দ্য গ্র্যান্ড ফিনালে! কোটি কোটি মানুষ এখন সেই ম্যাচটি দেখার অপেক্ষায়। একদিকে আর্জেন্টিনা, আরেক দিকে ফ্রান্স। দুই দলের ফ্রন্টলাইনও হেভিওয়েট। ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে, অলিভার জিরুদ, উসমান দেম্বেলে- এই তিনজনকে ঘিরে আক্রমণভাগ। অন্যদিকে, আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, হুলিয়ান আলভারেজের সঙ্গে হয়তো ডি মারিয়াকেও ফাইনালে দেখা যাবে আক্রমণে। তাতে দুই দলের লড়াইটা জমবে আক্রমণভাগেই। যেখানে ফ্রান্সেরও কিছু খুঁত রয়েছে। আবার আর্জেন্টিনারও। তবে ফ্রান্স থেকে কিছুটা এগিয়ে আকাশি-সাদারা।

ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের আগ পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটা ধরন নিয়ে মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। যদিও আকাশি-সাদাদের কোচ ম্যাচ বাই ম্যাচ ফরমেশন বদলেছেন, তাতে খেলার ধরনে খুব একটা হেরফের দেখা যায়নি। কিন্তু জল্গাতকো দালিচের মুখোমুখি হয়েই নতুন কৌশলে হাঁটে আর্জেন্টিনা। পুরোপুরি কাউন্টার অ্যাটাককে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের জন্য লুফে নেয়। যে কাজটা স্কালোনির ডাচদের সঙ্গে করেননি। সে সময় ডিফেন্সকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যে কারণে দেখা যায় দেপাই, গাকফোদের পায়ে বল গেলেই সেন্টারব্যাক থেকে ওতামেন্ডি বা রোমেরো এসে ব্লক করার চেষ্টা করেন। একজন ওই কাজটা করলেও পেছনে আরও দুই ডিফেন্ডার সেন্টারের ফাঁকাটা কমিয়ে আনেন। একই সঙ্গে উইং বা মিডফিল্ড থেকে দু'জন যোগ দেন ডিফেন্সে। তাতে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ব্লক করতে পুরোপুরি সফল হয় আর্জেন্টিনা।

এদিক থেকে ফ্রান্স কিছুটা পিছিয়ে। ব্যাকলাইনে দিদিয়ের দেশম চারজনকেই সর্বদা রাখেন। আর মিডফিল্ডে দু'জন। ফ্রন্ট তিনি একটু নেড়ে-চেড়ে সাজান। যেখানে স্ট্রাইকার পজিশনে জিরুদ থাকে। তার পেছনে লেফটে এমবাপ্পে আর রাইটে দেম্বেলে। মাঝে গ্রিজম্যানকে রাখা হয়। সর্বশেষ মরক্কো ম্যাচেও তেমনটা দেখা গেছে। মূলত তিনজনকে স্ট্রাইকারের পেছনে সমানতালে রাখায় আক্রমণের জায়গাটা অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে যায়। যখন মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ শানায় ফরাসিরা। এমবাপ্পের কাছে বল আসার পর তিনি ডি বক্সের মাঝখান দিয়ে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে প্রতিপক্ষ চায় এমবাপ্পেকে ব্লক করতে আর মূল স্ট্রাইকিংয়ে থাকা জিরুদ অপেক্ষা করেন বল পাওয়ার। কিন্তু তাঁকেও মার্কে রাখা হয়। মাঝে থাকা গ্রিজম্যানও থাকেন কাছাকাছি দূরত্বে। অর্থাৎ তিনজন এক বৃত্তে ঢুকে আক্রমণটা সফল করতে চান। যে কারণে তাঁদের ঘেরাও করতে প্রতিপক্ষের বেশি সেনানীর দরকার পড়ে না। তাছাড়া ফ্রান্স যখন লো ডিফেন্সিভ ব্লকে খেলে, তখন ফরোয়ার্ড লাইন থেকে মাঝমাঠে নেমে যান দেম্বেলে। আর একটা বৃত্তে দেখা যায় ওই তিনজনকে- জিরুদ, এমবাপ্পে ও গ্রিজম্যান। যে কারণে কাউন্টার এলে অপর পাশের ব্যাকলাইন সতর্ক থাকলেই ফ্রান্সের জন্য কঠিন হয়ে যায় গোল পাওয়া।

এ ছাড়া ফ্রন্টলাইনের তিনজন বলের পজিশন রাখতে না পারায় মাঝমাঠ ও ডিফেন্স থেকে আক্রমণ শানাতে হয়। অর্থাৎ তাদের আউটফিল্ডের সাতজনকেই সমানভাবে আক্রমণের কাজটা করতে হয়। যে কারণে রক্ষণে প্রায়ই সলিড অবস্থা থাকে না। এমনটা হলে মেসি ঠিকই সুযোগ নেবেন। যেটা ফ্রান্সের জন্য দুঃস্বপ্নের হতে পারে। আর্জেন্টিনার জন্য ইতিবাচক হবে ডি মারিয়া যোগ দিলে। ফাইনালের জন্য তিনি পুরোপুরি প্রস্তুত। স্কালোনি শুরুর একাদশে তাঁকে রাখার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের ফরমেশন ৪-৩-৩ ফিরে যেতে পারেন আর্জেন্টিনার কোচ। ফ্রন্টলাইনে তখন মেসি, আলভারেজের সঙ্গে ডি মারিয়ার রসায়নটা ঘটবে। আর আলভারেজকে লেফটে আর রাইটে ডি মারিয়াকে রাখা হতে পারে। যেটা ফ্রান্সের জন্য হতে পারে আতঙ্কের। মেসিকে আটকাতে হয়তো দু'জনকে রাখবেন দেশম। তবে মেসি বল ধরে রেখে খুব একটা আক্রমণ করেন না। দুই পাশের উইং আবার ফরোয়ার্ড লাইনের অন্যদের সুযোগ করেই নিজে জায়গা বদলান। আবার কখনও তাঁদের পায়ে বল দিয়ে নিজে দ্রুততম সময়ে ডি বক্সের নতুন কোনো পজিশনে চলে যান। মেসির এই কানামাছি খেলা থামাতে দেশম শেষ পর্যন্ত হাইলাইন ডিফেন্স দাঁড় করিয়ে দেন কিনা কে জানে? তেমনটা হলে তাদের আক্রমণ আরও ঝিমিয়ে যেতে পারে।