
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ফেভারিট ব্রাজিল। যে দলটি আছে, তাদের সবাই বড় প্লেয়ার। তবে ক্রোয়েশিয়াকে বাতিলের খাতায় রাখা যাবে না। গত বিশ্বকাপ থেকে এখন পর্যন্ত টাইব্রেকারে তিনটি ম্যাচই জিতেছে তারা। অতিরিক্ত সময়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে বলে ক্রোয়েশিয়া এদিক থেকে কিছুটা এগিয়ে। এর বাইরে চিন্তা করলে আমি ব্রাজিলের জয়ের সম্ভাবনা বেশি দেখছি। নেইমার চোট কাটিয়ে ফিরেছেন। তিনি ফেরায় দলে যে পরিবর্তনের হাওয়া এসেছে, তা তো দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচেই দেখেছে সবাই। সমর্থকরা প্রত্যাশা করে, ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ব্রাজিল খুব সহজেই জিতে যাবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে উল্টো, জয়টা সহজ হবে না।
শারীরিক সক্ষমতার দিক থেকে ক্রোয়েশিয়াকে শক্তিশালী মনে হচ্ছে আমার। ইউরোপের দলগুলো বরাবরই শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং গতিতে এগিয়ে। কিন্তু টেকনিক্যালি ব্রাজিল অনেক এগিয়ে। সামনে যাঁরা খেলেন, তাঁরা গতিতে ভালো। বয়সের দিক দেখলে ক্রোয়েশিয়ার বেশিরভাগ খেলোয়াড় ত্রিশোর্ধ্ব। তবে তাঁরা বেশ অভিজ্ঞ। আর ব্রাজিল তো ২০ বছর ধরে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে পারেনি। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে জার্মানির কাছে সেমিফাইনালে হেরেছিল। এবার সেই জার্মান নেই, স্পেন নেই। আমি মনে করি, ব্রাজিলের একটা ভালো সুযোগ আছে দুই দশক পর বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার।
শিরোপা মঞ্চে দলকে নিয়ে যেতে শুধু আক্রমণভাগের তারকারাই নন, ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন গোলরক্ষকরাও। এই বিশ্বকাপে বেশ কয়েকটি ম্যাচে গোলরক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাপানের বিপক্ষে টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক তিনটি শট ঠেকিয়েছেন। মরক্কো-স্পেন ম্যাচেও ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচেও বড় ব্যবধান গড়ে দিতে তৈরি ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ। ব্রাজিলেরও আছে অ্যালিসন বেকার। ম্যাচ যদি টাইব্রেকারে গড়ায়, সেখানে এ দুই গোলরক্ষকই পার্থক্য গড়ে দেবেন বলে মনে করি আমি। একই রকম মনে হচ্ছে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচেও। কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমানুয়েল মার্টিনেজ অবিশ্বাস্য পারফর্ম করেছেন। নেদারল্যান্ডসের গোলরক্ষক আন্দ্রেস নোভার্টও এবারের বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে আছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে, শুক্রবার ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া, আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন চার গোলরক্ষক। এবারের মতো আগের বিশ্বকাপে এত হাইপ্রোফাইল গোলরক্ষক আমরা দেখিনি।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর্জেন্টিনাই ফেভারিট। তবে ম্যাচ যদি টাইব্রেকারে যায়, তখন দুই গোলরক্ষকই হতে পারেন কোয়ার্টার ফাইনালের হিরো। আর আর্জেন্টিনার জন্য বড় দুশ্চিন্তা ডাচদের ডাগআউটে আছেন অভিজ্ঞ লুই ফন গাল। ২০১৪ বিশ্বকাপে তিনি লিওনেল মেসিকে আটকে দেওয়ার কৌশল কাজে লাগাতে পেরেছিলেন। যদিও টাইব্রেকারে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। তবে ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে ফন গালের কৌশল টেক্কা দিতে পারেননি মেসিরা। আর আট বছর আগে হারটা অবশ্যই মনে আছে ফন গালের। তিনি জানেন কীভাবে মেসিকে থামাতে হবে।
বিশ্বকাপের আগ থেকে সবার চোখ ছিল মেসির দিকে। এখনও সবার চোখ মেসির দিকে। যখন প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা, সেই সময় মেসি সবাইকে বলেছিলেন, 'তোমরা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখো, আমরা ঘুরে দাঁড়াব।' ঠিকই আর্জেন্টিনা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি ম্যাচেই মেসি গোল করেছেন, নয়তো অ্যাসিস্ট করেছেন। দারুণ ফর্মে আছেন মেসি। তিনি না থাকলে আর্জেন্টিনা দুর্বল হয়ে যাবে। ফন গাল যদি আজ মেসিকে আটকাতে পারেন, আমি মনে করি, আর্জেন্টিনার জন্য গোল বের করা কঠিন হয়ে যাবে।
বিশ্বকাপের আগে আমি চাচ্ছিলাম ফাইনালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা খেলবে। যদি দু'দলই কোয়ার্টার ফাইনালে জিততে পারে, তাহলে লাতিন আমেরিকার ক্ল্যাসিকো হবে সেমিফাইনালে। ওই ম্যাচ তো বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ম্যাচ হবে। কারণ, দুই দলে আছেন দুই তারকা। যাঁরা কিনা প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের দলে একসঙ্গে খেলেন। নেইমার ও মেসির লড়াই নিয়ে পুরো ফুটবলবিশ্ব দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে যাবে। বাংলাদেশে দুই দলের সমর্থক আছেন। দারুণ একটা গল্প হবে সেই ম্যাচ নিয়ে। আমি মনে করি, কোয়ার্টার ফাইনালে দু'দলের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে উন্নীত হবে।
মন্তব্য করুন