এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে, এই তো নদীর খেলা– বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং দেখে নজরুলের কবিতার চরণটি মনে পড়ে যায়। বছরখানেক আগেও যে টপঅর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল, সেখানে এখন নিয়মিত রান আসছে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টোটা। এখন দুশ্চিন্তার নাম মিডলঅর্ডার!

এক দিনের ক্রিকেটে গত বছরও এমনটা লক্ষ্য করা যায়। ২০২২ সালে বাংলাদেশ মোট পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। যেখানে টপঅর্ডার থেকে এসেছে ১ হাজার ৫০০-এর বেশি রান। কিন্তু মিডলঅর্ডার টেনেটুনে ৯০০ পার করতে পেরেছে।

২০২৩ সালের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সিরিজের যাত্রাতেও সেই গলদ। মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেভাবে নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সামনে মাত্র ২০৯ রান জমা করে। যেখানে বড় ব্যর্থতার পরিচয় দেয় মিডলঅর্ডার। 

মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ– এই তিনজনের কাঁধে ছিল মিডলঅর্ডারের দায়িত্ব। কিন্তু তিনজন মিলে করেন মোটে ৫৫ রান। টপঅর্ডার যাও ৮৮ রান করে দিয়ে যায়। তাতে বাকিরা আর সুবিধা করতে পারেনি। আজ সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচ। মিরপুরে যদি এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে ট্রফি ইংলিশদের হাতেই সঁপে দিতে হবে।

ইংল্যান্ডের শক্ত বোলিং লাইনআপ সম্পর্কে জানাই ছিল। ব্যাটারদের মানসিক প্রস্তুতিটাও থাকতে হতো সেই রকম। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে শান্ত ছাড়া কোনো ব্যাটারই টিকে থাকার মানসিকতা দেখাতে পারেননি। লিটন কুমার দাস নড়বড়ে ছিলেন প্রথম থেকেই। ক্রিস ওকস, জোফরা আর্চার, মার্ক উডদের বলে স্বাভাবিক শট খেলতে পারছিলেন না টপঅর্ডাররা।

শান্ত ধীরে এবং ধরে খেলে ৮২ বলে করেন ৫৮ রান। ১৬তম ম্যাচে এসে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান বাঁহাতি এ ব্যাটার। সেখানে ইংলিশ মিডলঅর্ডার ব্যাটার ডেভিড মালান ১৬টি ওয়ানডে খেলে চার সেঞ্চুরি ও তিন হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৭৫৮ রান। জেসন রয়, জশ বাটলারদের সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যাটারদের তো তুলনা করাটাই বোকামি। মিডলঅর্ডারে মুশফিকুর রহিমের কাছে চাওয়া থাকে বড় স্কোর।

তাঁর ব্যাটেও ভাটার টান। শেষ সাত ইনিংসে একটি মাত্র হাফ সেঞ্চুরি উইকেটরক্ষক এ ব্যাটারের। শান্ত তিনে খেলায় সাকিবের ব্যাটিং অর্ডার নেমে গেছে পাঁচে। যে কিনা বিপিএল চলাকালেই হোম সিরিজের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে নিয়ে ব্যাটিং সেশন করেছেন। সেই সাকিবও টি২০ ব্যাটিং থেকে বের হতে পারেননি। প্রথম ওয়ানডেতে মঈন আলির বলের লাইন মিস করে যেভাবে বোল্ড হলেন, তাতে ব্যাটিংয়ে অধৈর্য্য সাকিবকে প্রকাশ করে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বিপিএলে রান না করলেও প্রথম ওয়ানডেতে শান্তর সঙ্গে পঞ্চাশ ছোঁয়া রানের জুটি গড়েন তিনি। তরুণ আফিফ যেন নিজের ব্যাটিং ছন্দটা হারিয়ে ফেলেছেন।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের আরেকটি দুর্বলতা হলো উইকেট পড়া ধরলে টপাটপ তিনটি নেই। গত ম্যাচেও মুশফিক, সাকিব, আফিফরা পর পর আউট হয়েছেন। নিল ম্যাকিঞ্জে থেকে জেমি সিডন্সের কেউই ব্যাটিংয়ের এই রোগ সারাতে পারেননি। এই ভুলগুলো শনাক্ত করে ব্যাটারদের আজ পরিকল্পিত ব্যাটিং করতে হবে। আফিফ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমকে রান করা ও ইনিংস গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তাঁরা ব্যর্থ হলে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন বিসর্জন যেতে পারে। শেষ ম্যাচে আফিফের জায়গায় দেখা যেতে পারে তৌহিদ হৃদয়কে। অলরাউন্ডার হওয়ায় সাকিব ও মিরাজ কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত। তামিম ইকবাল আর লিটন কুমার দাস অটো চয়েস। উন্নতির পথে থাকায় শান্তর ওপর সুদৃষ্টি থাকবে কোচের। পেছনের অবদানের কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার বাঁচাতেই মিডলঅর্ডারে রান করতে হবে ব্যাটারদের।