হীরা বলতে চোখের সামনে যে সাদা ধবধবে উজ্জ্বল বস্তু ভেসে ওঠে শুধু তাকেই বোঝায় না। এ ছাড়া অন্য রঙের হীরাও আছে। হীরা আপাতত মানুষের জানা সবচেয়ে কঠিন পদার্থ। শুধু কার্বন দিয়েই তৈরি হয় হীরা। প্রাকৃতিকভাবে এক টুকরো হীরা তৈরি হতে সময় লাগে কয়েক বিলিয়ন বছর! এ মূল্যবান বস্তু নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো–

দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বারলি শহর নর্দান ক্যাপ রাজ্যের রাজধানী। এই শহরের সবকিছুতেই যেন হীরা মিশে আছে। এখানেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরার খনি ‘দ্য কিম্বারলি মাইন’। যেখানে রেকর্ড পরিমাণ হীরা উত্তোলন করা হয়। এখন সেটি একটি পর্যটন কেন্দ্র। দক্ষিণ আফ্রিকায় যত পর্যটকের সমাগম হয়, তার একটা বড় অংশ আসে এই বিগ হোল বা দ্য কিম্বারলি মাইনকে কেন্দ্র করে। প্রায় ১০টি হীরার খনি রয়েছে আফ্রিকার এই দেশে; কিন্তু কিম্বারলি অন্যগুলোর চেয়ে ভিন্ন। রূপকথার গল্পের মতোই রহস্যে ঘেরা পৃথিবীর প্রথম এবং সবচেয়ে বড় এই হীরার খনি। কিম্বারলি এখনও ‘হীরার শহর’ নামেই পরিচিত।

কিম্বারলি খনিতে হীরা উত্তোলন শুরু হয় ১৮৭১ সালে, যা ১৯১৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত চলমান থাকে। এ সময়ে ৫০ হাজার খনি শ্রমিক মিলে যে গর্তটা খুঁড়েছেন, সেটি এখন পৃথিবীর বৃহত্তম মনুষ্যসৃষ্ট গর্তগুলোর অন্যতম। পরিত্যক্ত হওয়ার পর থেকে এর নাম হয়ে গেছে ‘দ্য বিগ হোল কিম্বারলি’। ৪২ একর জায়গাজুড়ে প্রায় ২১৫ মিটার (৭০৫ ফুট) গভীর এই খনি থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪ হাজার ৫৬৬ ক্যারেট বা ২ হাজার ৭২২ কিলোগ্রাম হীরা। খনিতে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অগণিত শ্রমিক, স্বজনহারাদের অশ্রুতে ভেসেছে কিম্বারলি।

১০০ বছরের বেশি সময় আগে ১৯০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা উত্তোলন করা হয়েছিল। ‘কালিনান’ নামের ওই হীরা ৩ হাজার ১০৬ ক্যারেটের ছিল। ২০১৬ সালে বতসোয়ানার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কারোয়ে থেকে ১ হাজার ১০৯ ক্যারেটের একটি হীরার সন্ধান মিলেছিল। টেনিস বলের সমান ওই হীরার নাম ‘লেসেদি লা রোনা’। ২০২১ সালে দেশটির একটি খনি থেকে ১ হাজার ৯৮ ক্যারেটের একটি হীরা উত্তোলন করা হয়েছে, যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম।

পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ২৬ হাজার কেজি খনিজ হীরা উত্তোলিত হয়, যার মূল্য প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। পৃথিবীর প্রায় ৫০ শতাংশ হীরা আফ্রিকাতেই পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, সর্বপ্রথম হীরা আবিষ্কার হয় ভারতবর্ষে।

মহাশূন্যে হীরা সৃষ্টি হয়, এ ধারণাটি নতুন। সম্প্রতি নাসার একদল গবেষক দেখাতে সক্ষম হন যে, গ্রহাণুতে হীরা সৃষ্টি হয়। মহাশূন্যে গ্রহাণুগুলো অনেক বেগে চলমান, যখন তারা পরস্পর ধাক্কা খায় তখন প্রচুর তাপ সৃষ্টি হয়; যার ফলে হীরা সৃষ্টি হয়। এই হীরাগুলোর ব্যাস কয়েক ন্যানোমিটার মাত্র। এ জন্য এগুলোকে ‘ন্যানোডায়মন্ড’ বলে।

হীরার মূল্য কেমন হবে, তা নির্ভর করে চারটি বিষয়ের ওপর– রং, কীভাবে কাটা হয়েছে, কতটা স্বচ্ছ প্রকৃতির এবং কত ক্যারেট ওজনের। ক্যারেট স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার একক। আর রত্নপাথরের ক্ষেত্রে ক্যারেট হচ্ছে ভরের একক। এ ক্ষেত্রে ১ ক্যারেট = .২ গ্রাম বা ২০০ মিলিগ্রাম।

হীরা কিন্তু খনি থেকে এত সুন্দর অবস্থায় পাওয়া যায় না। একে কেটে পলিশ করে এমন সুন্দর রূপ দেওয়া হয়।