পুরস্কার মঞ্চে তামিম ইকবাল মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই বুক ফুলিয়ে বললেন– ‘এখন থেকে আমরাও গর্ব করে বলতে পারব, আমাদের পেসাররাও ১০ উইকেট নিতে পারে।’ গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সত্যিই গর্ব করার মতো ঘটনা ঘটে গেছে। তিন পেসার মিলে ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে অলআউট করে দেন ১০১ রানে। প্রতিপক্ষকে সবচেয়ে কম রানে বেঁধে ফেলার রেকর্ড নয় এটি। ১৪ বছর আগে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে ৪৪ রানে বেঁধে ফেলার কৃতিত্বও দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের সে ম্যাচ আর এই ম্যাচের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হলো বোলিংয়ে। জিম্বাবুয়েকে ৪৪ রানে গুটিয়ে দেওয়ার কারিগরের তিনজনই বাঁহাতি স্পিনার– আব্দুর রাজ্জাক, এনামুল হক জুনিয়র ও সাকিব আল হাসান। স্পিন স্বর্গে স্পিনারদের শাসন থাকবে সেটা স্বাভাবিক। কালের পরিক্রমায় সেই বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট এখন পেসনির্ভর। ১৪০ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার গতি তোলা পেসারের জাতীয় দলের পুলে থাকা প্রায় সবাই। হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন সেই গতির ঝড় তুলে গতকাল লন্ডভন্ড করে দেন আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং।

পেসারদের ১০ উইকেট নেওয়ার ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছেও ১০ উইকেটে। রেকর্ড গড়া রানের দ্বিতীয় ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় স্বাগতিকরা সিরিজের সমাপ্তি টেনেছে ২-০ ব্যবধানে।

বিশ্বকাপ মাথায় রেখে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে স্পোর্টিং উইকেটে খেলার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। সিলেটে তিনটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয় ভালো উইকেটে। তবে শেষ ম্যাচের উইকেটে বেশি সুবিধা ছিল পেসারদের। টস জিতে আয়ারল্যান্ড ব্যাটিং নিয়ে ম্যাচ তুলে দেয় বাংলাদেশের হাতে। হাসান মাহমুদ পঞ্চম ওভারে স্টেফেন দোহেনিকে আউট করে ব্রেক থ্রু দেন। নবম ওভারের প্রথম বলেই আবারও জুটি ভেঙে তর্জনী তুলে ধরা হাসানের। নিখুঁত লেন্থে বল করায় এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন পল স্টার্লিং। তিন বলের ব্যবধানে হাসানের তৃতীয় শিকার হ্যারি টেকটর। ডানহাতি এ পেসারের জোড়া আঘাতে সফরকারী দলের ব্যাটিং লাইনআপের কোমর ভেঙে যায়। ঠিক পরের ওভারে তাসকিন বালবির্নিকে আউট করায় আইরিশরা বিপর্যস্ত। ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে দলকে টেনে তোলার যে চেষ্টা লরকান টাকার আর কার্টিস ক্যাম্ফার করছিলেন, তাও স্থায়ীত্ব পায়নি ১৯তম ওভারে এবাদতের জোড়া উইকেট শিকারে। সময় খারাপ হলে যা হয়, ২২তম ওভারে তাসকিনও জোড়া উইকেট নেন। হাসান দুই ওভারে ক্যাম্ফার ও গ্রাহামকে আউট করলে আইরিশরা গুটিয়ে যায় ২৮.১ ওভারে।

সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি হাসানেরই ছিল। প্রথমবারের মতো এক দিনের ক্রিকেট পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। আগের সেরা অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন উইকেট প্রাপ্তি মিরপুরে। মাঝের ছয় ম্যাচে বোলিং ভালো করলেও উল্লেখ করার মতো উইকেট শিকার করা হয়নি। লিস্ট-এ ক্রিকেটেও পাঁচ উইকেট না থাকা হাসান ম্যাচসেরা হলেন গতকাল। ৮.১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেওয়া তাঁর। তাসকিন ২৬ রানে তিনটি, এবাদত ২৯ রানে দুটি উইকেট নেন।

বাংলাদেশ ১০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট হারায়নি। তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাসের হার না মানা ১০২ রানের জুটি ম্যাচ শেষ করে ১৩.১ ওভারে। বাংলাদেশের জন্য এটিও একটি রেকর্ড। রেকর্ডের ম্যাচে লিটন ৩৮ বলে ৫০ আর তামিম ৪১ বলে ৪১ রান করেন। এক দিনের ক্রিকেটে ১০ উইকেটে প্রথম জয় হলেও ৯ উইকেটে পাঁচ পাঁচটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। কেনিয়া, জিম্বাবুয়েকে সেই ২০০৬ সালেই হারিয়েছে ৯ উইকেটে। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ৯ উইকেটে জিতেছে। এ থেকেই বোঝা যায় এক দিনের ক্রিকেটে বড় দলের কাতারে উন্নীত হচ্ছে বাংলাদেশ।

বিষয় : পেস দাপটে ১০ উইকেটে জয়ের রেকর্ড আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়

মন্তব্য করুন