টি২০ বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে চার মাস আগে। ওই বিশ্বকাপেই শেষ টি২০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এত লম্বা বিরতিতে ধারাবাহিকতা রাখা যে কোনো দলের জন্যই কঠিন। ক্রিকেটারদের পক্ষে ভালো করার মোটিভেশনও থাকে না। জাতীয় দল সতীর্থদের মাঝে সেই মোটিভেশন ছড়িয়ে দিতেই কি অনুশীলনে এমন প্রাণোচ্ছল সাকিবের আবির্ভাব?

সত্যি কথা বলতে, সাকিব তো এমনই। নিজে ছন্দে থাকেন আর নাই থাকেন, অন্যদের উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে জুড়ি নেই তাঁর। টি২০ বিশ্বকাপে নিজের দলটাকে আগলে রাখতে অলিখিত কারফিউ জারি করেছিলেন দলের ভেতরে। মিডিয়ায় কম কথা বলে খেলায় মনোযোগ দিতে বলেছিলেন ক্রিকেটারদের। কোচিং স্টাফের সদস্যদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছিলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজেও হয়তো একইভাবে দল চালাতে চেষ্টা করছেন তিনি।

বুধবার অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে নিজে না এসে পাঠালেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। নরমে গরমে এ যেন অন্য এক সাকিব। বাইরে বিতর্কের জন্ম দেন, আবার সেগুলো একপাশে সরিয়ে রেখে দলকে চাঙ্গা করেন। এর প্রমাণ দিতে খুব অতীতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এই চট্টগ্রামেই সোমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক দিনের ক্রিকেটের শেষ ম্যাচে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ায় বিসিবির স্মারক ক্রেস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণের অস্বীকৃতি জানিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন। এক দিনের ব্যবধানে ওসব ভুলে গিয়ে টি২০ সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন মাঠে এবং মাঠের বাইরের পরিকল্পনায়। কে না চাইবে এমন একজন নেতার জন্য নিজেকে ২২ গজে উজাড় করে দিতে।

সাকিব থাকলে কোচদেরও সেভাবে দল নিয়ে ভাবতে হয় না। কারণ, অধিনায়ক হিসেবে কোচদের কাজ সহজ করে দেন তিনি। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ব্যতিক্রম হলেও ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজে পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থাকায় সাকিবের ওপরই সব ছেড়ে দিয়েছেন। বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার তাই সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছেন দলে। গতকাল অনুশীলনের প্রথম দিকে প্রতিটি নেট ঘুরে ঘুরে দেখেন।

স্পিনারদের নেটে বলের ডেলিভারিও দেখান। পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন পেস ইউনিট নিয়ে। মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, রেজাউর রহমান রাজার থেকে কাকে কাকে বেছে নেবেন, সে কথাই হয়তো হয়ে থাকবে। এর পর সেন্টার উইকেটে নিজের ব্যাটিং সেশন শেষে সতীর্থদের সঙ্গে চার-ছক্কা মারার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠা। কে বলবে চট করে মেজাজ হারানো একজন ক্রিকেটার এই সাকিব।

সে যাই হোক, এই প্রাণবন্ত দল নিয়েই চট্টগ্রামে আজ বাজিমাত করতে চাইবে সাকিব বাহিনী। এক দিনের ক্রিকেট যেখানে শেষ হয়েছে, টি২০ এর শুরু সেখান থেকে। যেখান থেকে ইতিবাচক ফলের আশা কোচ চন্ডিকার। ক্রিকেটারদের সেভাবে জেগে ওঠার আহ্বানও তাঁর, ‘আমরা কী করতে পারি তা দেখাতে চাই। আমি আশা করছি, যেজন্য ক্রিকেটারদের নির্বাচন করা হয়েছে, তারা সেটাই করবে।বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পারফরম্যান্স করতে বলব।’

বিশ্বকাপের দল থেকে বেশ কয়েকজনকে বাদ দিয়ে এবারের টি২০ দল গড়া। বিপিএলের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে রনি তালুকদার ও শামিম পাটোয়ারীকে ফেরানো হয়েছে। রনির সম্পর্কে মোটামুটি জানাশোনা আছে কোচের। তাঁর সময়েই টি২০ অভিষেক হয়েছিল রনির। এক ম্যাচ খেলে বাদ পড়া এ ব্যাটার গত সাত বছরে অনেক পরিণত হয়েছেন। চন্দিকা চান রনিদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নেওয়ার।