- খেলা
- এক কমিটিতে ১৯ বছর, পূর্বধলা আওয়ামী লীগে স্থবিরতা
এক কমিটিতে ১৯ বছর, পূর্বধলা আওয়ামী লীগে স্থবিরতা

তিন বছরের কমিটি দিয়ে ১৯ বছর চলছে পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় দলে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয় ২০০৩ সালের ৫ নভেম্বর। পূর্বধলা মডেল স্কুল মাঠে সম্মেলন উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ফজলুর রহমান খান। প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেছাত হোসেন বেলালকে সভাপতি ও এরশাদ হোসেন মালুকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এই কমিটির মেয়াদ ছিল তিন বছর। অথচ ১৯ বছর ধরে এক কমিটিতেই ঢিমেতালে চলছে কার্যক্রম।
দীর্ঘ সময় ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন না হওয়ায় নতুন পদপ্রাত্যাশীদের মধ্যে যেমন হতাশা বিরাজ করছে, তেমনি দলীয় কর্মকাণ্ড দিন দিন ঝিমিয়ে পড়ছে। গত ২৬ জানুয়ারি বৃহত্তম ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় সব জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দেওয়ার কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া যেসব উপজেলায় সম্মেলন হয়নি, সেসব উপজেলায় দ্রুত সম্মেলন করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা।
পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রত্যাশায় মাঠে নেমে পড়েছেন প্রায় হাফ ডজন নেতাকর্মী। এর মধ্যে সভাপতি পদে রয়েছেন– উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেছাত হোসেন বেলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন মালু, শেখ রাজু আহমেদ রাজ্জাক সরকার। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন– উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মাসুদ আলম টিপু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম তালুকদার, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান মজিবুর। তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতাদের আশীর্বাদের আশায় লবিং করছেন।
পূর্বধলা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সুজন জানান, দীর্ঘদিন দলের সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। গুটি কয়েকজনের কাছে দলটি যেন জিম্মি হয়ে আছে। আওয়ামী লীগ একটি প্রগতিশীল দল। যথাসময়ে সম্মেলন হলে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসে এবং দল গতিশীল হয়। দল ও এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন বলে দাবি তাঁর।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম তালুকদারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় দলের মধ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গুটি কয়েক নেতার ইচ্ছে মতো দল পরিচালিত হচ্ছে। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে দলের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। দল বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা তাঁর।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ রাজু আহমেদ রাজ্জাক সরকার। তিনি বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে প্রায় ২০ বছর চলছে। সামনে সম্মেলন কবে হবে তার কোনো ঠিক নেই। উপজেলায় দলটি চলছে স্বৈরাচারী কায়দায়। দলের জন্য গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু দলে আমার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। গত সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু সাধারণ সদস্য পদও কপালে জোটেনি। আগামী দিনে সম্মেলন হলে সভাপতি হবো না, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হবো– সময় ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেছাত হোসেন বেলাল এমপির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে তার সমর্থক উপজেলা যুবলীগ নেতা ফেরদৌস আলম বলেন, ‘সম্মেলনের কোনো তারিখ হয়নি। সভাপতি হিসেবে এমপি ওয়ারেছাত হোসেন বেলালই যোগ্যতা সম্পন্ন। আগামীতেও তিনিই থাকবেন বলে আমরা আশাবাদী।’
মন্তব্য করুন