-samakal-645c6107a9a65.jpg)
ক্রীড়াসামগ্রী ক্রয়, ফুটবল কেনা, বিমান টিকিট ক্রয়, ঘাস কাটার মেশিন ক্রয় এবং ফিফার অর্থের অপব্যবহার নিয়ে ৫১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে জড়িয়ে আছে আবু নাঈম সোহাগের নাম। এসব অভিযোগের কোনো কিছু কি অস্বীকার করার আছে তাঁর? এসব অনিয়মের পেছনে আর কে কে জড়িত? সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে সোহাগের উত্তর ছিল একটাই– ‘নো কমেন্টস, টাইম টু সি।’ বরং ‘বড় গলা’ ছিল এই বলে, ফিফা তাঁকে সবচেয়ে কম শাস্তিটাই দিয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি নির্দোষ হয়ে ফুটবলেই ফিরে আসবেন।
একসময় ক্যামেরার নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি। অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে ফিফা কর্তৃক দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ার এক মাস ধরে বাফুফের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দেখা যায়নি। নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে জানতে ফোন করলেও তাঁর উত্তর মেলেনি। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে আসেন সোহাগ। নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাফুফে কর্তারা যেভাবে তাঁর কাঁধে দায় চাপিয়েছেন, তাতে মনে হয়েছে, বড় কোনো বোমা ফাটাবেন তিনি। কিন্তু কোথায় কী, ‘অনেক বিষয়ের মন্তব্য এখন করা যাচ্ছে না। আমি আপিল করেছি। এখন মন্তব্য করলে ফিফা আবার বলবে, তুমি কেন কথা বলেছ।’ বলে যেন গা বাঁচালেন তিনি।
যদি কিছুই না বলতে চান, তাহলে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেওয়ার কারণ কী? ‘সময় হলে সব বলে দেব। আমি আশা করি, নিজের সম্মান, বাংলাদেশের সম্মান ফিরিয়ে আনতে পারব। আমি নিজেকে নির্দোষ দাবি করি। নির্দোষ প্রমাণের জন্যই তো আমি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে আপিল করেছি। আসলে ফুটবলের জন্য তো আমি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ফুটবলকে ভালোবেসেই বাফুফেতে কাজ করেছি। অনেক রাত অবধি কাজ করেছি সেই ভালোবাসা থেকেই। চেষ্টা করেছি স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে, দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে। আশা করি, আবারও ফুটবলে ফিরে আসতে পারব।’
কিন্তু দেশের ফুটবলের কোনো কর্তাকে ফিফা থেকে নিষিদ্ধ করাটা তো বাংলাদেশের জন্য বড় লজ্জা! ৫ মে সুইজারল্যান্ডের কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টসে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন সোহাগ। আপিল করায় এখনই জরিমানা দিতে হচ্ছে না তাঁকে। পাশে বসা আইনজীবী আজমামুল হোসাইন ফিফার অভিযোগ নিয়ে একে একে সব উত্তর দেন। তাঁর দাবি, ফিফার তদন্ত ভুল! ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ক্রীড়া আদালতে আপিলের নিষ্পত্তি হবে এবং সেখানে সোহাগ নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে দাবি আইনজীবীর।
ফিফার মতো একটা বড় সংস্থার তদন্ত নিয়েই যেখানে প্রশ্ন, সেখানে বুঝতে বাকি নেই কতটা অনিয়ম ফুটবল ফেডারেশনের চেয়ারে বসে করেছেন সোহাগ। একই সঙ্গে তাঁর অতীত ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেই ফিফা নাকি অবস্থান পরিবর্তন করে সর্বনিম্ন দুই বছরের শাস্তি দিয়েছে, ‘১৬ ফেব্রুয়ারি জুরিখে আমরা দুটি লাগেজে করে সব ডকুমেন্ট নিয়ে গেছি। এত ডকুমেন্ট কেন লাগে, তা গিয়ে বুঝেছি। সশরীরে উপস্থিত থেকে শুনানি করাতেই ফিফা আমাকে তাদের সর্বনিম্ন শাস্তি দিয়েছে।’
সুইজারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে মামলা চালানো অনেক ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের একজন আইনজীবী ছাড়াও সেখানে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন সোহাগ। সেই টাকার উৎস প্রসঙ্গে জানার কৌতূহল অনেকেরই ছিল। সোহাগের হয়ে উত্তরটা অন্যভাবে দিলেন আইনজীবী, ‘বলতে পারেন ডিসকাউন্ট দিয়েছি। সেখানকারটা (বিদেশি আইনজীবী) বলতে পারব না।’
কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টসে যে আইনজীবী, তিনি তো আর ডিসকাউন্ট দেবেন না। বাফুফের একজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে পাঁচতারকা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন এবং ক্রীড়া আদালতে আপিল করার পর অনেকেরই মনে প্রশ্ন উঠেছে– সোহাগের অর্থের উৎস কী? সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে দেশের ফুটবল নিয়ে কাজ করেছেন। তবে নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা কোনো দায় নেননি। আনঅফিসিয়ালি এর উত্তরটা গোমড়া মুখেই দিয়েছেন সোহাগ, ‘তারা তো আমাকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। আমি চাইলেও বাফুফেতে থাকতে পারতাম না। অনেক কিছু আছে, যেটা আপনারা বোঝেন। আমি কিছু বলব না।’
মন্তব্য করুন