- খেলা
- বিতর্কে জেরবার, পদত্যাগের গণদাবি
বিতর্কে জেরবার, পদত্যাগের গণদাবি

নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধির কাজে কোনো দেশের সরকার হস্তক্ষেপ করলে সে দেশের ফুটবলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে ফিফা– এই আইনকে ঢাল করেই প্রবল সমালোচনার পরও মুখে হাসি লেগে থাকে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের। কিন্তু ফিফার আইনে এটাও বলা আছে, কেউ ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগ করতে পারে।
গত কয়েক সপ্তাহ এবং বিশেষ করে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বাবা-মা তুলে সালাউদ্দিনের ঔদ্বত্যপূর্ণ বক্তব্যের পর চারদিক থেকে দাবি উঠেছে– নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে তাঁর। সমাজের শ্রেণিবৈষম্য ও বিদ্বেষের বিষ বাষ্প ছড়িয়েছেন তিনি। এই দায় নিয়ে তাঁর অবিলম্বে বাফুফে থেকে পদত্যাগের জোর দাবি জানিয়েছে সাংবাদিক সংগঠনগুলো। এরই মধ্যে গতকাল বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) কাজী সালাউদ্দিনের অনারারি (সম্মানসূচক) সদস্যপদ বাতিল করে তাঁকে বহিষ্কার করেছে। ২০১২ সালে তাঁকে অনারারি সদস্যপদ দিয়েছিল ক্রীড়া সাংবাদিকদের এই সংগঠন। বাফুফে সূত্রের খবর, চারদিক থেকে পদত্যাগের চাপে বেকায়দায় পড়ে গেছেন সালাউদ্দিন।
মঙ্গলবার কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং শেষে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে সহকর্মীদের কাছে যে ভাষায় সাংবাদিকদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন, তাতে ফুঁসে উঠেছে পুরো সাংবাদিক সমাজ। বুধবার সারাদিনই বাফুফে সভাপতির মন্তব্য নিয়ে আলোচনায় বসে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির (বিএসপিএ) নেতৃবৃন্দ।
সব সংগঠনই বিবৃতিতে কাজী সালাউদ্দিনের কুরুচিপূর্ণ, বিদ্বেষপ্রসূত ও ঔদ্বত্যপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বোচ্চ পদ থেকে তাঁকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো। সম্মানজনক চেয়ারে বসে বেফাঁস মন্তব্য করা ছাড়াও দেশে ও দেশের বাইরে ফুটবলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার পর সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতির পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
ফুটবল মাঠে তিনি ছিলেন শিল্পী; কিন্তু সংগঠক হিসেবে পুরোপুরি ব্যর্থ। সমালোচনা সহ্য করতে না পারা তাঁর চরিত্রেরই অংশ। মুখ ফসকে অনেক সময় মিডিয়ার ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন। গত পরশু আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে সালাউদ্দিন ফুটিয়ে তুললেন তাঁর আসল চরিত্র, ‘সাংবাদিকদের বাফুফে ভবনে ঢুকতে হলে তাদের এবং তাদের বাপের জুতা পরা ছবি দিতে হবে।’ তিনি যার কানে কানে কথাগুলো বলেছেন সেই কাজী নাবিল আহমেদও জবাবটা দিয়েছেন আরও কুরুচিপূর্ণ ভাষায়, ‘আমার রিকোয়েস্ট হচ্ছে অন্য। কে আন্ডারওয়্যার পরে বড় হয়েছে আর কে হয়নি সেটাও দেখতে হবে।’ বাফুফে সহসভাপতি নাবিলের এমন মন্তব্যের একটি অডিও ক্লিপ ইতোমধ্যে ছড়িয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
যদিও গতকাল এমন মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন কাজী নাবিল। তবে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েও পার পাচ্ছেন না সালাউদ্দিন। সালাউদ্দিনের মন্তব্য ক্রীড়াঙ্গন পেরিয়ে নাগরিক জীবনেও স্পর্শ করেছে। অনেকেই বাফুফে সভাপতির বাজে মন্তব্যে তাঁর মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। আর সালাউদ্দিনদের ডোপ টেস্ট করার দাবি জানিয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। গতকাল সকালে বাফুফে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকে আবেদন করেন এ আইনজীবী। সেখানে সালাউদ্দিনের মন্তব্য প্রসঙ্গে সুমন বলেন, ‘পুলিশ যেমন মাদক শনাক্তে ডোপ টেস্টের ব্যবহার করে, তেমন ফুটবল ফেডারেশনে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করে সালাউদ্দিনদের ডোপ টেস্ট করানো উচিত।’
মন্তব্য করুন