- খেলা
- 'লিও কাপ নিয়ে যাবে রিও'
'লিও কাপ নিয়ে যাবে রিও'

কে যে তাঁদের গান বেঁধে দেন, কে-ই বা সুর তোলেন- জানতে চাইলে তাঁরা নিজেরাও উত্তর খোঁজেন! অথচ কী মন্ত্রমুগ্ধের মতো গেয়ে যান সবাই একসঙ্গে। মুখে মুখে গান রচনার আর্জেন্টাইন গ্যালারির এই সংস্কৃতি তাঁদের দলের লকাররুমেও বেশ জনপ্রিয়। তা সেদিন ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার পর উল্লাসের বাঁধ ভাঙে আর্জেন্টিনার লকাররুমে। সেখানেও চলে গ্যালারির ওই চেনা সুরের সঙ্গে নিজেদের রচিত গান, যে ভিডিও ভাইরাল হতেই ক্ষুব্ধ ব্রাজিলিয়ানরা। 'ব্রাজিলিয়ান কী হলো তোমাদের, লিও এবার রিও যাবে কাপ নিয়ে...।'- তা এই ছিল আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের উৎসবের গান। ওতামেন্ডির ইনস্টাগ্রামে সেটি পোস্ট করতেই কাটা ঘায়ে যেন নুনের ছিটা পড়ে- গতকাল মিডিয়া সেন্টারের ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকদের থমথমে মুখের কাছে গিয়ে কেউ হ্যালো পর্যন্ত বলতে সাহস পাননি। ও গ্লোবো টিভির সাংবাদিকদের কেউ কেউ এমন মনে করছেন, মেসিদের ওই বাড়াবাড়ি সেলিব্রেশন এক ধরনের বর্ণবিদ্বেষের সমান! এভাবে তাঁরা কাউকে হেয় করতে পারেন না।
উল্টোদিকে আর্জেন্টাইন মিডিয়ায় কিন্তু ভিডিওটি বেশ চলছে।
যদিও তাঁরা কাল ব্যস্ত ছিলেন অবসর নিয়ে মেসির পরিস্কার ভাবনা সামনে আনায়। কিন্তু আগের দিন অমন একটি ম্যাচ খেলার পর গতকাল সবাইকে ছুটি দিয়েছিলেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। তাই আর মিডিয়ার কেউ কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্জেন্টাইন ক্যাম্পের দিকে যাননি। তবে একটি ব্যাপার মেসি আগেও বলেছিলেন সেদিন ম্যাচের পর স্বদেশি সংবাদমাধ্যম 'ওলে'কে- রোববারের ফাইনালই তাঁর জন্য বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ। জানতে চাওয়া হয়েছিল যদি ট্রফি না জেতা হয় তাহলে কি পরের বিশ্বকাপেও দেখা যাবে মেসিকে? উত্তরে নিজের সিদ্ধান্তেই অটল মেসি। 'পরের বিশ্বকাপ অনেক বছর দেরি। আমি মনে করি না ঈশ্বর আমাকে সেই সুযোগ দেবেন। তার চেয়ে এভাবেই শেষ করা ভালো।' সবাই চাইছে মেসির জন্য হলেও আর্জেন্টিনা এবার বিশ্বকাপ জিতুক। মেসি কিন্তু সেভাবে দেখছেন না ব্যাপারটি। 'দলগতভাবে যে কোনো অর্জনই আমার কাছে সেরা প্রাপ্তি। সেখান থেকে আর একটি ধাপ দূরে আমরা। সময়ের সুন্দর অর্জন হবে বিশ্বকাপ জেতা।'
২০১৪ সালে ট্রফির পাশ থেকে হেঁটে যেতে হয়েছিল শুকনো মুখে। রোববারের ফাইনালেও তেমন কিছু হলে তবে কি পরের বিশ্বকাপের কথাও আরেকবার ভেবে দেখবেন? 'আমরা বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি রোববারের ফাইনালেই। সেখানে যাই হোক না কেন। এবারের বিশ্বকাপে যেটুকু অর্জন করেছি, আর্জেন্টাইনদের যেটুকু আনন্দ দিতে পেরেছি তাতেই আমি খুশি।' রোববারই যে মেসির বিশ্বকাপ যাত্রার শেষ ম্যাচ সেটা নিশ্চিত। তবে এরপরও তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলবেন কিনা তা কিন্তু পরিস্কার নয়। যদিও কাতারে আসা আর্জেন্টাইন সাংবাদিকদের গরিষ্ঠ একটি মহলের দাবি, মেসি ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকা পর্যন্ত দেশের হয়ে খেলবেন। মেসির তখন ৩৭ হবে। এরই মধ্যে নেইমার পরের বিশ্বকাপ এবং রোনালদো ২০২৪ ইউরো কাপ পর্যন্ত খেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তবে রোববার লুসাইলের ফাইনাল মঞ্চেই বিশ্বকাপের তৃতীয় ট্রফিটি চাই আর্জেন্টিনার। শেষবার ছিয়াশিতে ম্যারাডোনার হাতে উঠেছিল বিশ্বকাপ। তার আগে আটাত্তরে মারিও ক্যাম্পেসের হাত ধরে অর্জন তাদের প্রথম শিরোপা।
এরপর ১৯৯০, ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেও হৃদয় ভেঙেছে আর্জেন্টাইনদের। এবার আর কান্না দেখতে চাইছে না কেউ। আবেগকে বাইরে রেখে এই আর্জেন্টিনা অনেকটাই পেশাদার। মাঠে প্রতিপক্ষ বুঝে কৌশল সাজান তাঁদের কোচ। নির্দিষ্ট কোনো ঘরানার ফুটবলে আর নিজেদের বন্দি রাখেননি মেসিরাও। 'বিশ্বকাপ বড় মঞ্চ। তাছাড়া এবারের আসরের কন্ডিশন আর সূচিতেও বেশ কিছু নিজস্বতা রয়েছে। আপনারা দেখেছেন আমরা সৌদি আরবের কাছেও হেরে গেছি। সে কারণে প্রতিপক্ষ ধরে ধরে ম্যাচ পরিকল্পনা করছি। তাতে কখনও সফল হচ্ছি, কখনও ব্যর্থ। তবে এটুকু জোর দিয়েই বলতে পারি, বিশ্বকাপ জিততে হলে আপনার হাতে বিশ্বমানের খেলোয়াড় থাকতেই হবে। যেটা আর্জেন্টিনার আছে।' সেদিন ম্যাচের পর সাংবাদিকদের সামনে আসা আর্জেন্টাইন কোচের চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসের ঝলক ছিল। এবারের আর্জেন্টিনা আবেগের বাইরেও যেন কঠিন বাস্তবতা স্বীকার করেই এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে নিজেদের অপ্রকাশিত আত্মতৃৃপ্তি যেমন আছে, তেমনি আবার অযথা ব্রাজিলকে টেনে আনার প্রকাশিত আত্মগরিমাও আছে!
মন্তব্য করুন