- খেলা
- ক্যারিয়ার শেষে শাহিন-বুমরাহদের কাতারে থাকতে চান তাসকিন
ক্যারিয়ার শেষে শাহিন-বুমরাহদের কাতারে থাকতে চান তাসকিন
-samakal-641464dd6e815.jpg)
‘ভাঙি বা মরি লাল-সবুজের জার্সি গায়ে পরবোই।’ দল থেকে বাদ পড়া, ইনজুরিতে ছিটকে গিয়ে যখন ক্যারিয়ার উল্টো রথে ছুটছিল তখন ওই মন্ত্র নিয়েছিলেন বাংলাদেশের পেস বোলিং সেনসেশন তাসকিন আহমেদ। ওই মন্ত্রে তিনি শুধু জাতীয় দলে ফেরেননি, সময়ের সেরা পেস বোলারদের সঙ্গে উচ্চারিত তার নাম।
তাসকিন চান ক্যারিয়ার শেষে শাহিন শাহ আফ্রিদি, জাসপ্রিত বুমরাহ, কাগিসু রাবাদা, জস হ্যাজলউডদের সঙ্গে যেন তার নামও উচ্চারিত হয়। সংবাদ মাধ্যম ক্রিকইনফোকে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে মনের বাতায়ন খুলে দিয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ জাতীয় দলে কামব্যাকের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দারুণ সময় কাটছে আপনার?
তাসকিন: কামব্যাকের পর বোলিং, ফিল্ডিং এবং ব্যাটিং মিলিয়ে পরিপূর্ণ টিম ম্যান হওয়ার চেষ্টা করেছি। সবসময় সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে সব সময় সেটা হয়নি, এটাও সত্য। নিজের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে যে, প্রসেসে থাকলে যেকোন জায়গায় যেকোন দলের বিপক্ষে ভালো করবো।
প্রশ্ন: মার্ক উড সম্প্রতি বলেছেন, আপনার বোলিংয়ে ইংল্যান্ড দল মুগ্ধ হয়েছে। তারা আপনার বোলিং লেন্থ থেকে ধারণা নিয়েছে?
তাসকিন: পেস বোলিংয়ে মার্ক উড অন্যতম সেরা। আমি ঠিক তার জায়গায় থাকতে চাই। সে যেটা বলেছে, সেটা আমার কর্তব্য।
প্রশ্ন: সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক স্পেল করেছেন আপনি। উইকেট না পেলেও আপনার সেই চার ওভারে আটকে ছিল ভারত।
তাসকিন: এটা দলীয় খেলা, ওই কন্ডিশনে দলের পরিকল্পনাতেই বোলিং করেছি। উইকেট আসলে বোলিংয়ের মাপকাঠি নয়। মাঝে মধ্যে ভালো বোলিং করতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত তিন-চার উইকেট হয়ে যায়। সবটাই পরিকল্পনার ফসল। দিন শেষে আমার নিজেকেই জিজ্ঞেস করতে হবে, আমি মাঠে ১১০% দিয়েছি কিনা, আমার পরিকল্পনা কেমন ছিল, কোন ক্ষেত্রে আমার উন্নতি করা দরকার।
প্রশ্ন: তিন বছর আগে কি ভেবেছিলেন বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের নেতা হতে পারবেন?
তাসকিন: যার হাতে বল আছে সেই বোলিংয়ের নেতা। আমি এখানে আমার সতীর্থদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি না। আমরা পরিবারের মত। আমরা যদি একত্রে নিজেদের উন্নতি করতে পারি, সেটা হবে প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি।
আমি বিশ্বের শীর্ষ পেসারদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। আমি নিজেকে শারীরিক, মানসিক এবং দক্ষতার ভিত্তিতে প্রস্তুত করছি।
প্রশ্ন: ইদানীং ধারাভাষ্যকার ও প্রতিপক্ষরা বলছেন আপনি প্রতিপক্ষের জন্য হুমকিস্বরুপ। ব্যাটাররা কি আপনাকে তাদের জন্য হুমকি মনে করছে?
তাসকিন: মাঠে যখন আমার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করি, আমি ব্যাটারকে দেখি। সে যত ভালোই হোক না কেন, নিজেকে তার প্রশ্ন করতেই হবে। তারা হয়তো ভালো শট খেলবে, যেদিন আমার দিন খারাপ যাবে। তবে আমি ছাড় দিতে রাজি না, যেটা আমার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
প্রশ্ন: জাতীয় দলে কামব্যাকের এই দুই বছরে আপনার স্মরণীয় মুহূর্তগুলো কি?
তাসকিন: বিশ্বকাপের দুই ম্যাচে ম্যাচসেরা ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার পাওয়া। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ১৯১ রানের সেই জুটি। আরেকটি স্মরণীয় মুহূর্ত ভারতের বিপক্ষে টি-২০ বিশ্বকাপের সেই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটি।
প্রশ্ন: দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট শিকারের গল্প বলুন।
তাসকিন: ওয়ানডে সিরিজের সময় আমি আইপিলের লখনৌ সুপার জায়ান্টস থেকে ডাক পেয়েছিলাম। দক্ষিণ আফ্রিকার ওই সফরে টেস্ট সিরিজের কারণে আমি এনওসি পাইনি।
সবারই আইপিএল খেলার স্বপ্ন থাকে। সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য আমার একটু মন খারাপও ছিল। আমি নিজেকে বলেছিলাম যে জাতীয় দলে খেলার দিকে আমার মনোযোগ রাখতে হবে।
তৃতীয় ওয়ানডের আগের রাতে আমি অতিরিক্ত চিন্তা করছিলাম। ভাবলাম, আমি যদি পারফর্ম করতে না পারি, তাহলে লোকে ভাববে আমি এনওসি না পাওয়াতে খারাপ খেলেছি। আমি যদি ভালো করে থাকি তাহলে আমি সন্তুষ্ট থাকব যে আমি এই পরিস্থিতিতে ভালো করেছি। শেষ পর্যন্ত আমরা সেই ম্যাচ জিতেছি ও আমি পাঁচ উইকেট পেয়েছি।
প্রশ্ন: আপনার পছন্দের ফরম্যাট কোনটি?
তাসকিন: সত্যি বলতে, আমি পছন্দের ফরম্যাট ঠিক করতে পারবো না। ফরম্যাটের মধ্যে সামঞ্জস্য করা কিছুটা কঠিন। আপনি যদি তিনটি ফরম্যাটেই পারফর্ম করেন, তাহলে আপনি কিছু করেছেন। আমি ওরকম খেলোয়াড় হতে চাই।
প্রশ্ন: বিশ্বমানের বোলারদের মধ্যে কার মতো হতে চান?
তাসকিন: গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি এবং ওয়াসিম আকরামের মতো কিংবদন্তিরা আমার হিরো। শাহিন শাহ আফ্রিদি, কাগিসো রাবাদা, জাসপ্রিত বুমরাহ এবং জশ হ্যাজেলউডের মতো বোলাররা তাদের ক্যারিয়ার শেষে কিংবদন্তি হয়ে উঠবে। আমি তাদের মত হয়ে উঠতে চাই। আমি যদি সেই স্তরে পৌঁছতে না পারি তবে কঠোর পরিশ্রম করার কোনও মানে নেই। আমাকে তাদের লেভেলে নিয়ে যেতে হবে।
মন্তব্য করুন