- খেলা
- হরিজনদের উপেক্ষার চিত্র বদলায়নি
হরিজনদের উপেক্ষার চিত্র বদলায়নি

হোটেলের পাশে খোলা আকাশের নিচে কৈলাস বাঁশপো তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খাবার খাচ্ছেন। ছবি- অধ্যাপক আব্দুল আলিমের ফেসবুক থেকে নেওয়া
লালমনিরহাটে এখনও রেস্তোরাঁয় বসে খেতে পারেন না হরিজনরা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া শুরু করেছেন। বাইরে বসে খাওয়া কমছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। লালমনিরহাটে আগের মতোই উপেক্ষিত হচ্ছেন হরিজনরা। রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার অনুমতি তাঁরা পাননি।
গত ৪ জানুয়ারি রেস্তোরাঁর বাইরে বসে হরিজন সম্প্রদায়ের দুটি শিশু তার মা-বাবার সঙ্গে কাগজের টুকরোয় খাবার খাচ্ছে- এমন দুটি ছবি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল আলীম তাঁর ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট দিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, এখনও লালমনিরহাটের স্টোরপাড়ার বাসিন্দাদের (হরিজন) রেস্তোরাঁর বাইরে বসে খেতে হয়। বিষয়টি আমলে নেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন। তিনি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে ২২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন।
গত ১৮ জানুয়ারি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ। ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল আলীম। তিনি মানবাধিকার কমিশনকে লেখেন, বাস্তবে তাঁর (জেলা প্রশাসক) বক্তব্য সঠিক হলে তিনিসহ হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন খুশি হতেন। হরিজনদের পরিচ্ছন্নতা, দলবদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কমিশনের তাগিদের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি এম এ মমিনকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্টোরপাড়া (সুইপার কলোনি) এলাকায় হরিজন সম্প্রদায়ের প্রায় ৭৪টি পরিবারের বাস। তাদের অভিযোগ, রেলওয়ে স্টেশন এলাকার রেস্তোরাঁগুলো তাঁদের ভেতরে বসে খাবার খেতে দেয় না। অভিযোগের বিষয়ে রেস্তোরাঁ মালিকরা তদন্ত কমিটিকে জানান, হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায়ই বিভিন্ন পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে ভালোভাবে পরিস্কার না হয়ে হোটেলে খাবার খেতে আসেন। এতে অন্যরা অস্বস্তিতে ভোগেন। এই সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্য হোটেলের ভেতরে পৃথক আসনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন হোটেল মালিকরা।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল আলীম জেলা প্রশাসকের তদন্ত প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করে সমকালকে বলেন, তাদের নিষ্ফ্ক্রিয়তা ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে এখনও সমাজে বৈষম্যমূলক আচরণ বিদ্যমান। তিনি হরিজনদের অধিকার রক্ষায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সরাসরি তদন্তের অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, প্রতিবেদনে সমস্যার সমাধান হয়েছে- এমন কথা বলা হয়নি। বিষয়টি সমাধানের পথে রয়েছে, বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন