চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কাছ থেকে সবুজসংকেত পাওয়ার পরই রাসেল ডমিঙ্গোর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে বিসিবি। চুক্তির শর্ত বিচ্ছেদ পর্যায়ে পৌঁছাতেই উভয় পক্ষের সম্মতিতে তিন মাসের নোটিশে চাকরি ছাড়েন ডমিঙ্গো। প্রধান কোচের পদ শূন্য হওয়ার পর থেকেই নতুন কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয় বোর্ড। চন্ডিকা হাথুরুসিংহ ও শ্রীধরন শ্রীরামের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে গেছে এতদিন। শ্রীরাম ঢাকায় এসে একবার আলোচনাও করে গেছেন নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে। আগামী মাসে আবার আসার কথা রয়েছে তাঁর। তিনি আসেন কিনা- সেটাই এখন দেখার বিষয়। 

কারণ, জাতীয় দলের তিন সংস্করণের প্রধান কোচ চূড়ান্ত করে ফেলেছে বিসিবি। হাথুরুসিংহেই সেই কোচ। তিনিই চেয়েছিলেন, তিন সংস্করণের প্রধান কোচের পদ। একইভাবে শ্রীরাম চেয়েছেন, সাদা বলের প্রধান কোচ হতে। এ কারণেই প্রধান কোচ বেছে নিতে এতটা সময় লেগেছে বিসিবির। হাথুরুসিংহেকে নিয়োগ দিতে শ্রীরামকে সহকারী কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যদিও টি২০ বিশ্বকাপে সাকিবদের পরামর্শকের অন্তরালে প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন শ্রীরাম। তিনি এখন হাথুরুসিংহের সহকারী হতে চান না। বিসিবির একজন কর্মকর্তাকে সম্প্রতি ফোনে শ্রীরাম আনঅফিসিয়ালি জানিয়েছেন, সহকারী কোচ হতে চান না তিনি। নাজমুল হাসান পাপন এবং জালাল ইউনুসও বুঝে গেছেন হাথুরুসিংহে বা শ্রীরামের যে কোনো একজনকে বেছে নিতে হবে। তাই পরীক্ষিত কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।

প্রধান কোচ চূড়ান্ত হয়ে গেলেও অফিসিয়ালি নাম প্রকাশ করা হয়নি। হাথুরুসিংহের নিয়োগ ওপেন সিক্রেট হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি বিসিবির সব পরিচালককে। তবে গতকাল ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ঢাকায় একাধিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'আমরা চেষ্টা করছি, ইংল্যান্ড সিরিজের আগেই হেড কোচ নিয়োগ দিতে। কোচের সঙ্গে আলোচনার পর্ব শেষ। একপ্রকার চূড়ান্ত হয়ে আছে। তবে চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত নাম প্রকাশ করতে পারছি না। আশা করি, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে প্রধান কোচের নাম ঘোষণা করতে পারব।'

টি২০ বিশ্বকাপ চলাকালে বিসিবি সভাপতি এবং কয়েকজন বোর্ড পরিচালকের সঙ্গে সিডনিতে মিটিং হয় হাথুরুসিংহের। সেখানেই বাংলাদেশের চাকরিতে ফেরার আগ্রহ দেখান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এ লঙ্কান। এদিকে ক্রিকেটাররা চাচ্ছিলেন, হাথুরুসিংহের সঙ্গে শ্রীরামও যেন টি২০ দলের কোচ থাকেন। টি২০ বিশ্বকাপ চলাকালে ভারতীয় এ কোচের সঙ্গে কাজ করে খুশি ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের আগ্রহে বিসিবিও চেষ্টা করছে শ্রীরামকে জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত করতে। ৬ জানুয়ারি বিসিবি কার্যালয়ে কথাবার্তাও বলে গেছেন শ্রীরাম। আইপিএল চলাকালে ছুটি পাওয়ার শর্তও জুড়ে দিয়েছেন তিনি। জালাল ইউনুস জানান, হেড কোচ আসার পর শ্রীরামের সঙ্গে আবারও আলোচনা হবে। তিনি বলেন, 'শ্রীরাম জানাতে এসেছিলেন, সে অ্যাভেল অ্যাভেল। তাঁর আইপিএলেরও একটা ব্যাপার আছে। এগুলো নিয়েই আলাপ-আলোচনা করতে এসেছিলেন। আগামী মাসে আবার আসবেন। আমরা হেড কোচকে নিয়েই তাঁর সঙ্গে কথা বলব। আইপিএলে শ্রীরাম চলে গেলে, কে দায়িত্ব নেবে। সে কখন থেকে কীভাবে কাজ করবে- সেগুলো ঠিক করার বিষয় আছে। এ ছাড়া শ্রীরামের কোচিং রোল ঠিক করার বিষয় থাকবে।'

হাথুরুসিংহে এবং শ্রীরামের সঙ্গে আরও কয়েকজন কোচের নাম জুড়ে দেওয়া হলেও সেগুলো 'ডামি কোচ' বলা যায়। কারণ ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল- এই সময় পর্যন্ত হাথুরুসিংহে প্রধান কোচ হিসেবে খুব পছন্দ ছিল বিসিবি কর্মকর্তাদের। এই কোচের অভিভাবকসুলভ আচরণ বেশি পছন্দ। গতকালও জালাল ইউনুস বলেছেন, উপমহাদেশের ক্রিকেটারদের সেন্টিমেন্ট বোঝেন এমন একজনকেই হেড কোচ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে হাথুরুসিংহে বা শ্রীরাম ছাড়া উপমহাদেশের সেন্টিমেন্ট বোঝা তৃতীয় কোনো কোচের নাম নেই তালিকায়। 

জালাল ইউনুসের মতে, 'বাংলাদেশ দলের জন্য যে কোচ উপযুক্ত হবে, সে ধরনের কোচ আমরা চাই। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত- এই দেশগুলোতে যে ধরনের কোচ হ্যান্ডেল করতে পারে, সে ধরনের কোচ চাই। যাঁদের সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো থাকে, যোগাযোগ ভালো হয়, সে ধরনের কোচ।'

এ থেকে একটা বিষয় পরিস্কার, হাথুরুসিংহেকে প্রধান কোচ করা হয়ে গেছে। বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা। প্রশ্ন হচ্ছে চন্ডিকার অধীনে সহকারী কোচ হিসেবে শ্রীরাম কাজ করবেন কিনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ হবেন না এ ভারতীয়। অস্ট্রেলিয়া দলে সহকারী কোচ থাকার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রধান কোচ হতে চাইবেন তিনি। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সে স্বাদ তিনি পেয়েছেন বাংলাদেশে। সেখান থেকে অবনমন চাইবেন না নিশ্চয়ই। বিসিবির একজন কর্মকর্তাকে সম্প্রতি ফোনে শ্রীরাম জানিয়েও দিয়েছেন, হাথুরুসিংহের সহকারী কোচ হবে না তিনি।