সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্লান্টে এয়ার সেপারেশন কলামের ত্রুটি থেকেই ৪ মার্চ মারাত্মক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। এ ছাড়া এই দুর্ঘটনার পেছনে মালিকপক্ষের গাফিলতিও আছে। তবে এটি কোনো নাশকতা নয়। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন তুলে দেয় তদন্ত কমিটি। ওই প্রতিবেদনেই এসব বিষয় জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় বিস্ফোরণের কারণ ও সুপারিশ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। শুধু জানানো হয়, আগামী ২০ মার্চ চট্টগ্রামের সব অক্সিজেন প্লান্টের প্রতিনিধিদের নিয়ে করা হবে একটি কর্মশালা। সেখানে কারখানায় কী কী কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে, এর নির্দেশনা দেওয়া হবে।


সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, ‘অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম। শুধু তাই নয়, গত এক দশকে সারা পৃথিবীতে এ নজির চার-পাঁচটির বেশি নেই। এই বিস্ফোরণ খুবই বিরল। আমরা চেষ্টা করেছি তদন্ত কার্যক্রমে পুরো বিষয়টি তুলে আনতে। সেই সঙ্গে আমরা ৯টি সুপারিশ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এসব সুপারিশ সরকার অবশ্যই বাস্তবায়ন করবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কী কী করা যেতে পারে, তা আমরা সুপারিশ করেছি।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে রাকিব হাসান বলেন, ‘কিছু ঘাটতি, কিছু অবহেলা অবশ্যই ছিল। যার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে পুরো প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা পরে জানানো হবে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘সব অক্সিজেন প্লান্ট থেকে দু-তিনজন করে প্রতিনিধিকে নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেছি। কোন পর্যায়ে কোন ধরনের লোকবল কাজ করবে, সেগুলোসহ সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ যেসব কারখানা আছে সেগুলোতে দু-তিন দিনের মধ্যে পরিদর্শন শুরু হবে কয়েকটি টিমে ভাগ করে। সরকারি সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে পরিদর্শন হবে। বাকি সুপারিশগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো উদ্যোগ নেবে আশা করি। তদন্ত কমিটি একাধিকবার সরেজমিন টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি দেখে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। অনুমোদন পেলে দুর্ঘটনার কারণ, উৎস ও সুপারিশমালা পরে জানানো হবে।’

প্লান্টের পর ইউনিটেক্সের তুলার গুদামে আগুন লাগার ঘটনা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, যত্রতত্র শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। কোনো পুকুর বা জলাধার  নেই। অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনা হলে সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিনির্বাপণ করতে পারিনি। সব শিল্পে ওয়াটার রিজার্ভার থাকা উচিত।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় সীমা অক্সিকো অক্সিজেন লিমিটেডের পরিচালক পারভেজ উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করেছে শিল্প পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর জিইসি মোড় থেকে পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহাবুবর রহমান। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সীতাকুণ্ডে অভিযান চালাচ্ছিল বলে জানা গেছে।

বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অক্সিজেন কারখানাটির মালিক তিন ভাইসহ ১৬ জনকে আসামি করে মামলা হয়। তিন ভাই হলেন– সীমা অক্সিকো অক্সিজেন লিমিটেডের এমডি মামুন উদ্দীন এবং দুই পরিচালক আশরাফ উদ্দীন ও পারভেজ উদ্দীন। নিহত শ্রমিক মো. সালাহউদ্দিনের স্ত্রী রোজিনা ৬ মার্চ সীতাকুণ্ড থানায় এ মামলা করেন।