- খেলা
- ঘরের মাঠে পিছিয়ে পড়ছেন তামিম
ঘরের মাঠে পিছিয়ে পড়ছেন তামিম

ছবি: বিসিবি
খেলোয়াড়দের জীবনে কখনও বৃহস্পতি থাকে তুঙ্গে, কখনও শনির গ্রাসে। ক্যারিয়ারে এই বাস্তবতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়নি এমন খেলোয়াড় খুব কমই আছেন। তবে খারাপ সময়কে ধৈর্য আর একাগ্রতা দিয়ে যাঁরা জয় করতে পারেন, তাঁদের পায়েই লুটোপুটি খায় সাফল্য। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এ মুহূর্তে সেই খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে তামিম ইকবালকে।
এককথায় সময়ের নিষ্ঠুর চোরাবালিতে পড়েছেন বাঁহাতি এ ওপেনার। রানের জন্য অধীর হয়েও রান পাচ্ছেন না। স্বভাব বিরুদ্ধ মন্থর ব্যাটিং করে থিতু হওয়ার পর আউট হওয়া যেন নিয়ম হয়ে গেছে তাঁর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি না হয় একটু কঠিন ছিল, রান না করা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ‘পুচকে’ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও যে আফসোস করে কাটাতে হবে, তা কি কল্পনা করেছিলেন? আসলে ঘরই (হোম ভেন্যু) তাঁর মন ভেঙে দিয়েছে। যে সিরিজগুলোতে লম্বা সময় ধরেই ভালো খেলছেন না তিনি। দেশের মাটিতে তামিমের পিছিয়ে পড়ার প্রমাণ মিলবে পরিসংখ্যানের পাতায়ও। শেষ ১১ ইনিংসে একটি মাত্র পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস তাঁর। তাও ১০ ইনিংস আগে, ২০২১ সালে।
জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড বা স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাঝারি মানের দলের খেলোয়াড়দের সামনে সব সময় সুযোগ হয়ে আসে। বেশিরভাগ ক্রিকেটারই কাজে লাগাতে চেষ্টা করেন কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে। বিশ্বাস না হলে, আইরিশদের বিপক্ষে গত দুই ম্যাচের স্কোরকার্ডে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন একঝলক। টপঅর্ডার থেকে মিডলঅর্ডারে রানের ছড়াছড়ি। রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলা চলছে ইনিংসে। অতীত ছাপিয়ে গিয়েছিল প্রথম ম্যাচে ৩৩৮ রান করায়। দু’দিনের ব্যবধানে সে রেকর্ডও ভেঙে গেছে সোমবারের পরিত্যক্ত ম্যাচে ৩৪৯ রানের ইনিংসে।
লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম– সবাই রান পেলেন। সাকিবের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দিলেন মুশফিক। এমন ম্যাচেও ভাগ্যের শিঁকে ছিঁড়েনি তামিমের। প্রথম ম্যাচে ৩ রানে হলেন ক্যাচ আউট, দ্বিতীয় ম্যাচে ২৩ রানে রানআউট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩, ৩৫ ও ১১ রানে উইকেট হারান। অথচ এই ব্যাটপ্যাচ থেকে বের হতে চেষ্টার কমতি রাখেননি ৩৪ বছর বয়সী এ ব্যাটার। চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে একান্তে নেট সেশন করেছেন। হাথুরুসিংহে মেন্টর হয়ে টিপস দিয়ে যাচ্ছেন আসার পর থেকেই। তবুও গেরো খোলেনি।
২০২০ সালে এই সিলেটেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রানের বান দেখিয়েছিল তামিমের ব্যাট। জোড়া সেঞ্চুরির রোমাঞ্চ উপভোগ করেছেন সমর্থকরা। করোনাকালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও পিঠাপিঠি অর্ধশতক। তিনিই কিনা একুশের শ্রীলঙ্কা সিরিজে ছন্দ হারাতে থাকেন। জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তানের সঙ্গেও রানের খরায়। বিশ্বকাপের বছরেও সে রাহুর গ্রাস। অথচ অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে তাঁকে। ছন্দহীন ক্রিকেটারের জন্য যেটা সত্যই কঠিন কাজ।
এই খারাপ সময় থেকে তামিম যত দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারবেন, ততই মঙ্গল। হতে পারে কাল আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচেই মারকাটারি ব্যাটিং করবেন তামিম। কিন্তু রান পেতে দেরি হয়ে গেলে কোচের আস্থার জায়গা থেকে দূরে সরে যেতে থাকবেন অধিনায়ক। কারণ, হাথুরুসিংহের মন স্টিভ রোডসের মতো কোমল নয়। দলের ভালোর জন্য যে কোনো খেলোয়াড়কে বিসর্জন দিতে পারেন বাস্তববাদী এ কোচ। এই দুশ্চিন্তামুক্ত হতে গত দুই বছরে ঘরের মাঠে পিছিয়ে পড়া তামিম হয়তো শেষ ম্যাচে জেগে ওঠার ডাকে সাড়া দিতে পারেন।
মন্তব্য করুন