- খেলা
- হিমালয়কন্যাদের হারিয়ে আবারও জয়গান
অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ
হিমালয়কন্যাদের হারিয়ে আবারও জয়গান
বাংলাদেশ ৩ :০ নেপাল

অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব বাংলাদেশের -বাফুফে
কমলাপুরের সবুজ গালিচা ততক্ষণে লাল-সবুজে একাকার। রেফারির শেষ বাঁশি বেজে উঠতেই ডাগআউট থেকে সবার আগে মাঠে ছুটলেন অধিনায়ক শামসুন্নাহার। ডাগআউটে তখন পানির বোতল খুলে বৃষ্টির আনন্দ ধারা। গ্যালারি মুখরিত 'বাংলাদেশ, বাংলাদেশ' স্লোগানে। দেশের পতাকা হাতে নিয়ে পুরো স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করছেন স্বপ্না-সোহাগীরা। এমন উদযাপন তো মেয়েদেরই মানায়। কারণ, ফুটবলে সাফল্যের জয়গান তো তাঁরাই গাইছেন বারবার। বৃহস্পতিবার অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের ফাইনালে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে লাল-সবুজের দলটি। ছয় মাসের ব্যবধানে হিমালয়কন্যাদের হারিয়ে আরেকবার সাফের শিরোপা উৎসবে মেতে উঠেছে গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। এবার কুড়ির হাত ধরে এসেছে আরেকটি ট্রফি। গোল করে ফাইনালকে স্মরণীয় করে রাখেন শাহেদা আক্তার রিপা, শামসুন্নাহার জুনিয়র ও উন্নতি খাতুন।
এক দলের প্রতিশোধের স্পৃহা, আরেক দলের শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন। বাংলাদেশ আর নেপাল মেয়েদের ফুটবলের দ্বৈরথটা চলে গেছে অন্যমাত্রায়। গত ছয় মাসের মধ্যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটি ভিন্ন প্রতিযোগিতার ফাইনালে তৃতীয়বার মুখোমুখি দু'দল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে হিমালয়ের দেশে ফুটবলের যে গৌরবগাথা লিখেছিলেন সাবিনা খাতুনরা, বর্তমান প্রজন্মের কাছে সেটা তো বাংলাদেশ ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন। এর পর নভেম্বরে এই কমলাপুরে অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফে নেপাল মেয়েদের উচ্ছ্বাসটি হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছিল গোলাম রব্বানী ছোটনের দলের খেলোয়াড়দের। তিন মাসের ব্যবধানে হিমালয়কন্যাদের কাঁদিয়ে সাফল্যের শোকেসে আরেকটি পালক যোগ করেছেন মেয়েরা। ২০১৮ সালের পর নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার জিতেছিল অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। পাঁচ বছর পর একই টুর্নামেন্ট (এবার অনূর্ধ্ব-২০) একই প্রতিপক্ষকে নিজেদের চেনা মঞ্চে উড়িয়ে দিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন শামসুন্নাহার জুনিয়ররা। অধিনায়ক হিসেবে তৃতীয়বার এসে প্রথম ট্রফি জয়ের আনন্দ শামসুন্নাহারের।
বয়সভিত্তিক ফুটবলের ফাইনাল মানেই বাংলাদেশ। এ নিয়ে আটবার বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা লাল-সবুজের দলটি ট্রফি জিতেছে চারটিতে। ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ দিয়ে সাফল্যের জয়গান শুরু। এর পর অনূর্ধ্ব-১৮, অনূর্ধ্ব-১৯ এবং এবার অনূর্ধ্ব-২০। ঘরের মাঠের টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে ফেভারিট ছিল বাংলাদেশই। সিঙ্গেল রাউন্ডভিত্তিক খেলার প্রথম দেখায় হিমালয়কন্যাদের ৩-১ গোলে হারিয়েছিলেন শাহেদা আক্তার রিপা-আকলিমারা। কিন্তু টুর্নামেন্টে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে শিরোপা মঞ্চে ওঠা ইয়াম প্রসাদ গুরুংয়ের দলকে নিয়ে ভয় ছিল বেশিই। আক্রমণাত্মক কৌশলে শুরুতেই খেলা স্বাগতিকরা নিজেদের ফুটবলশৈলী দেখাতে থাকেন। ছন্দময় ফুটবল খেলে রিপা, শামসুন্নাহার, স্বপ্নারা সবাইকে মোহিত করেন। গোলপোস্টের নিচে রুপনা দেখিয়েছেন তাঁর দুর্দান্ত প্রদর্শনী। বল পজিশন, আক্রমণ, রক্ষণ- সব বিভাগেই ছোটনের দল ছিল এগিয়ে। কিন্তু যেভাবে শুরুটা করেছিল, গোলের সংখ্যাটা ৩০ মিনিটের মধ্যেই তিন থেকে চারটি হতে পারত। সেটা হয়নি ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতা আর নেপাল রক্ষণভাগের দৃঢ়তায়। তবে প্রথমার্ধে চার মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে ম্যাচের লাগামটাও নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ৪২ মিনিটে স্বপ্না রানীর পাস খুঁজে নেয় রিপাকে। তাঁর বাড়ানো বল রিসিভ করতে গিয়ে পড়ে যান আকলিমা। বল চলে যায় নেপালের কুমারি তামাংয়ের পায়ে। তিনি ফিরতি যে শট নেন, তা চলে যায় রিপার পায়ে। বক্সের লাইন থেকে এ ফরোয়ার্ডের ডান পায়ের শট চলে যায় জালে। মেতে ওঠে গ্যালারি। যোগ করা সময়ে শামসুন্নাহার গোল করলে গগনবিধারী আওয়াজে মেতে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম। নিজেদের অর্ধ থেকে আফিদা খন্দকারের উঁচু লব ফেরাতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন প্রাতিকশা চৌধুরী। ডিফেন্ডারের গায়ে গায়ে লেগে থাকা শামসুন্নাহার বল ধরে নিয়ে দ্রুত বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েন। ঠান্ডা মাথায় নেপাল গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বয়সভিত্তিক এ নারী সাফে শামসুন্নাহারের গোল ৫টি। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোল স্কোরারও তিনি।
বিরতির পর বাংলাদেশের খেলায় কমে যায় গতি। তাতে আক্রমণের ঢেউ তোলে নেপাল। কখনও রুপনার অবিশ্বাস্য সেভ, আবার কখনও বা রক্ষণে নাসরিন আক্তারের দৃঢ়তায় নেপাল পারেনি গোল করতে। উল্টো ৮৭ মিনিট রিপার চোখ ধাঁধানো সেট পিসে উন্নতি খাতুনের পায়ের ছোঁয়ায় বল জালে জড়াতেই কেটে যায় সব অনিশ্চয়তা। লাল-সবুজের পতাকায় নিজেদের আবৃত করে আফিদা-স্বপ্নারা দেখিয়ে দিয়েছেন দেশের ফুটবলের ঝা া মেয়েদের হাতেই।
বিষয় : অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ
মন্তব্য করুন