- খেলা
- ১৭৭০০ কোটির লগ্নি কি বিফলে
১৭৭০০ কোটির লগ্নি কি বিফলে

ছবি: এএফপি
৫২ বছরের পথচলা একেবারে কমও নয়। কিন্তু পিএসজি নামে যে একটা ক্লাব আছে, সেটা অধিকাংশ লোকই জেনেছে মাত্র ক’বছর আগে। বারবার মালিকানা বদল, বড় বিনিয়োগ না পাওয়ায় খুঁড়িয়ে চলা দলটিকে বদলে দেওয়ার লক্ষ্যেই হাত বাড়িয়েছিল কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট। সময়টা ২০১১; যার নাটাই আবার নাসের আল খেলাইফির হাতে। তিনি মালিকানার আসনে বসার পর বস্তায় বস্তায় টাকা ঢেলেছেন।
তেলের পয়সায় দিব্যি ফুলেফেঁপে দিনে দিনে অর্থ ও তারকার দিক থেকে ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব বনে যায় পিএসজি। মেলে ব্র্যান্ডের নতুন ট্যাগ। একের পর এক খেলোয়াড় আসতে থাকে প্যারিসে। জনপ্রিয়তা বাড়ে ফ্রান্সের ঘরোয়া লিগেরও। বাকি সবখানে রঙের ছটা পড়লেও কাতারি এই মালিকপক্ষের স্বপ্নগুলো অধরাই থেকে যায়। সর্বশেষ বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছে পিএসজি।
অথচ এই দলটিকে অর্থের প্রলেপ দিয়ে আধুনিক করতে গেল এক যুগে প্রায় ১৭ হাজার ৭০০ কোটির টাকার বেশি শুধু খেলোয়াড় কিনতেই খরচ করেছেন খেলাইফি। বলতে গেলে লাভের অঙ্ক শূন্যের কোটায়। লিগ বা কাপের লড়াইয়ে বাকিদের খুব একটা যুদ্ধ করার অস্ত্র না থাকায়, সেগুলোয় দারুণভাবে ভাগ বসাতে পারছে পিএসজি। কিন্তু যে আশা নিয়ে কাতারি প্রতিষ্ঠানটি এসেছিল, সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফিটা আবারও তাদের অদেখা।
তাদের এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার পেছনে নিজেদের দায়টাও কম নয়। যেমনটা বলছেন ফুটবলের রথি-মহারথিরা। সব কিছু কি অর্থ দিয়ে হয়? উত্তর না। অনেক ক্লাব আরও কম অর্থ ব্যয় করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতছে। একটি নয় একাধিক ট্রফিও আছে তাদের শোকেসে। কিন্তু পিএসজির পরিকল্পনায় যে বড় খুঁত; তারা দলের বেটার কম্বিনেশনের কথা না ভেবে তারকাদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০১১ সালের পর এ পর্যন্ত যে কয়টি মৌসুম পড়েছে, দেখেশুনে সলিড বা প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় না কিনে তারকার পেছনে ছুটেছে অন্ধের মতো।
যদিও আগে সব ধরনের খেলোয়াড় কিনত দলটি কিন্তু কয়েক বছর ধরে তারা আক্রমণভাগে বেশি মন দেয়। যেটা তাদের পতনের আরেকটি বড় কারণ। যেখানে আগে মাঝমাঠে দারুণসব খেলোয়াড় ছিল, এখন সেখানে নামমাত্র কয়েকজন; যাঁরা টেনেটুনে দলটাকে চালাচ্ছে। অন্যদিকে এক আক্রমণেই তিন তারকা– লিওনেল মেসি, নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাঁদের মধ্যে মেসিকে কোনো ফি ছাড়া আনতে পারলেও বাকি দুজনের জন্য পিএসজির ব্যয় হয় ৪০২ মিলিয়ন ইউরো। শুধু তাই নয় এই দুজনকে প্রতি মাসে বেতন বাবদ যে পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে তারা, সেটা দিয়ে লিগ ওয়ানের সেকেন্ড ডিভিশনের ১১ জনের কমপক্ষে ছয় থেকে সাত জনের খরচ মেটানো যেত। সপ্তাহে ১১ কোটি টাকার বেশি যায় শুধু কিলিয়ানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। নেইমারের জন্য সেটা ৭ কোটির অধিক। সর্বশেষ মেসিকে এনে তারা। তাঁকে সপ্তাহে দিতে হয় সাড়ে ১২ কোটির মতো।
হাসিমুখে এত দিন পিএসজির মালিকপক্ষ দেদার খরচ করেছে শুধু একটা আশা নিয়ে। কিন্তু এখন কি আর সেটা হবে? মোটেও না। মনে হচ্ছে এবার ফুলস্টপ দেওয়ার কথা ভাবছে তারা। সেজন্য নতুন মৌসুমে একেবারে নতুন করে ক্লাবটিকে সাজাতে পারে দলটি। ছোট হয়ে আসতে পারে খরচের খাতা। এমনকি একাধিক তারকাকে প্যারিস ছাড়তে হতে পারে। সব কথার শেষ কথা, ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়া। যেটা আসলে পিএসজির নেই। আর যে ক্লাব যত ব্যয় করবে, তারা তত বেশি সফল হবে; সেটারও যে ভিত্তি নেই, পিএসজি তার বড় উদাহরণ।
মন্তব্য করুন