে করি, নেইমারের অভাব খুব একটা অনুভূত হবে না। কারণ এই ব্রাজিলের রিজার্ভ বেঞ্চ অনেক শক্তিশালী। এ ছাড়া তিতের হাতে অনেক বিকল্প আছে। রদ্রিগো, ভিনিসিয়ুসের মতো ফুটবলার আছেন। রিচার্লিসন তো তাঁর প্রতিভা দেখিয়েছেন। নেইমার নেই বলে সুইজারল্যান্ড যে এগিয়ে, তা নয়। আমি মনে করি, আজকের ম্যাচে ফেভারিট ব্রাজিল।
মন্তব্য করুন