যদিও লড়াইটা আর্জেন্টিনা আর নেদারল্যান্ডসের। তবে এর মাঝে থাকে মাঠের বাইরের লড়াইও। আজ কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচেও এমন একজোড়া দ্বৈরথে চোখ থাকবে সবার। মাঠে মুখোমুখি লিওনেল মেসি ও ভার্জিল ফন ডাইক। ডাগআউটে মস্তিষ্কের লড়াইটা হবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে তরুণ কোচ লিওনেল স্কালোনির সঙ্গে সবচেয়ে বয়সী কোচ লুইস ফন গালের।

৭১ বছর বয়সী ডাচ কোচ গালকে গুরু মানেন ৪৪ বছর বয়সী স্কালোনি। দুই যুগ আগে গাল যখন বার্সেলোনার কোচ ছিলেন, স্কালোনি তখন আরেক স্প্যানিশ ক্লাব দেপোর্তিভো লা করুনায় খেলতেন। ২০০০ সালে গালের বার্সেলোনাকে পেছনে ফেলে লা লিগা জেতা দেপোর্তিভো দলের অংশ ছিলেন মেসিদের বর্তমান কোচ স্কালোনি। এবার ডাগআউটের লড়াইয়েও জিততে চান তিনি।

এবার দেখে নেওয়া যাক এই দুই ফেভারিট দলের কোচদের বিশ্বকাপ স্ট্র্যাটেজি ও ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা।

লুইস ফন গাল - ক্রোয়েশিয়ার কোচ

বিশ্বকাপে স্ট্র্যাটেজি

খুবই অভিজ্ঞ একজন কোচ। খেলোয়াড়ি জীবনে নিজেও ছিলেন মিডফিল্ডার। কোচ হিসেবে মিডফিল্ডে একটু ভিন্নতা আনতে চান সব সময়। এবারের বিশ্বকাপেও এখন পর্যন্ত তেমনটা দেখা দেখে। তিনজন ডিফেন্স লাইনে রেখে কখনও মাঝমাঠে চারজনকে নামিয়ে দেন। অর্থাৎ ফর্মেশনটা তার ৩-৪-১-২ এমন হয়। যেখানে প্রতিপক্ষের আক্রমণ নস্যাৎ করার কাজটা করেন মাঝমাঠের সেনানীরা। তাদের সঙ্গে আক্রমণ ঠেকাতে যোগ দেন ডিফেন্ডাররাও। হুট করে আক্রমণে ওঠা আবার মাঝেমধ্যে লং বল দিয়ে ফরোয়ার্ডদের রিলিজ করা, এভাবেই কৌশল সাজান ফন গাল। আবার থ্রু পাসের পাশাপাশি দুই উইং থেকে ক্রমাগত ক্রস বাড়ানোও তার আরেকটা কৌশল।

ম্যাচ রিডিং

একটু ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে ফর্মেশনটা সাজানোয় মাঝেমধ্যে খেলোয়াড়রা নিজেরাও জটলা পাকান। একজন অন্যজনের পজিশনে চলে যান। এটা হতে পারে ফন গালেরই কোনো পরিকল্পনা। তবে ডাগআউট থেকে দ্রুততম সময়ে ম্যাচের রিডিং ধরে নতুন পরিকল্পনা করার দারুণ ক্ষমতা রয়েছে তার। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ দলের তারকা খেলোয়াড়কে মার্কিং করার জন্য ভিন্ন দু-তিনজনকে রাখেন সব সময়। আর প্রয়োজন হলেই নতুন কাউকে নামিয়ে ম্যাচের দিকটাই পাল্টে দেন। যখন একাধিক গোল করে ফেলে দল, তখন আক্রমণভাগকে স্লো করে রক্ষণে শক্তি বাড়ান। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে যেমনটা করতে দেখা যায় তাকে।

লিওনেল স্কালোনি- আর্জেন্টিনার কোচ

বিশ্বকাপে স্ট্র্যাটেজি

একাদশ বেশ ব্যালেন্স রাখতে পছন্দ করেন। ডিফেন্স মাঝেমধ্যে হাইলাইন করে ফেলেন। আবার মাঝেমধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সাজান। প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ড বা তারকাকে আটকাতে দু'জনকে মার্কিং করার দায়িত্ব দেন। এই যেমন পোল্যান্ডের বিপক্ষে দলটির তারকা স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডস্কিকে পুরোপুরি বোতলবন্দি করেছেন রোমেরো ও ডি পলকে দিয়ে। মাঝমাঠ থেকে মূল আক্রমণটা শানাতে চান। সেজন্য ফর্মেশনে ৪-৩-৩ আবার ৪-৩-২-১ বেছে নেন স্কালোনি।

ম্যাচ রিডিং

তার অধীনে আর্জেন্টিনা টানা ৩৬ ম্যাচে অজেয় ছিল। খেলোয়াড় হিসেবে তেমন ভালো না হলেও কোচ হিসেবে অল্পদিনেই সুনাম কুড়িয়েছেন। তবে মাঝেমধ্যে ম্যাচ রিডিংয়ে গোলমাল পাকান। এই যেমন সৌদি আরবের বিপক্ষে বেশ কয়েকটি ভুল ছিল তার। যদিও পরে শুধরে নিয়ে দারুণভাবে টুর্নামেন্টে ফিরেছেন। মেক্সিকোর মতো কাউন্টারনির্ভর দলের সঙ্গে দু'জন সেন্টারব্যাক নামিয়ে রক্ষণে পুরোপুরি দেয়াল টেনে দেন। এর পর মাঝমাঠে এনজোকে আবিস্কার করেন নতুনভাবে। আক্রমণভাগেও দেখিয়েছেন ক্যারিশমা। লাওতারোর জায়গায় আলভারেজকে নামিয়ে পোল্যান্ডের বিপক্ষেও সফলতা পান।