
কনটেইনার দিয়ে তৈরি কাতার বিশ্বকাপের আলোচিত স্টেডিয়াম ৯৭৪ (ছবি- ডয়চে ভেলে)
কাতার বিশ্বকাপ সর্বকালের সেরা হিসেবে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ স্তুতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বিশ্বকাপ উপলক্ষে নির্মিত দেশটির দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়ামগুলো। সুবিশাল আর শৈল্পিক এসব স্থাপনা এখন কী কাজে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
কাতার ছোট দেশ। এর জনসংখ্যা মাত্র কয়েক লাখ। কাজেই সব স্টেডিয়ামকে খেলাধুলার প্রয়োজনে ব্যবহার করার সুযোগ নেই দেশটির। কাতারের স্টেডিয়ামগুলো তৈরিতে ঠিক কত খরচ হয়েছে, তা অস্পষ্ট। বিশ্বকাপ আয়োজনে দেশটি মোট প্রায় ২২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। হিসাব বলছে, ১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাতটি ফুটবল বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে যা খরচ হয়েছে, তার চার গুণেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে শুধু কাতার বিশ্বকাপের আয়োজনে।
এত খরচের কারণ, এসব স্টেডিয়াম তৈরি। বিশ্বকাপের জন্য কাতারে সাতটি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। ফুটবলারদের অনুশীলনের জন্যও আলাদা মাঠের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। এর মধ্যে লুসাইল স্টেডিয়ামও রয়েছে। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় চূড়ান্ত খেলা।
৮৯ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার লুসাইল স্টেডিয়ামটি একটি হাতে তৈরি বাটির অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে। এটি সোনালি পাত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ৬৯ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার আল বাইত স্টেডিয়ামটি যাযাবরের মরুভূমির তাঁবুর মতো; আল থুমামা স্টেডিয়াম একটি বোনা টুপির মতো।
এর মধ্যে একটি স্টেডিয়াম টুর্নামেন্টের পর পরই কাতার থেকে চিরতরে বিদায় নেবে। এর নাম স্টেডিয়াম ৯৭৪। কাতারের রাস আবু আবৌদ এলাকায় তৈরি এই অস্থায়ী কাঠামোর স্টেডিয়ামে ৪৪ হাজারের বেশি আসন রয়েছে। জাহাজের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যবাহী স্টিলের কনটেইনার থেকে তৈরি হয়েছে এটি। নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ৯৭৪টি শিপিং কনটেইনার। কাতারের আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোডও +৯৭৪। তাই স্টেডিয়ামটির নাম দেওয়া হয় ৯৭৪।
বিশ্বকাপে শেষের দিকে এ স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে খুলে ফেলা হয়েছে মডিউলার স্টেডিয়ামের একাংশ। বিশ্বকাপ চলাকালে মোট সাতটি ম্যাচ এই মাঠে হয়েছে। সর্বশেষ ৫ ডিসেম্বর ব্যবহারের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় স্টেডিয়ামটি।
যেসব দেশে অবকাঠামো খারাপ, তার কোনো একটিতে এই স্টেডিয়ামের ভাঙা অংশগুলো পাঠানো হতে পারে। মনে করা হচ্ছে, আফ্রিকার কোনো দেশে এই স্টেডিয়ামের অংশগুলো পাঠানো হবে। সেখানে খেলাধুলার জন্য নতুনভাবে গড়া হবে এই স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ
কর্তৃপক্ষও স্টেডিয়ামটি এ দেশে আনতে চেষ্টা করছে।
কিন্তু বাকি স্টেডিয়ামগুলোর কী হবে? কাতার সরকার বলছে, লুসাইল স্টেডিয়ামে একটি স্কুল এবং অনেক দোকান ও ক্যাফে তৈরি করা হবে। খেলাধুলার প্রচুর জায়গাও ওই স্টেডিয়ামে থাকবে। পাশাপাশি একটি হাসপাতাল এবং একটি কমিউনিটি হলও স্টেডিয়ামের জায়গায় তৈরি করা হবে। ফুটবল বিশ্বকাপের স্মৃতিতে একটি মিউজিয়াম তৈরিরও পরিকল্পনা চলছে ওই জায়গায়।
আল বাইত স্টেডিয়ামে খোলা হবে একটি বিলাসবহুল হোটেল, একটি শপিংমল এবং একটি ওষুধের দোকান। মূলত খেলাধুলার সময় যে ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রীর প্রয়োজন, সেগুলোই ওই ওষুধের দোকানে পাওয়া যাবে।
দুটি স্টেডিয়াম ব্যবহার করবে স্থানীয় দুটি ফুটবল ক্লাব। আল রাইয়ান খেলবে আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে এবং আল ওয়াকরাহ খেলবে আল জানুবে। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে এখন থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু করবে কাতারের জাতীয় ফুটবল দল। আর সেই প্রশিক্ষণের জন্য কাজে লাগানো হবে খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামকে।
বাকি স্টেডিয়ামগুলোকে ২০৩০ সালে এশিয়ান গেমসের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে বলে কাতার প্রশাসন জানায়। এ ছাড়া ২০৩৬ সালে অলিম্পিক আয়োজন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে উপসাগরীয় দেশটি। তখনকার প্রয়োজনও হয়তো মাথায় রেখে এসব স্টেডিয়ামের ভাগ্য নির্ধারণ করা হবে।
তবে বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা হোটেলগুলোকে বদলে ফেলা হতে পারে ছোট ছোট আবাসনে। কয়েকটি হোটেল আরও উঁচু করে বহুতলে পরিণত করা হতে পারে। বিশ্বকাপ দেখতে দেশটিতে জড়ো হয়েছিলেন ৭ লাখ ফুটবলপ্রেমী। তাঁরা এখন নিজ নিজ দেশের পথে যাত্রা শুরু করেছেন।
সূত্র :রয়টার্স, ব্লুমবার্গ ও নিউইয়র্ক টাইমস।
মন্তব্য করুন