ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

খারাপ খেললে জবাবদিহিতা নেই

অযথা ফাউল - সর্বনাশ ডেকে আনছে দেশের ফুটবলে

খারাপ খেললে জবাবদিহিতা নেই

ছবি: ফাইল

সাখাওয়াত হোসেন জয়

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩ | ০৬:৩৩

ম্যাচের পর সিশেলস ফুটবলারদের ওপর আক্রমণ করেন তপু বর্মণ। তাঁকে দেখে ডাগআউট থেকে ছুটে গিয়ে বিশ্বনাথ ঘোষও অতিথি দলের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান। সিলেটে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে সিশেলসের কাছে ১-০ গোলে হারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মারামারির এই ভিডিওটি শেয়ার করে অনেকেই লিখেছেন, ‘খেলায় না পারলেও মারামারিতে ওস্তাদ ফুটবলাররা।’ এ ঘটনায় রিপোর্ট জমা দিয়েছেন ম্যাচ কমিশনার।

বাংলাদেশের ফুটবলারদের মেজাজ হারানোর এই দৃশ্যটা নতুন নয়। মাথা গরম করে অহেতুক ফাউল করে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলকে ডোবানোর অনেক নজির আছে। অতীতে বিশ্বনাথ ঘোষ-সাদ উদ্দিনরা ম্যাচ টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে পারেননি। তাঁদের হাস্যকর ভুলে সর্বনাশ হয়েছে জাতীয় দলের। এক সাদ উদ্দিনই তিন ম্যাচে ডুবিয়েছেন দলকে।

সর্বশেষ ২৮ মার্চ সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সিশেলসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে মারাত্মক ভুল করে বসেন তিনি। ৬১ মিনিটে বক্সে লাফিয়ে ওঠা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ড্যারিল লুইসের মাথায় লাথি মেরে বসেন সাদ। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পট কিক কাজে লাগান দলটির সেরা তারকা মাইকেল মানসিয়ানে। এই গোলেই গড়ে দেয় ব্যবধান। ১৯৯ র‍্যাঙ্কিংয়ে থাকা সিশেলসের কাছে লজ্জার হার বাংলাদেশের। ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর মালেতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ এগিয়ে ১-০ গোলে। জিতলেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে। কিন্তু ৮৮ মিনিটে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে বক্সের মধ্যে অহেতুক ফেলে দেন সাদ। স্পট কিক থেকে গোল করে সমতা আনে নেপাল; ছিটকে যায় বাংলাদেশ। দুই বছর আগে মাহিন্দা রাজাপাকসে ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের ৯০ মিনিটে হাত দিয়ে বল থামান সাদ উদ্দিন। ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ বাংলাদেশ।

শুধু সাদ উদ্দিনই নয়, বিশ্বনাথও বেশ কয়েকবার দলকে ডুবিয়েছেন। মাঠে নেমে মেজাজ হারিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের অহেতুক ফাউল করে দলের জন্য বিপদ ডেকে এনেছেন। গত সাফে ভারতের বিপক্ষে ৫৪ মিনিটে লাল কার্ড দেখেছিলেন তিনি। মাঠে নেমে ইচ্ছাকৃতভাবে ফাউল করলে অনেক দেশেই ফুটবলারদের শাস্তির আওতায় আনে। খেলোয়াড়রা মাঠে কী করছেন, তা নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

শাস্তি দেওয়া হয়, জরিমানা করা হয়। ফুটবলাররা একের পর এক ভুল করে সর্বনাশ ডেকে আনলেও তা দেখেও যেন দেখে না বাফুফে ন্যাশনাল টিমস কমিটি। আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও কমিটির কাছে কোনো জবাব নেয় না। অন্যান্য দেশের মতো শাস্তি এবং জবাবদিহিতার প্রথা বাংলাদেশে চালু নেই বলেই ফুটবলাররা নিজের ইচ্ছামতো খেলছেন।

মাঠে বসে সিশেলসের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের ম্যাচ পর্যবেক্ষণ করেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বাফুফে সদস্য ইলিয়াস হোসেন। সেই ম্যাচে সাদ উদ্দিনের ফাউল নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ তিনি, ‘এই ফুটবলারদের দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে ম্যাচিউরিটির অভাব। কোন ম্যাচে কীভাবে খেলতে হবে, ম্যাচের টেম্পারমেন্ট কি, তা যেন তারা বুঝে না। আসলে আমার কাছে মনে হয়েছে খেলোয়াড়রা যেন হাজিরা দিতে মাঠে নামে।’

অন্য সবার মতো ইলিয়াস হোসেনও মনে করেন জবাবদিহিতা না থাকায় ফুটবলাররা যা ইচ্ছা তা করছেন। এখনই সময় জাতীয় দল নিয়ে বড় পরিকল্পনা করার, ‘আপনি দেখেন ক্রিকেটে ম্যাচের পর কিন্তু বিশ্লেষণ হয়। আমি মনে করি, ফুটবল জিতুক বা হারুক, এটা নিয়ে ম্যাচের পরই আলোচনা করা উচিত। ভালো-মন্দ বিচার করে ফুটবলারদের সতর্ক করা উচিত। খেলোয়াড়দের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। তা না হলে আপনি ফল পাবেন না।’

আরও পড়ুন

×