আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে সবশেষ লিগ শিরোপা জিতেছিল ন্যাপোলি। তবে সেটি ছিল আজ থেকে প্রায় ৩৩ বছর আগে। দীর্ঘদিন পরে এবার লিগ শিরোপার হাত ছোঁয়া দূরত্বে রয়েছে ইতালিয়ান ক্লাবটি। আজকের জয়ই পারে সে দূরত্ব ঘোচাতে।

ন্যাপোলির রঙে মুখোশ পরা একজন বিক্রেতা। ছবি- এএফপি

এমন একটা উপলক্ষ কি সাদামাটাভাবে উদযাপন করা যায়? মোটেই না। তাই তো সালেরনিতানার বিপক্ষে সম্ভাব্য শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি এক দিন পিছিয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববারে নিয়ে যাওয়ায় সুবিধাই হয়েছে ন্যাপোলির সমর্থকদের জন্য। জমকালো উৎসবে মেতে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।

ন্যাপোলির নীলে সেজেছে নেপলস। ছবি- এএফপি

অবশ্য আজ একটি সমীকরণ মিললেই কেবল ন্যাপোলির শিরোপা নিশ্চিত হবে। ঘরের মাঠে সালেরনিতানার বিপক্ষে ন্যাপোলিকে জিততে হবে এবং দ্বিতীয় স্থানে ল্যাজিওকে ড্র বা হারতে হবে ইন্টার মিলানের কাছে। ন্যাপোলির জন্য সুবিধা হলো ইন্টারের মাঠ স্যানসিরোতে ল্যাজিওর ম্যাচটি শেষ হওয়ার আধাঘণ্টা পর শুরু হবে তাদের ম্যাচ। তাই পরিস্থিতি বুঝে উৎসবে মেতে ওঠার যথেষ্ট সময় তারা হাতে পাবে। আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় সালেরনিতানার মুখোমুখি হবে ন্যাপোলি।

নেপলসে উৎসবের আমেজ। ছবি- এএফপি

ন্যাপোলি-সালেরনিতানার ম্যাচটা আসলে হওয়ার কথা ছিল গতকাল। তবে সমর্থকদের বাঁধনহারা উৎসবের শঙ্কায় নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে ম্যাচটা পেছানো হয়েছে এক দিন। গতকাল ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের এই শহরে ছিল কমিক বইয়ের বড় সম্মেলন। এ জন্য এমনিতেই জনসমাগম বেড়েছে। ন্যাপোলি চ্যাম্পিয়ন হলে শহরের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার শঙ্কায় ম্যাচটা এক দিন পেছানো হয়েছে। সিরি ‘এ’ কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, উদিনেসের বিপক্ষে ন্যাপোলির পরের ম্যাচটি ২ মে মঙ্গলবারের পরিবর্তে ৪ মে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। রোববার যদি সমীকরণ না মেলে তাহলে বৃহস্পতিবার ন্যাপোলির ঘরে শিরোপা ওঠার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে চিত্রিত করা গ্রাফিতির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে পথচারীরা। ছবি- এএফপি

৩৩ বছর অপেক্ষার অবসান করে শিরোপার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে থাকায় দেশটিতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। ইতোমধ্যে নেপলসে শিরোপা উদযাপন শুরু হয়ে গেছে। শহরটির পথে পথে উড়ছে ন্যাপোলির ক্লাবের পতাকা। তৈরি করা হয়েছে ভাস্কর্য। দেয়ালগুলোতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডোনার ছবি। একটি পোস্টারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ন্যাপোলির বর্তমান দলের বড় দুই তারকা নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ভিক্টর ওসিমহেন ও জর্জিয়ান উইঙ্গার খভিচার হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন ম্যারাডোনা।

ন্যাপোলির ফ্ল্যাগ কিনছেন এক সমর্থক। ছবি- এএফপি

ন্যাপোলির এত আবেগে ভাসার কারণ রয়েছে। সর্বশেষ তারা শিরোপা জিতেছিল সেই ১৯৯০ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে। আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরের দ্বিতীয় বাড়ি হলো এই ন্যাপোলি। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। তাকে সম্মান জানাতে নিজেদের স্টেডিয়ামের নাম ম্যারাডোনার নামে করেছে ন্যাপোলি। ম্যারাডোনার স্মৃতিবিজড়িত সেই স্টেডিয়ামে উৎসব হবে, আবেগে ভেসে যাওয়াটা তো খুবই স্বাভাবিক।

নেপলসের পথে পথে এখন ম্যারাডোনা। ছবি- এএফপি

গত কয়েক মৌসুম ধরেই বেশ ভালো করছে ন্যাপোলি। কিন্তু শিরোপা জিততে পারছিল না। এর মধ্যে গত মৌসুমে ক্লাবের অন্যতম স্তম্ভ সেনেগালিজ ডিফেন্ডার খালিদু কুলেবালিকে চেলসির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নেয়নি ন্যাপোলির সমর্থকরা। ক্লাব ম্যানেজমেন্টের ওপর বিরক্ত হয়ে মাত্র হাজারখানেক সমর্থক মৌসুমের শুরুতে ‘সিজন টিকিট’ কেনেন। সমর্থকদের এই ক্ষোভটাকেই কাজে লাগান ন্যাপোলির কোচ লুসিয়ানো স্প্যালেত্তি। 

ম্যারাডোনার সঙ্গে পেলেকেও স্মরণ করছেন ন্যাপোলির সমর্থকেরা। ছবি- এএফপি

এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রুশ ক্লাব রুবিন কাজান থেকে চুক্তি বাতিল করে ন্যাপোলিতে চলে আসেন জর্জিয়ান উইঙ্গার খভিচা কভারতসখেলিয়া। তাকে পেয়ে জ্বলে ওঠেন ২০২০ সালে লিলে থেকে আসা নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ভিক্টর ওসিমহেন। এই জুটির সামনে কোনো ক্লাব দাঁড়াতেই পারছেন না। বিশেষ করে ওসিমহেন দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন তিনি। ৩৩ বছর আগে ম্যারাডোনা একা হাতে ন্যাপোলিকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন। এবার ওসিমহেন-খভিচা জুটি শিরোপার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন ন্যাপোলিকে। এখন কেবল আনুষ্ঠানিকতার পালা।