- খেলা
- সাইড বেঞ্চ থেকে জীবনের পাঠ
সাইড বেঞ্চ থেকে জীবনের পাঠ

কার্লি লয়েড। ছবি-সংগৃহীত
কার্লি লয়েড। দু'বার অলিম্পিক গোল্ড মেডেল ও একবার ফিফা ওমেন'স ওয়ার্ল্ড কাপজয়ী যুক্তরাষ্ট্র প্রমীলা জাতীয় ফুটবল দলের মিডফিল্ডার। ২০১৫ সালের ফিফা বর্ষসেরা এই নারী ফুটবলারের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
পাঁচ বছর বয়সে ফুটবল খেলা শুরু করি। তবে ২০০৮ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করাটাই আমার ক্যারিয়ারের প্রকৃত শুরু বলা যেতে পারে। জীবনে অনেক ভালো ম্যাচ এবং এর পাশাপাশি বাজে ম্যাচ আমি খেলেছি ঠিকই, তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটা বাজে ম্যাচ খেলার পর সেটি থেকে শিক্ষা নিয়ে, কঠোর পরিশ্রম করে, পরবর্তী ম্যাচে ভালো করার নিশ্চয়তা খুঁজে নেওয়া। প্রতিটি ম্যাচেই ভালো খেলা কারও পক্ষে সম্ভব নয় জানি; কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ভালো না খেললে ভেঙে না পড়ে বরং সফল হওয়ার বিকল্প কোনো কৌশল আবিস্কার করাই শ্রেয়।
জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ
জাতীয় দলে যখন প্রথমবার জায়গা পাই, মিয়া হ্যাম, শ্যানন ম্যাকমিলান ও টিফেনি মিলবার্টের মতো খ্যাতিমান ফুটবলারদের পাশে খেলার সৌভাগ্য হয় আমার। বলে রাখি, নিজের ঘরের দেয়ালে সেঁটে রাখা এই তারকাদের ছবির সঙ্গেই বড় হয়ে উঠেছি; ফলে তাদের পাশে খেলতে পারাটা ছিল ভীষণ রোমাঞ্চের। তাদের খেলার গতি ছিল খুব তুখোড়। তারা আমার কাছ থেকেও একই গতি ও দক্ষতা আশা করতেন। মনে পড়ে, একবার ছোট্ট পরিসরের এক ম্যাচ চলছিল। ব্রায়ানা স্কারি ছিলেন গোল পোস্টে। তিনি চিৎকার করে আমাকে বললেন, তুমি যদি বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে গতিতে পেছনে ফেলে দিতে না পার- তাহলে সে তোমাকে বল নিয়ে এগোতে দেবে না। তরুণ খেলোয়াড়দের আমিও স্র্রেফ এ কথাটিই বলতে চাই।
সাইড বেঞ্চের ক্যারিয়ার
২০১২ সালের অলিম্পিকের আগ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় সাইড বেঞ্চেই কাটাতে হয়েছে আমাকে। কখন যে মাঠে নামার সুযোগ পাব তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। ধরুন, এক ম্যাচে এক অর্ধ বা ৪৫ মিনিট খারাপ খেললাম, তো পরের ম্যাচে শুরু থেকে নামার সম্ভাবনা বলতে গেলে চলেই গেল। আমি মনে করি, এই পরিস্থিতিকে সামলানোর পথ আছে দুটি। হয় আপনি ক্ষেপে গিয়ে কোচের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠবেন এবং অসন্তোষ নিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকবেন অথবা কোচের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে মেনে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে যোগ্য ও অনিবার্য করে তুলবেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় পথটিকেই আমি বেছে নিয়েছি।
নিজেকে প্রমাণ...
যদি বলি, সাইড বেঞ্চে বসে থাকার যাতনা আমাকে পোড়ায়নি, আমার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়েনি অশ্রু, আমি বিরক্ত হইনি কিংবা ক্ষেপে উঠিনি- তাহলে মিথ্যে বলা হবে। কেননা, এটা তো মানুষের সহজাত প্রবণতা। আমার ক্যারিয়ারে বহুবার আবেগের এমন বিচ্ছুরণ ঠিকই ঘটেছে; তবে দিনে দিনে বয়স ও অভিজ্ঞতা যত বেড়েছে, আমিও শিখে নিয়েছি এমন পরিস্থিতিগুলো সামলানোর কৌশল। ফলে সাইড বেঞ্চে বসেই টিমম্যাটদের সমর্থন করে গেছি; চিৎকার করে উৎসাহ জুগিয়ে গেছি। আর কোচের প্রতি রেখেছি শ্রদ্ধা। তবে মনে মনে ঠিকই জানতাম, ২০১২-এর অলিম্পিকে যাওয়ার আগেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।
জার্সি নম্বর ১০
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ১০ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড়দের খুব মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতাম আমি। আমারই জন্মশহর ডেলরানে বেড়ে ওঠা পিটার ভার্মসও ১০ নম্বর জার্সি পরতেন। পরতেন মিশেল অ্যাকার্স, পেলে, ম্যারাডোনা। বাচ্চা বয়সে এরা আমার কাছে ছিলেন একেকজন মহানায়ক। সেন্টার-মিড পজিশনে খেলতাম আমি; ছিলাম অ্যাটাকিং প্লেয়ার। ক্লাবে ১০ নম্বর জার্সি পরেই খেলতাম আমি। তারপর জাতীয় দলে যখন জায়গা পেলাম, ১০ নম্বর জার্সিটির মালিকানা তখন অ্যালি ওয়াগনারের। তিনি অবসরে যাওয়ার পরই জার্সিটি কাঁধে চাপানোর দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত সুযোগ পেয়ে যাই আমি। এটি আমার প্রিয় একটি নম্বর; আর এটি পরে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা আমার জন্য সম্মানের ব্যাপার। তবে দিনের শেষে, এটি স্রেফ একটি সংখ্যার চেয়ে বেশি কিছু নয় কিন্তু!
মাঠের রাজত্ব
যখনই মাঠে পা রাখি, খেলাটাকে প্রতিপক্ষের জন্য স্রেফ কঠিন করে তুলতে চাই আমি ঠিকই কিন্তু মানুষ পছন্দ করুক বা না-ই করুক, কখনোই 'নোংরা' ফুটবল খেলার চেষ্টা থাকে না আমার। বরং দলে নিজের জায়গাটির মর্যাদা রাখার চেষ্টা করে যাই। ম্যাচের একেবারে শুরু থেকেই সমানভাবে অ্যাটাক ও ডিফেন্ড করতে সক্ষম- এমন একজন পরিপূর্ণ মিডফিল্ডারের ভূমিকা পালন করে যাওয়াই লক্ষ্য আমার। এ কাজটি যতক্ষণ ঠিকঠাক করতে পারি, তখন মাঠে আমার জায়গাটিতে আমারই রাজত্ব আসতে বাধ্য।
মন্তব্য করুন