নেইমার তো একজনই; তাঁর স্থান কি অন্য কাউকে দিয়ে পূরণ করা সম্ভব? উত্তর না! বর্তমান ব্রাজিল দলে যে কজন ফরোয়ার্ড আছেন, তাঁদের কাউকেই নেইমারের সঙ্গে এক পাল্লায় মাপা যাবে না। কিন্তু আপাত কাজটা চালিয়ে নিতে হলে কাউকে না কাউকে তাঁর পথেই নামতে হবে, হাল ধরতে হবে; এতে নেইমারের মতো অবদান না রাখলেও হয়তো কোচ তিতে দুকথা শোনাবেন না। কারণ তিনিও জানেন ব্রাজিলের জন্য নেইমার কতটা গুরুত্বপূর্ণ। চোটে পড়ার পর হাড়ে হাড়ে তা টের পাচ্ছেন। আজ রাত ১০টায় সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। এর আগে নেইমারের পজিশনে কাকে খেলানো যায়, এ নিয়েও বোধহয় বহু অঙ্ক করে ফেলেছেন ব্রাজিল কোচ।

আসলে নেইমার মাঠে থাকা মানে প্রতিপক্ষের ঘুম হারাম। তিনি যে পজিশনে খেলেন অর্থাৎ সেকেন্ড স্ট্রাইকার বা ফলস নাইন- যেটাই বলি, সেই পজিশনটা একটা দলের আক্রমণভাগের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। চাইলেই যাঁর-তাঁর হাতে এই পজিশনের চাবিটা দিতে পারবেন না তিতে। কেননা মাঝমাঠ হয়ে সব আক্রমণের সমন্বয়টা নেইমারকেই করতে হয়। এর পর ডি বক্সের বাইর থেকে বল দুই উইংয়ে পাঠানো আবার ডি বক্স ভাঙা- এমন কঠিনকেই সহজ বানানোর কাজ করতেন নেইমার। যেখানে খেলতে ড্রিবলিংয়ের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তাও বেশ প্রয়োজন। এবার তিনি চোটে পড়ায় তিতেকে ভাবতে হচ্ছে বিকল্প।

ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যমের খবর, নেইমারের পজিশন ঠিক করার জন্য শুরুর একাদশে রদ্রিগো ও পাকেতাকে নিয়েই আসল পরিকল্পনাটা সাজাতে পারেন তিতে। সেই পরিকল্পনা দুভাবে হতে পারে। এক. পাকেতাকে একটু সামনে টেনে নেইমারের পজিশনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। আর পাকেতার জায়গায় ফ্রেডকে নামানো। দুই. রদ্রিগোকে সরাসরি নেইমারের পজিশনে নামিয়ে দেওয়া। তেমনটা হলে পাকেতাকে আর নড়ানোর প্রয়োজন হবে না। রোববার ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে নেইমার ও দানিলোর বদল নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তিতেকে। কিন্তু এটাকে টেকনিকের অংশ হিসেবে এড়িয়ে যান ব্রাজিলের কোচ, 'আসলে এটা দলের পরিকল্পনার অংশ। আমি এরই মধ্যে ঠিক করে ফেলেছি, কারা তাদের জায়গার জন্য উপযুক্ত। তবে এখানে বিষয়টি নিয়ে বলতে চাই না।'

তবে আক্রমণভাগের তারকাদের নিয়ে কিছুটা আভাস দিয়ে যান তিতে। যেখানে নেইমারের ইনজুরির আপডেট জানানোর পাশাপাশি তরুণ রদ্রিগোর সুনামও করেছেন তিনি, 'আমার বিশ্বকাস নেইমার ও দানিলো বিশ্বকাপে খেলবে। বাকি সব ঠিকঠাক আছে। রদ্রিগো দারুণ খেলছে। সে বেশ প্রতিভাবান। মনে হয় সে দৌড়ানোর সময় বলটা তার পায়ে আটকে যায়।'

এদিকে দানিলোর পরিবর্তে হয়তো মিলিতাও বা অভিজ্ঞ দানি আলভেজকে দেখা যেতে পারে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে। সর্বশেষ ঘানার বিপক্ষে মিলিতাওকে দেখা যায় সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলতে। এ ছাড়া আলভেজের বিস্তর অভিজ্ঞতা রয়েছে এই পজিশনে খেলার। তাঁদের কোনো একজনকে হয়তো শুরুর একাদশেই রাখবেন তিতে। এ নিয়ে ব্রাজিল কোচের খানিকটা আভাসও মিলেছে, 'মিলিতাওকে আমরা এরই মধ্যে ওই পজিশনে খেলিয়েছি। আমার খারাপ মনে হয়নি। দানিও ভালো করতে পারে। সে টেকনিক্যালি মন্দ না এবং নেতৃত্বের গুণটা রয়েছে। তবে কে খেলবে, আমি এখন বলতে চাই না।'

বিশ্বকাপ এলেই কী হয় নেইমারের? ২০১৪ বিশ্বকাপে তাঁর ছিটকে পড়া অনেকটা ভুগিয়েছিল ব্রাজিলকে। পরের ম্যাচে জার্মানির কাছে সাত গোল খেয়ে বিদায় নিতে হয় তাদের। এবার গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ খেলতেই দুঃসংবাদ। যদিও ব্রাজিলের কোচ বারবারই বলছেন নেইমারকে তাঁরা পাবেন বিশ্বকাপে। তবে গ্রুপ পর্বে নেইমার ছাড়া জেতাটা কি কঠিন হবে? জবাবে তিতে বললেন, 'ব্রাজিল দক্ষ সব খেলোয়াড়ের ওপরই নির্ভর করে। যেখানে নেইমার সবার চেয়ে আলাদা, সে অন্য মাপের খেলোয়াড়। তবু অন্যদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে।'