একটি সিরিজে ভালো করতে না পারলেই দল খারাপ হয়ে যায় না। ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ হেরে যাওয়ায় ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে, সেটা মনে হয় বলার সুযোগ নেই। দেশের মাটিতে টানা সাত সিরিজ জয়ের পর হেরেছে এই গ্রহের সেরা একটি দলের কাছে। সেদিক থেকে এই ফল খুব বেশি অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু দুশ্চিন্তার কারণ অন্য জায়গায়; বাংলাদেশ ব্যাটিং-বোলিং কোনোটাতেই ভালো করতে পারেনি। হঠাৎ করে দলের এই ছন্দপতন দুশ্চিন্তার কারণ। জাতীয় দল নির্বাচক থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও তাই মনে করেন। বিশ্বকাপের মতো বড় ইভেন্টে ভালো করতে হলে টপঅর্ডার এবং মিডলঅর্ডার ব্যাটারদের ধারাবাহিক রান করতে হবে।

এই সিরিজে দুই ম্যাচে ৪০৩ রান করেছে বাংলাদেশ। যেখানে ইংল্যান্ডের রান ৫৩৮। ডেভিড মালান ও জেসন রয় সেঞ্চুরি করেছেন দুই ম্যাচে। অধিনায়ক জশ বাটলারের হাফ সেঞ্চুরিতে রয়েছে আত্মবিশ্বাসের ছাপ। তাদের বোলিং ইউনিটের অতুলনীয়। অথচ এটা কিন্তু ইংল্যান্ডের সেরা দল নয়। বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে, ‘উপমহাদেশের দল আর টার্নিং উইকেটের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না এই ইংল্যান্ডকে। তাদের খেলোয়াড়রা আমাদের খেলোয়াড়দের তুলনায় অনেক বেশি এই কন্ডিশনের চাপে খেলে অভ্যস্ত। প্রত্যেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে। আইপিএল, পিএসএল, ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি২০ এবং বিপিএলেও খেলে। এই কন্ডিশন তাদের একেবারে মুখস্থ। আমাদের খেলোয়াড়দের চেয়েও অনেক বেশি খেলে ওরা এবং চাপ নিয়ে পারফর্ম করে। ব্যক্তিগত দিক থেকে ওরা আমাদের চেয়ে ভালো খেলোয়াড়। দলীয় শক্তি আমাদের চেয়ে অনেক ভালো। যে কোনো কন্ডিশনেও ওরা আমাদের চেয়ে বেটার। সুতরাং ওরা জিতবে এটা খুব স্বাভাবিক।’

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ভালো খেলবে, সেটা স্বাভাবিক এবং মাঠের পারফরম্যান্সেও তাই হচ্ছে। সমস্যা তাতে নয়, দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে, সেটা ভাবনায় ফেলেছে জাতীয় দল নির্বাচকদেরও।

হাবিবুল বাশার বলেন, ‘টপঅর্ডার রান পাচ্ছে না, যেটা চিন্তার কারণ। বড় স্কোর করতে হলে টপঅর্ডার এবং মিডল অর্ডারে রান লাগবে। দুই সিরিজ ধরে এই জায়গাতে ক্লিক করছে না। বিশ্বকাপে ভালো করতে চাইলে ৩০০ রান চেজ করার অভ্যাস করতে হবে।’ 

গত ডিসেম্বরে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জেতান মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাটিং দিয়ে। বোলাররাও ছন্দে ছিলেন তখন। এবার টেল এন্ডের ব্যাটাররা রান করতে না পারায় হারতে হয় টাইগারদের। এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘ব্যাটিংয়ে আমরা অধারাবাহিক। নিচের দিকে কেউ কেউ হয়তো অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো খেলে ফেলছে। অথবা আমাদের বোলিং অসাধারণ কিছু করছে। এটা কিন্তু আমাদের জেতার সূত্র। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেটা দেখা যায়নি, ফলে হারতে হয়েছে।’ 

ফাহিম মনে করেন জাতীয় দলে সিনিয়র ক্রিকেটারদের টিকে থাকার অনিশ্চয়তাও পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের এই উইকেটে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি। আমরা একটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। নতুন কোচ এসেছে, কে থাকবে, কে থাকবে না। দুই-চারজন বাদ দিলে অনেকেই চিন্তায় আছে– কারও ক্যারিয়ার এখানেই শেষ হয়ে যাবে কিনা। এসব চিন্তা নিয়ে ভালো খেলা খুব কঠিন। আমরা ওদিক থেকে পিছিয়ে আছি।’ সিরিজের শেষ ম্যাচটি হবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রামের উইকেট ব্যাটিংবান্ধব। যেটা ইংলিশদের অনুকূল। এবার তাই হোয়াইটওয়াশ হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই কাল শেষ ম্যাচে নামতে হবে বাংলাদেশকে।