সোমবার দুপুরে হঠাৎই বাফুফে থেকে বার্তা, 'জরুরি' সংবাদ সম্মেলন করবেন কাজী সালাউদ্দিন। বিকেল ৪টায় ফুটবল ফেডারেশন ভবনে সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়াকে নিয়ে আসেন সভাপতি। ফেডারেশনের সব সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও গতকাল আসেননি সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ! বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে যে চারজন চিঠি পেয়েছেন, তাঁর মধ্যে আছেন সোহাগও। বাফুফের আর্থিক ও কেনাকাটা বিষয়ে অসংগতিসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন ও সহকারী অর্থ কর্মকর্তা অনুপম সরকারকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছিল ফিফা। সেই চিঠি পেয়েছিলেন বাফুফে ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদিও। ফিফার চিঠি নিয়ে পুরো ফুটবল অঙ্গনে যখন তোলপাড়, তখন সালাউদ্দিন যেন কিছুই জানেন না। সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত রিপোর্টগুলো তাঁর কাছে মনে হয়েছে ভিত্তিহীন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের বাঁচাতে এদিন ঢাল হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা সালাউদ্দিনকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়েছে। নিজে ফিফার চিঠি কেন পাননি, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়েও নানা যুক্তি দেখান ঘরোয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান।

'যে জিনিসটি নিয়ে আপনারা আলাপ করছেন, আমাদের চারজনের নামে ফিফা থেকে চিঠি এসেছে। আমি কিন্তু কিছুই জানি না। অফিসিয়ালি আমি এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি পাইনি। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে চিঠি দিয়েছে কিনা, আমি জানি না। আমাকে কালকে (রোববার) মন্ত্রী পর্যন্ত বলেছেন (যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী) বাফুফে সভাপতি হিসেবে আপনি এর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিন। কিন্তু আমি কীসের ওপরে অ্যাকশন নেব, চিঠিই তো পাইনি।'

সম্প্রতি সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগও বলেছিলেন, 'চিঠি এসেছে, এর মধ্যে এটার সমাধান হয়ে গেছে।' ফেডারেশনে এত কিছু ঘটে যাচ্ছে, তাহলে সভাপতি হিসেবে আপনার নিজের জানার কথা নয়- এমন প্রশ্নের উত্তরে ঘুরেফিরে একই কথা বলেছেন বাফুফে সভাপতি, 'আপনি লিখতে পারেন, সভাপতি হিসেবে ফিফা থেকে আমি কোনো গাইডলাইন কিংবা চিঠি পাইনি। কেউ কিছু পেয়ে থাকলে, সেটা তো আমাকে জানায়নি কেউ।' তাহলে কি চেইন অব কমান্ডের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে? 'এখানে চেইন অব কমান্ডের কথা নয়। ফিফা আমাকে তো কিছু বলেনি। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব আমাকে জানানো, তবে আমাকে কেউ কিছু জানাননি। আমি আনঅফিসিয়ালি ফিফার সঙ্গে কথা বলেছি। ফিফা আমাকে বলেছে, এ ব্যাপারে তোমার সঙ্গে আলোচনা করার কিছু নেই। আমরা কিছু তদন্ত করছি।'- রাগান্বিত হয়ে বলেন সালাউদ্দিন।

একটা দেশের ফুটবল ফেডারেশনের প্রধানকে বাইপাস করে কি অন্য কাউকে চিঠি দিতে পারে ফিফা? সালাউদ্দিনও এ বিষয়টির উত্তর দিয়েছেন কূটনৈতিকভাবে, 'সেটা ফিফাই ভালো বলতে পারবে। আর ফিফা কেন আমাকে জানায়নি, সেটা তাদের ব্যাপার। যে কারণে ভুল ভাঙানোর জন্য আজকে আপনাদের সামনে। আপনারা যেটা বলেছেন সেটা হয়তো সঠিক, আবার সঠিক না।' বাফুফে সভাপতির বক্তব্যে মনে হয়েছে, এর সবকিছুর জন্যই দায়ী মিডিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা তদন্ত নিয়েও মিডিয়াকে দোষারোপ করেছেন সালাউদ্দিন। 'আপনাদের হাফ নিউজে মাঠে লোক আসা বন্ধ হয়, স্পন্সর আসা বন্ধ হয়। কেন, কীসের স্বার্থে করেন- সেটা আমি জানি না। হাফ হার্টেড, বেসলেস নিউজ করলে আমাদের কষ্ট দেয়। সপ্তাহে ২ দিন যে খেলা হয়, সেটা তো ঢালাওভাবে বলেন না। আমার এই দুঃখটাই জানাতে আজকে সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছি।'

সবকিছুই যেহেতু মিডিয়ার তৈরি, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা কেন নেন না- জবাবে সালাউদ্দিন বলেন, 'আমি আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে ভেবেছি। একজন আইনজীবীকে ভাড়া করব, যাতে সামনে এ রকম ব্যাপার এলে তিনি মোকাবিলা করতে পারেন।'