- খেলা
- বটবৃক্ষ নেইমার
বটবৃক্ষ নেইমার
-samakal-6392a8ef23d07.jpg)
নেইমার জুনিয়র
মেঘে মেঘে বেলা অনেক গড়িয়েছে। সব সময় ঠাট্টা-তামাশায় মেতে থাকা নেইমারের বয়সও ৩০ হয়ে গেছে। এটা তাঁর তৃতীয় বিশ্বকাপ। কাতারেও ব্রাজিলের প্রাণভোমরা তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে তিনি ফেরার পর ব্রাজিলের খেলাটাই বদলে গেছে। সবুজ গালিচায় তাঁর নেতৃত্বে যেন হলুদ প্রজাপতিরা নৃত্য করছিল। তবে এবার নেইমার কেবল মাঠের মধ্যমণিই নন, মাঠের বাইরেও দলের তরুণদের আশ্রয়স্থল। আনন্দ-উল্লাস তো বটেই, কঠিন সময়ে দলের প্রত্যেক সদস্যের পাশে দাঁড়ানো, পরামর্শ-অনুপ্রেরণা দিয়ে চাঙ্গা করার কাজটাও আন্তরিকতার সঙ্গে করছেন তিনি।
ব্রাজিলের ২৬ জনের স্কোয়াডের ১৬ জনই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছেন। এই তরুণদের বেশিরভাগই আক্রমণভাগের, অর্থাৎ নেইমারের বিভাগের। তাই তাঁদের নেতৃত্বে যে নেইমার রয়েছেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বলে নেইমার নিজেকে আক্রমণভাগেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। প্রত্যেক তরুণ সদস্যকে দলে অভ্যর্থনা জানানো থেকে শুরু করে, তাঁদের সুযোগ-সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্যের দিকটা নাকি নেইমার নিজে দেখছেন বলে জানিয়েছে ব্রাজিলের জনপ্রিয় গণমাধ্যম 'গ্লোবো'।
নেইমার তাঁর সতীর্থদের বলে দিয়েছেন, যে কোনো প্রয়োজনে কেউ যেন তাঁর কাছে আসতে দ্বিধা না করেন। সবার জন্য তাঁর দরজা খোলা। ব্রাজিল জাতীয় দলে তিনি সবার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে চান। নেইমার যখন জাতীয় দলে আসেন, তখন নাকি এমন একটি আশ্রয়ের অভাবে ভুগেছিলেন তিনি। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি জুনিয়রদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে দিতে চান না। ২০১০ বিশ্বকাপের ব্যর্থ মিশনের পর নেইমার যখন জাতীয় দলে প্রথম ডাক পান, ব্রাজিল দলে তখন অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। রোনালদো, রবার্তো কার্লোসের মতো তারকারা অবসরে চলে গেছেন। রোনালদিনহো, আদ্রিয়ানোদের পারফরম্যান্সেও ভাটার টান লেগে গেছে। তাই জাতীয় দলে এসেই দায়িত্বের বোঝা চেপে গিয়েছিল নেইমারের ছোট্ট কাঁধে। ২০১৪ সালে নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপে ২২ বছরের নেইমারের কাঁধে সওয়ার হয়েছিল ফুটবলের দেশ ব্রাজিল। এসব মাথায় রেখেই দলের তরুণদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে চাইছেন নেইমার। তাঁর এই আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠাটা বোঝা যায় ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের পর। সার্বিয়ার বিপক্ষে পা মচকানোর পর সেদিনই প্রথম মাঠে গিয়েছিলেন তিনি। খেলা শেষে গ্যালারি থেকে মাঠে গিয়ে আক্রমণভাগের সবচেয়ে তরুণ রদ্রিগোকে জড়িয়ে ধরেন, চোট পাওয়া গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে সান্ত্বনা দেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে গোল পাচ্ছিলেন না বলে বেশ হতাশ ছিলেন রাফিনহা। বিরতি শেষে লকার রুম থেকে বের হওয়ার সময় রাফিনহাকে অনুপ্রাণিত করার দৃশ্যও সবার নজর কেড়েছে।
তিতে নেইমারকে বলছেন তাঁর দলের টেকনিক্যাল নেতা। মাঠে ব্রাজিলের আক্রমণ গড়া ও গোল করার দায়িত্বের সঙ্গে এটা বাড়তি সংযোজন। ২০১৮ বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন অধিনায়ক। তবে রাশিয়ায় তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে কিছুটা সমালোচনা হয়েছিল। সে কারণেই ২০১৯-এর মাঝামাঝি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন তিনি। এবার অধিনায়কের আর্মব্যান্ড থিয়াগো সিলভার হাতে। তবে ব্রাজিল দলের দিকে তাকালেই বোঝা যায় আসল নেতা কে! নেইমার নিজের মতো করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে তিনি যে কেবল তরুণদের আত্মবিশ্বাস বা অনুপ্রেরণা দিয়েই নজির রাখছেন তা কিন্তু নয়, চোটের সময়ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ফিট হয়ে ওঠার জন্য চোট পাওয়া গোড়ালিতে দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা ফিজিওথেরাপি দিয়েছেন। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, হলুদ জার্সিতে মাঠে নামতে কতটা মরিয়া তিনি।
নেইমার এভাবে সবাইকে আগলে রাখছেন বলেই ক্যামেরুনের কাছে হারের পরও দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্রাজিল। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে যে সুখী ব্রাজিলকে দেখা গেছে, এটা তারই ফল। এটা পূর্ণতা পাবে, যদি ব্রাজিল হেক্সা জিততে পারে। সে পথে আজ কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে তারা। গত চার বিশ্বকাপে ইউরোপিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে নকআউটে হোঁচট খাচ্ছে ব্রাজিল। এবার কি তারা পারবে সে জুজু থেকে বের হতে?
মন্তব্য করুন