
চার বছর আগে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সময়ে আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন লিওনেল স্কালোনি। ২০১৮ বিশ্বকাপের পর আপৎকালীন দায়িত্ব পাওয়া লোকটিই আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষা গোছানোর সারথি হয়ে উঠেছেন। তাঁর শীতল মস্তিস্ক থেকে বেরোনো ছকেই একের পর এক প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে চলেছেন মেসি-আলভারেজরা। দল ফাইনালে ওঠার পরই চারদিকে আনন্দ-উল্লাস শুরু হয়ে গেছে। পৃথিবীর কোনা কোনা থেকে ভেসে আসছে শুভেচ্ছাবার্তা-শুভকামনা। তবে এমন সময়েও নিজের দায়িত্ব ভুলছেন না কোচ স্কালোনি। রোববারের ফাইনালে পুরো মনোযোগ দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে মেসি দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর জোড়া গোল করেন হুলিয়ান আলভারেজ। এত বড় ব্যবধানে সেমি জিতলেও প্রতিপক্ষকে সম্মান দিতে ভোলেননি স্কালোনি। জয়ের পর তিনি বলেন, 'আসলে স্কোরলাইনে ম্যাচের সত্যিকার চিত্রটা ফুটে ওঠেনি। জয়টা আমাদের প্রাপ্য, তবে এত বড় ব্যবধানে নয়।' স্কালোনি এ ম্যাচে ভিন্ন কৌশলে দলকে খেলান। তিনি ক্রোয়েশিয়াকে বলের দখল ছেড়ে দিয়ে কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলা শুরু করান। সেটাই ছিল তাঁর 'মাস্টার স্ট্রোক'। সুযোগ পেয়ে ক্রোয়েশিয়া আক্রমণ শানাতে থাকে। তিনিও এটাই চাচ্ছিলেন। অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে তারা ওপরে উঠে এলে ক্ষুরধার কাউন্টার অ্যাটাকে প্রথমার্ধেই দুই গোল করে ম্যাচ নিষ্পত্তি করে ফেলে আলবেসেলেস্তেরা। ক্রোয়েশিয়ার তিন তারকা মিডফিল্ডারের জন্যই নাকি এমন কৌশল নিয়েছিলেন স্কালোনি, 'শুরুতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল। তবে আমরা জানতাম যে এমনটা হতে পারে। কারণ, তাদের তিনজন দুর্দান্ত মিডফিল্ডার রয়েছে, যারা কিনা বেশ লম্বা সময় ধরে একসঙ্গে খেলছে। তাই আমরা বুঝে গিয়েছিলাম, ম্যাচে কীভাবে এগোতে হবে। তবে পেনাল্টি পাওয়ার পরই ম্যাচটি আমাদের হাতে চলে আসে।'
আট বছরের ব্যবধানে আরও ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পর আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা সমর্থকদের সঙ্গে ভালোই আনন্দ করেছেন। তবে স্কালোনি এখনই এত উদযাপনে রাজি নন, 'আমরা উদযাপন করেছি, কারণ ফাইনালে যাওয়া ভীষণ রোমাঞ্চকর একটি ব্যাপার। এখনও কিন্তু এক ধাপ বাকি রয়েছে। তাই ফাইনালে ওঠার আনন্দ উপভোগ নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। আমাদের এখন পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবতে হবে।' ৪৪ বছর বয়েসেই কী পরিণতি বোধ!
১৮ মাস আগে তাঁর অধীনেই কোপা আমেরিকা জিতে ২৮ বছরের শিরোপা-খরা ঘুচিয়েছিল আর্জেন্টিনা। এবার হয়তো তাঁর হাত ধরেই ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ-খরাও ঘুচতে যাচ্ছে। অথচ চার বছরে আগে তাঁকে আপৎকালীন কোচ করার সময় আর্জেন্টাইনরা কি এতটা আশা করেছিল? মোটেই না। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর কোচ হোর্হে সাম্পাওলিও বিদায় নেন। সাম্পাওলির সহকারী স্কালোনিকে কাজ চালিয়ে নিতে বলা হয়। তাঁর তখন মাত্র ৪০ বছর বয়স। অখ্যাত ও অনভিজ্ঞ একজনের হাতে জাতীয় দল তুলে দেওয়ায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশন। এতে কিছুটা প্রভাবিত হন মেসিও। তাঁর চেয়ে মাত্র ৯ বছরের বড় কোচের সঙ্গে শুরুতে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন তিনি। স্কালোনি দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় আট মাস পর জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি। গত বছর কোপা আমেরিকার সময় দু'জনের মধ্যে দূরত্ব কমে যায়। এখন তো দুই 'লিও'তে উড়ছে আর্জেন্টিনা।
মন্তব্য করুন