ব্রাজিলের খেলা দেখে মনে হয়েছে, ম্যাচটি কঠিন ছিল। তারা খুব সহজে গোল করতে পারছিল না। সুইজারল্যান্ড অনেক ভালো দল। সর্বশেষ ম্যাচগুলোতে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে। তারা অ্যানালাইস করেছে, কীভাবে ব্রাজিলের আক্রমণ প্রতিহত করা যায়। আমি মনে করি, ম্যাচের অধিকাংশ সময় সফলও হয়েছে। গোল করার জন্য ব্রাজিল অনেক চেষ্টা করেও ফল পাচ্ছিল না। একটা সময়ে মনে হচ্ছিল, ম্যাচটি ড্র হতে চলেছে। কারণ সুইজারল্যান্ড গোল করার মতো জায়গা দিচ্ছিল না ব্রাজিলকে।

ব্রাজিলের রক্ষণভাগ ভালো হলেও আক্রমণভাগ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই জায়গাতে ব্রাজিল ৬০ ও সুইজারল্যান্ড ৪০ ভাগ অবস্থায় ছিল। এই ম্যাচে নেইমারের অভাবটা ভালোভাবেই অনুভব করেছে ব্রাজিল। নেইমার আক্রমণ তৈরি করে দেন, অসাধারণ ড্রিবলিং করে প্রতিপক্ষকে বেকায়দায় ফেলেন। তাঁকে থামানোর জন্য প্রতিপক্ষের দুই থেকে তিনজন খেলোয়াড়কে ব্যস্ত থাকতে হয়। নেইমার না থাকায় সুইসদের সেটা করতে হয়নি। ফলে মিডফিল্ডার ও ডিফেন্ডাররা সমন্বিত পরিকল্পনায় ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডদের আটকে দিতে পেরেছেন। যে কারণে গোল বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। যদিও শেষ মুহূর্তে গিয়ে ক্যাসিমিরো বাজিমাত করেছেন।

নেইমারের অভিজ্ঞতা অনেক। তিনি না থাকায় মিডফিল্ডে ক্যাসিমিরো, ফ্রেড ও ভিনিসিয়ুসকে খেলান কোচ তিতে। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে কিছু পরিবর্তন করেছে তারা। নেইমার হলেন ব্রাজিলের মাঝমাঠ ও আক্রমণের প্রাণ। তাঁর অনুপস্থিতিতে কিছুটা খাপছাড়া লেগেছে ব্রাজিলকে। ক্যাসিমিরো যে গোলটি করেছেন, তা খুব কঠিন একটি গোল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সামনে কেউ নেই। যে কারণে কঠিন পজিশনে থেকেও রানিং বলে কিক নিয়ে গোল আদায় করেন। সুইস গোলরক্ষক বুঝে ওঠার আগেই বল জালে জড়ায়। আমার কাছে গোলটি ছিল ওয়ার্ল্ড ক্লাস। ক্যাসিমিরো একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তিনি যখন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলেছেন, তখনও শেষ মুহূর্তে অনেক গোল করেছেন। তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী ফুটবলার, অনেক অভিজ্ঞ। মাঝেমধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গোল করেন তিনি।

ব্রাজিল তো শেষ ষোলো নিশ্চিত করেই ফেলেছে। অপেক্ষায় আছে আর্জেন্টিনা। শেষ ষোলোতে যেতে হলে পোল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে জিততে হবে। আর পোল্যান্ড ড্র করলেই নকআউটে জায়গা করে নেবে। মেক্সিকোর বিপক্ষে সৌদি আরব জিতলে তারাও সরাসরি শেষ ষোলোতে চলে যাবে। এই গ্রুপ থেকে আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, পোল্যান্ড, মেক্সিকো- চার দলের জন্যই নকআউটের দরজা খোলা আছে। আমার মনে হচ্ছে, এই সমীকরণগুলো চাপ বাড়াচ্ছে আর্জেন্টিনার ওপর। সবাই জানে আর্জেন্টিনা দলটা হলো মেসির। এই দলের প্রাণ মেসি। আর্জেন্টিনার ফুটবল নির্ভর করে তাঁর ওপর। তিনি ভালো খেলে গোল পেলে এবং অ্যাসিস্ট করতে পারলে আর্জেন্টিনা জিতবে। তাই যা কিছু করার মেসিকেই করতে হবে। মেক্সিকোর বিপক্ষেও তো দেখেছেন মেসির কারণেই জিতেছে আর্জেন্টিনা। দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার কাছ থেকে বল পেয়েই মেসি গোল করেছেন। এই দু'জন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে আর্জেন্টিনার ভালো-খারাপ খেলা। আগে তো লো সেলসো ছিলেন, তিনি ইনজুরির কারণে ছিটকে যাওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে আর্জেন্টিনার।

সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে কোনো চাপ ছিল না আর্জেন্টিনার। তারা মনে করেছিল, সৌদি আরবের বিপক্ষে জিতে যাবে। কিন্তু তারা হেরেছে। এখন যে পরিস্থিতি আছে, জিততেই হবে। একজন ফুটবলার হিসেবে আমি জানি, চাপের সময় কী করতে হয়। ১০০ ভাগের বেশি দিতে হয়। এই ম্যাচে পোল্যান্ড দেবে ১০০ ভাগ; আর্জেন্টিনাকে দিতে হবে ১২০ ভাগ। তাহলে ওরা জিততে পারবে। কারণ, ফিজিক্যালি পোল্যান্ড অনেক শক্তিশালী দল। আজ একটি হাইভোল্টেজ ম্যাচ হতে যাচ্ছে। শুধু আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড নয়, আমার কাছে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচগুলো এখন 'ফাইনাল'। বিশেষ করে ছোট দলগুলো যেভাবে চমক দেখাচ্ছে, তা আরও দেখব বলে মনে করছি। র‌্যাঙ্কিং যে কোনো ফ্যাক্টর নয়, তা তো কাতার বিশ্বকাপেও দেখা গেছে। গ্রুপ পর্বের বাকি ম্যাচগুলোতে আরও চমক দেখা যাবে বলে মনে হচ্ছে।