- খেলা
- সব চোখ মেসিতে
সব চোখ মেসিতে

কোয়ার্টারে নামার আগে অনুশীলনে মেসি
তুলনা আর তর্কের জায়গাটি থেকে কিছুটা বোধ হয় নড়ে গেছে। রোনালদোর সঙ্গে তাঁর অদৃশ্য লড়াই, যা কিনা ফুটবলের একটা প্রজন্ম উপমা আর বিশ্নেষণে দিনের পর দিন অক্সিজেন খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন, রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা রোনালদোর অসহায়ত্বটা। জানি জানা যাবে না কখনও, তার পরও কৌতূহল- আচ্ছা সেদিন রোনালদোর ওই মুখখানি স্পর্শ করেছিল লিওনেল মেসির? স্বদেশি সাংবাদিক, যদি কিছু জানেন- সে কারণেই এগিয়ে যাওয়া বুয়েন্সআয়ার্স থেকে আসা মিডিয়া সেন্টারের আর্জেন্টাইন সাংবাদিকদের কাছে। তিনিও কিছু জানেন না, তবে রোনালদো সম্পর্কে মেসির একটি উপলব্ধির কথা তিনি গল্পের মতোই বলে গেলেন। 'লিও কখনোই ক্রিশ্চিয়ানোকে অসম্মান করেননি। বন্ধুত্ব না থাকুক, শত্রুতা কখনোই ছিল না তাঁদের। মেসির মানবিকতা জানি বলেই বলতে পারি- ক্রিশ্চিয়ানোকে এভাবে কখনোই দেখতে চাইবেন না লিও। কষ্ট নিশ্চয় পেয়েছেন তিনি।' বিশ্বকাপে এসে নিষ্ঠুর বাস্তবতাটা বুঝে নিয়েছেন রোনালদো- তাঁকে ছাড়াও দল পথ চলতে পারে, তাঁকে ছাড়াও এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু মেসিকে ছাড়া আর্জেন্টিনা? সেই বাস্তবতার ধারেকাছেও নেই আর্জেন্টিনা।
যে মেসি এখনও পথ দেখান আর্জেন্টিনাকে, সেই মেসিকেই যে গভীর রাতেও খুঁজে বেড়ায় ফুটবল পৃথিবী। মেসিম্যানিয়া, মেসিম্যাজিক- যাই বলা হোক না কেন, বিশ্বকাপ এখনও তাঁকে চায়। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে নকআউটের ম্যাচ, হতে পারে অনেক কিছুই। তার পরও মেসির এই পথ আজই যেন শেষ না হয়- এই আকুলতা আর্জেন্টাইন সমর্থকদের যেমন আছে, তেমনি ব্রাজিলিয়ানদেরও আছে! হ্যাঁ, ব্রাজিলিয়ানদেরও। দোহায় এসে দেখা, ব্রাজিল থেকে আসা সমর্থকরা মুখে- 'মেসি চাউ ... মেসি চাউ ... (বাংলায় মেসি বিদায় হও)' সুর ধরলেও পরে বলছেন- 'মেসি কোথায় যাবে, মেসি এখানেই, বিশ্বকাপেই থাকবে। তাঁর সঙ্গে দেখা হবে তো সেমিফাইনালে।' ন্যাশনাল মিউজিয়াম মেট্রোর সামনে এভাবেই নিজের লাতিন সত্তার পরিচয় দিচ্ছিলেন বছর তেইশের আন্দ্রো আমানসিও। আসলে লাতিনদের মধ্যে একটা পারস্পরিক শ্রদ্বাবোধ আর ভালোবাসা রয়েছে, যা কিনা ম্যাচের দিন ক্যামেরার সামনে কোনোভাবেই উপস্থাপন করা যাবে না। তাঁরা বিশ্বকাপে নিজেদের মূল প্রতিপক্ষই ভাবে ইউরোপিয়ানদের। যখন জার্মানি বা স্পেন বিদায় নিয়েছে, তখনও দোহায় ব্রাজিলিয়ান আর আর্জেন্টাইনদের একসঙ্গে রেস্টুরেন্টের টেবিলে দেখেছি। তাঁদের কাছে নেইমার ঘরের ছেলে হলেও মেসি একেবারে ফেলে দেওয়ার নই! যার উদাহরণ খানিকটা প্যারিস সেন্ট জার্মেই ক্লাবেও দেখা যায়।
সেখানে নেইমারের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুই হলেন মেসি, বার্সাতেও দেখা- উরুগুয়ের সুয়ারেজের সঙ্গে মেসির সম্পর্কটা ঠিক কেমন ছিল? তবে আন্দ্রোর মতো ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা এতটা উদার হয়েও যাননি, নিজের নাক কেটে অন্যকে পথ দেখিয়ে দেবেন। আগে ব্রাজিলের ম্যাচ, সেখানে নেইমারদের জিততে হবে- তার পরই মেসির জন্য শুভেচ্ছা থাকতে পারে। তার আগে কখনোই নয়। বিশ্বকাপের আরও খানিকটা পথ মেসি থাকুক- এই চাওয়া এখানকার কাতারিদের মধ্যেও প্রবলভাবে লক্ষণীয়। মেসির ১০ নম্বর জার্সি হামেশাই চোখে পড়বে এই শহরে। তাঁরা প্রত্যেকেই চান, বিশ্বকাপের পোস্টারবয় মেসির মতোই নেইমার, এমবাপ্পে আর রোনালদো বিশ্বকাপের এই আনন্দ আয়োজনে থাকুক আরও কিছুদিন। শুরুর অঘটনে তাই যাঁরা আনন্দ পেয়েছিলেন, নকআউটে সে রকম কিছু কাউকেই বোধ হয় খুশি করবে না।
এমএল টেনের এই পথ যেন শেষ না হয়, সে জন্যই তাঁকে ও তাঁর দলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আগুয়েরো ডেকেছিলেন মেসিদের। সেখানে অনেক হাসি-ঠাট্টার মধ্যেও মেসিকে বলতে শোনা যায়- তুমি কি ওষুধ খাচ্ছো ঠিকঠাক মতো? ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখাচ্ছো নিয়ম করে? উত্তর দিতে গিয়ে আবেগি আগুয়েরো চোখ মুছেছিলেন। ১৬ বছর আগে তাঁরা দুই বন্ধু বিশ্বকাপের পথ চলা শুরু করেছিলেন, হার্ট অ্যাটাকের কারণে আগুয়েরো এখন শুধুই দর্শক। 'ভীষণভাবে চাই তুমি বিশ্বকাপ জিত। তোমার পথচলা পূর্ণ হোক।' বন্ধুর প্রতি সার্জিও আগুয়েরো।
মন্তব্য করুন