ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

পিএসজির অর্থের অপচয়

পিএসজির অর্থের অপচয়

ছবি- সংগৃহীত

নাজমুল হক নোবেল

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১২:০৮

কিংবদন্তি স্কটিশ কোচ বিল শ্যাঙ্কলির মতে, ফুটবল খুবই সাধারণ একটি খেলা। মূর্খরা একে জটিল বানায়। আসলেই কি তাই? শ্যাঙ্কলির অতি সাধারণ এই খেলাটিতে সাফল্য পাওয়া যে কতটা কঠিন ও জটিন, সেটা মনে হয় সাম্প্রতিককালে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। পানির মতো অর্থ ঢেলে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের দলে টেনেও প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি প্যারিসের ক্লাবটি। এর মধ্যে পার্ক ডি প্রিন্সেস থেকে গত সপ্তাহে কিলিয়ান এমবাপ্পের বিদায়ের ইচ্ছা পোষণের মধ্য দিয়ে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম ব্যয়বহুল একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটল।

বিশ্বকাপজয়ী এমবাপ্পের রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। এমবাপ্পের চলে যাওয়াটা আসলে পিএসজির জন্য অনেক বড় একটা ধাক্কা। এর মধ্য দিয়ে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ করা প্রজেক্টের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকা হলো। জিদান, রোনালদো, বেকহাম, ফিগোদের নিয়ে গড়া রিয়াল মাদ্রিদের গ্যালাকটিকোসের পর ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে আরও একটি তারকাপুঞ্জ গড়তে চেয়েছিলেন পিএসজির কাতারি মালিকরা। ২০১৭ সালের পূর্বে তাদের মতো এমন অকাতরে অর্থ ব্যয় বিশ্বের আর কোনো ক্লাবই করেনি। ট্রান্সফার মার্কেটে বিশ্বরেকর্ড ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ডে বার্সা থেকে নেইমারকে কেনার মধ্য দিয়ে যার সূচনা করেছিল নাসের আল খেলাইফির নেতৃত্বাধীন পিএসজি বোর্ড। ২০১৭ সালেই ফরাসি বিস্ময়বালক কিলিয়ান এমবাপ্পেকে মোনাকো থেকে ১৬৩ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে ভেড়ায়। কাতার সরকারের সমর্থনপুষ্ট ‘কিউএসআই’ (কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট) গ্রুপ পিএসজির ৮৭.৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই তারকাকে কেনার পর বছর কয়েকের মধ্যে তারা মাউরো ইকার্দি, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, আবদু দিয়ালো, থিলো কেহেরকে কেনে। তবে প্রতিভাবান হিসেবে বিবেচিত এদের প্রত্যেকেই হতাশ করেছেন। কাতারের ধনকুবেররা ২০১১ সালে কেনার পর থেকেই লিগ ওয়ান শিরোপা জিতে শুরু করেছিল পিএসজি। গত এক যুগে মোনাকো ও লিলে ছাড়া বাকি ১০ বারই লিগ জিতেছে তারা। তাদের এ বিশাল বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়। ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ উভয় মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেয় তারা। পরের বছর ২০২০ সালে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই আসরের ফাইনালে ওঠে তারা। তবে ২০২১ এর আগস্টে বার্সেলোনা ফ্রি ট্রান্সফারে থেকে লিওনেল মেসিকে এনে দারুণ এক চমক দেন পিএসজি চেয়ারম্যান নাসের খেলাইফি। 

আর্জেন্টাইন মহাতারকা যোগ দেওয়ার মাত্র এক মাস আগে নেইমারের বেতন সপ্তাহে ৫ লাখ ৯৬ হাজার পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৯ লাখ ৫৭ হাজার পাউন্ড করা হয়। ফ্রি ট্রান্সফারে যোগ দেওয়া মেসির সাপ্তাহিক বেতন ১.০৮ মিলিয়ন পাউন্ড। তবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেতন বাড়ানোর পরও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে যাওয়ায় বেশ হতাশ হন পিএসজির কাতারি মালিকরা। ২০২২ সালে অনেক দেনদরবার করে রেকর্ড ১.২২ মিলিয়ন পাউন্ড বেতনে এমবাপ্পের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করে তারা।

২০১৭ সাল থেকে আসছে জুনে এমবাপ্পের চুক্তি শেষ হওয়া পর্যন্ত আক্রমণভাগের তিন সুপারস্টারের জন্য ট্রান্সফার ফি ও বেতন বাবদ পিএসজির মোট ব্যয় ৮০৭ মিলিয়ন পাউন্ড। এর মধ্যে বেতন বাবদ খরচ ৪৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি। এর মধ্যে ২০২২ সালে এমবাপ্পের অস্বাভাবিক বেতন বাড়ানো ও ক্লাবের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁকে অধিকার দেওয়ার পরই ঝামেলার সূত্রপাত। কোচের পরিকল্পনা ছিল– নেইমার আক্রমণভাগের বাঁপাশে, মেসি ডানে এবং এমবাপ্পে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলবেন। কিন্তু এমবাপ্পে এ পরিকল্পনায় বাগড়া দিয়ে বাঁপাশে খেলবেন না বলে গো ধরেন। এখানেই ভাঙনের সূচনা। নেইমার বার্ষিক ১২৮ মিলিয়ন পাউন্ড বেতনে সৌদি ক্লাব আল হিলালে চলে যান। মেসিও ইন্টার মায়ামিতে পাড়ি জমান। এবার এমবাপ্পের বিদায়ের ঘোষণায় গ্যালাকটিকোসের শেষ চিহ্নটিও মুছে গেল।

পিএসজি গ্যালাকটিকোস ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে সবচেয়ে বড় অপচয় হিসেবে। কেবল তিন সুপারস্টারের পেছনেই ৮০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি খরচ হয়নি, এমবাপ্পে যোগ দেওয়ার পর তারা ট্রান্সফার ফি বাবদ আরও ৫৩৭ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেছে। ক্লাবে বেতন ও গেইম টাইম নিয়ে সন্তুষ্ট নন– এমন খেলোয়াড়কে তারা টার্গেট করত। যেমন মাউরো ইকার্দি ও কেইলর নাভাস। নির্মম বাস্তবতা হলো, পিএসজিতে মোটা বেতন পেয়েও এই খেলোয়াড়দের মিটত না। পরিকল্পনাহীন এসব ট্রান্সফারের সঙ্গে দলে শৃঙ্খলাও ছিল না। এসব কারণে অঢেল অর্থ ব্যয় করে তারকাদের হাট বানানো গেলেও একটি দল হয়ে উঠতে পারেনি পিএসজি।

আরও পড়ুন

×