- খেলা
- সেই চট্টগ্রাম এবং সেই ইংল্যান্ড
সেই চট্টগ্রাম এবং সেই ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টলায় টাইগারদের জয় উদযাপন। ছবি: এএফপি
ম্যাচটি মিরপুরেই হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অধিনায়ক তামিম ইকবালের অনুরোধ ছিল সিরিজের শেষ ম্যাচটি যেন চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। এটা এই কারণে নয় যে চট্টলার ছেলে বলে সাগরিকার ওপর বাড়তি টান, বরং তামিমের যুক্তি ছিল– যেহেতু বিশ্বকাপ এবার ভারতে এবং সেখানকার পিচের রং অন্তত চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কাছাকাছি; সে কারণে প্রস্তুতির একটা ব্যাপার মাথায় ছিল তামিমের।
সেই প্রস্তুতি কতটা হয়েছে, তা তিনি হয়তো বলবেন কখনও। তবে আপাতত তাঁর অনুমতি না নিয়েই বলে দেওয়া যায় এই ইংল্যান্ডকে হারানোর আত্মবিশ্বাস বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত তামিমদের তাতিয়ে রাখবে, তা সে যতই ইংলিশদের কাছে ২-১ সিরিজ হার হোক না কেন।
তামিম ওভাবে হয়তো কখনও ভেবেও দেখেননি। তবে ইতিহাস বলে মাস্টারদা সূর্য সেন আর প্রীতিলতার জন্মভিটায় ইংলিশরা অস্বস্তিতেই থাকে! তবে এ জয়েও একটি আক্ষেপ লুকিয়ে থাকবে চট্টগ্রামের হৃদয়ে। এমন একটি ম্যাচ হলো কিনা খালি গ্যালারির সামনে! বড্ড বেমানান ছিল সে দৃশ্য, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে যা কোনোভাবেই মেলানো যায় না।
মিরপুর বরাবরই অতিথিদের কাছে বধ্যভূমির মতো। সেখানে স্লো অ্যান্ড লো উইকেটে বিদেশিরা এসে খাবি খাবে– এই ধারণা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তাও প্রায় অনেক বছর হলো। কিন্তু চট্টগ্রামও যে ঘরের ছেলেদের হাত খুলে কিছু দিতে পারে, তা যেন ভুলেই গিয়েছিলেন অনেকে। অথচ এই মাঠেই ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিলেন সাকিবরা।

কাকতালীয়ভাবে সেটাও ছিল মার্চ মাসে। ১১ মার্চ সাকিবের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডকে ২২৫ রানে বেঁধে ফেলে ২ উইকেটের স্মরণীয় জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ইংল্যান্ডকে আরও একবার ওয়ানডেতে হার মানিয়েছিল ঘরের ছেলেরা। সেটাও প্রায় সাত বছর আগে ২০১৬ সালে। তবে সেটা ছিল মিরপুরে। ইংলিশদের সঙ্গে এ পর্যন্ত নিজেদের উঠানে ১৩ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে শেষ ওয়ানডের জয় দিয়ে মোট তিন জয় তামিমদের।
অন্যবারের চেয়ে এই জয়টির কিছুটা বাড়তি মাহাত্ম্য রয়েছে। এবারের ইংল্যান্ড দলটি ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’ এবং সে কথা সিরিজ শুরুর আগে বেশ গর্বের সঙ্গেই ঘোষণা দিয়েছিলেন মঈন আলী। এটাও বলেছিলেন মিরপুর কেন, বিশ্বের যে কোনো ভেন্যু, যে কোনো কন্ডিশনের জন্যই তৈরি থাকেন তাঁরা।
কিন্তু সোমবার সাগরিকার মাঠে কিন্তু হিমশিম খেতে হয়েছে ইংলিশদের। এমনিতে এখানকার বাইশ গজ বরাবরই তিনশর পথ দেখিয়ে থাকে। ব্যাটাররাই ম্যাচসেরার পুরস্কার নিয়ে নেন বেশি। তবে এটাও সত্য যে বুদ্ধিমান স্পিনার এবং পেসাররাও পিচ বুঝে সুবিধা আদায় করতে পারেন। এদিন তারই যেন ঝলক দেখালেন সাকিব, এবাদত, মিরাজ, তাইজুলরা।
এদিনের জয় আরও একটি কারণে অক্সিজেনের মতো কাজ করবে বাংলাদেশ দলে। ড্রেসিংরুমে গ্রুপিং নিয়ে সিরিজ শুরুর আগে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সাকিব-তামিমের কথা না বলা নিয়ে যে চর্চা চলেছিল, সেটা অন্তত কিছুদিন বন্ধ থাকবে। বন্ধুত্বের আবেগের চেয়েও মাঠের পেশাদারিত্ব যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর, সেটা তামিম ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন আর সাকিব তা প্রমাণ করে দিলেন মাঠে।
মন্তব্য করুন