মাঠের বাইরে হাজারটা প্রশ্ন, নেট দুনিয়ায় ভাইরাল বহু ছবি, গণমাধ্যমের কতশত বিশ্লেষণ– সাকিবের এক ‘দুবাইযাত্রা’ নিয়ে গত কয়দিন ধরে রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড। কিন্তু সাকিব আল হাসানকে কি আর এসবে পায়! সব সয়ে গতকাল ঠিকই সিলেটে ব্যাট হাতে দেখালেন ঝলক, খেললেন ৯৩ রানের দারুণ এক ইনিংস।

কীভাবে পারেন সাকিব? এত চাপ মাথায় নিয়ে এমন সাবলীল ব্যাটিং করতে। ঠিক এক দিন আগেও যে ছিলেন সমালোচকদের ভিন্ন ধারায়। কেন দুবাই গেলেন, আবার গেলেও কী হয়েছে কিংবা সাকিব কি জেনেবুঝে গিয়েছেন– এমন কত কথা। অর্থাৎ কেউ পক্ষে কেউ বিপক্ষে। সাকিব এসব শুনেও বোধহয় বিন্দুমাত্র কানে নিলেন না। বুধবার দুবাইয়ে জুয়েলারির শোরুম উদ্বোধন করেই পরদিন রাতে ফেরেন দেশে। এর পর ঘুম থেকে উঠে সোজা আয়ারল্যান্ড সিরিজের ভেন্যু সিলেটে। সেখানে পা দিতেই অন্য এক সাকিব। এত এত সমালোচনা যাঁকে নিয়ে, তিনি কিনা হাসিমুখে ফুরফুরে মেজাজে সারলেন অনুশীলন। এর পর গতকাল ব্যাট হাতে নেমেই সবাইকে করলেন অবাক। তাঁর নামের পাশে সাত রানের জন্য সেঞ্চুরিটা লেখা হলো না। তাতে কী! যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণ ঠিকই আলো ছড়িয়েছেন। তাঁর প্রতিটি বাউন্ডারির সঙ্গে যেন ধুয়েমুছে গেল সব সমালোচনা। সিলেটের গ্যালারিতে উঠল ‘সাকিব সাকিব ধ্বনি’। দেশের ক্রিকেটপাড়ায় হলো তাঁর লড়াকু ইনিংস নিয়ে কথা, তাঁর ৭ হাজার রানের মাইলফলকের গল্প।

এই না হলে সাকিব। মাঠের বাইরে কে কী বলল, কি হলো– এসব নিয়ে একদমই চিন্তা না করে বাংলাদেশ দলকে দিলেন নিজের সেরাটা। আগেও অনেকবার বলেছেন সমালোচনা হজম করাটা তাঁর অভ্যাস হয়ে গেছে। ২২ গজে যেমন অলরাউন্ডার, এর বাইরেও তেমনই। শুধু শোরুম কেন, বিজ্ঞাপনী কাজ, বন্ধুদের নিয়ে বাড়িতে ছুটে যাওয়া, নানামুখী ব্যবসায় বিনিয়োগ করা কিংবা স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে দিনে ম্যাচ খেলে রাতে আবার আমেরিকার বিমানে ওঠা– এসব সামলে ব্যাট-বলের যুদ্ধটাও তাঁকে চালিয়ে যেতে হয়। গত কয়েক দিন ধরে যেভাবে পারফর্ম করে আসছেন, শনিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দলীয় সংগ্রহ ৩০০ পেরোতে রাখেন বড় অবদান। নিজে ব্যক্তিগতভাবে গড়েন একাধিক রেকর্ড। এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুততম সময়ে একই সঙ্গে ৭ হাজার রান ও ৩০০ বা তার বেশি উইকেট নেওয়া প্রথম খেলোয়াড় এখন সাকিব। যেখানে লঙ্কান সনাথ জয়সুরিয়া ও পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির নামও আছে। কিন্তু তাঁরা সাকিবের চেয়ে অনেক বেশি ম্যাচ খরচ করে এই রেকর্ড গড়েছিলেন। এর পর বাংলাদেশিদের মধ্যে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রান করা দ্বিতীয় ব্যাটার সাকিব। তাঁর আগে এই ঘরটায় কেবল তামিম ইকবালের পা পড়েছিল।

এমন প্রাপ্তির মালা পরার কয়দিন আগেও দলনেতা সাকিবকে নিয়ে বাহবা দিয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। কেননা আইরিশদের মুখোমুখি হওয়ার আগে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি২০তে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। যে অর্জনের অন্যতম সারথি সাকিব। সেই তিন ম্যাচে বল হাতে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। তার আগে ওয়ানডে সিরিজেও খারাপ করেননি।

ইংলিশদের বিপক্ষে তিন ওডিআইতে ৬ উইকেটের পাশাপাশি করেন ১৪১ রান। তার চেয়ে বড় দিক, চার-ছক্কার ফরম্যাটে সাকিবের নিখুঁত অধিনায়কত্বই বাংলাদেশকে নিয়ে যায় প্রাপ্তির শিখরে। আসলেই এই সাকিব মাঠে অন্যরকম।

এদিকে সাকিবকে সামনে রেখে কেউ ফায়দা হাসিল করতে চাইলে বোর্ড তাঁর পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস। সিলেটে শনিবার বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম ওয়ানডের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান বলেন, ‘অবশ্যই … সাকিব শুধু বিসিবির সম্পদ নয়, আমাদের দেশের সম্পদ। সুতরাং তার দিকে খেয়াল রাখা আমাদের দায়িত্ব।’