শেষ বাঁশি বাজতেই হুড়মুড় করে সিটি সমর্থকরা মাঠের ভেতর ঢুকে পড়েন। বানের জলের মতো মানুষ আসতে দেখে উদযাপন রেখে পড়িমরি করে সাজঘরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান হালান্ড-আলভারেজরা। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে মাঠ থেকে সবাইকে সরিয়ে মঞ্চ তৈরি করে পেপ গার্দিওলার নেতৃত্বে ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড়দের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। এর পর শুরু হয় উদযাপন। ম্যানচেস্টার শহরের অলিগলিতে রাতভর বিয়ারের বন্যা বইয়ে গেলেও শিষ্যদের খুব একটা লাগামছাড়া হতে দেননি গার্দিওলা। ট্রেবলের দৌড়ে রয়েছেন যে তাঁরা! এরই মধ্যে গার্দিওলার মূল লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। এই শিরোপা ছাড়া নাকি সবকিছু অপূর্ণ রয়ে যাবে!

গত ছয় মৌসুমে এটা সিটির পঞ্চম শিরোপা। ইংল্যান্ডের ক্লাব ফুটবলে এতটা দাপট খুব একটা দেখা যায়নি। এ জন্য ফুটবলবোদ্ধারা গার্দিওলার এই দলকে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা দলের মর্যাদাও দিচ্ছেন। কিন্তু এসব প্রশংসায় মোটেও মজছেন না স্প্যানিশ এ কোচ। ১০ জুন ইস্তাম্বুলের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলেই কেবল উৎসব করবেন তিনি, ‘অসাধারণ কিছু করেছি বলেই মনে হচ্ছে। তবে সর্বকালের সেরা দলগুলোর একটি হতে হলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে হবে। না হলে এটা অপূর্ণ রয়ে যাবে।’ 

সে সঙ্গে এফএ কাপ জিতে ট্রেবল পূর্ণ করতে পারলে তো ইতিহাস হয়ে যাবে। ইংল্যান্ডের ফুটবল ইতিহাসে ট্রেবল জয়ের কীর্তি রয়েছে কেবল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের, ১৯৯৯ সালে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের দল গড়েছিল সে ইতিহাস। তবে গার্দিওলার জন্য কিন্তু এটা নতুন কিছু নয়। ২০০৮-০৯ সালে বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি। ইউরোপের ৯টি ক্লাব ট্রেবল জিতলেও কোনো কোচ দু’বার এ কীর্তি গড়তে পারেননি। 

গার্দিওলার সামনে সে বিরল রেকর্ডের হাতছানি। বার্সার সেই ‘ড্রিম টিমের’ পেছনে ছিল লা মেসিয়া। লিওনেল মেসি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভির মতো বিশ্বসেরা প্রতিভারা একসঙ্গে বেরিয়ে এসেছিল বার্সার ওই একাডেমি থেকে। সিটিতে তো লা মেসিয়া নেই। এখানে কীভাবে অদম্য একটি দল গড়ে তুললেন গার্দিওলা? আজকের সিটিও আসলে সেই বার্সার দুই মস্তিষ্কের ফসল। বার্সার সাবেক অর্থ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেরান সোরিয়ানোকে সিটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ২০১২ সালে। এর পর তিনি গার্দিওলাকে নিয়ে আসেন। 

২০০৮ সালে আবুধাবি শেখ মনসুর সিটি কেনার পরই একঝাঁক তারকা এনে দলের চেহারা বদলে দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে গার্দিওলা কোচের দায়িত্ব নিয়ে সিটিকে আরও শক্তিশালী করেন। সোরিয়ানো-গার্দিওলা জুটি সিটির দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করেন। সে অনুযায়ী ঠান্ডা মাথায় লম্বা পরিকল্পনা নিয়ে টার্গেট করে খেলোয়াড় রিক্রুটে নামেন। দলবদলের বাজারে তাঁরা কারও জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েননি, তাড়াহুড়ো করে খেলোয়াড় কেনেননি। এই যেমন চলতি মৌসুমে চেলসি দলবদলে খরচ করেছে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো। বিশ্বকাপ শেষ হতে না হতেই তারা ১২১ মিলিয়ন ইউরোতে কিনে এনজো ফার্নান্দেজকে। তাও এনজো বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য, ইউক্রেনের মিখালো মুডরিককে কিনেছে ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে। এত ব্যয়ের পর চেলসি পয়েন্ট টেবিলের ১২ নম্বরে আছে। 

অথচ আর্লিং হালান্ডের মতো বিশ্ব কাঁপানো স্ট্রাইকারকে সিটি ২০২২ সালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে মাত্র ৬০ মিলিয়ন ইউরোতে দলে ভিড়িয়েছে। বিশ্বকাপে ঝড় তোলা আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার জুলিয়ান আলভারেজকে রিভার প্লেট থেকে দলে ভেড়ায় মাত্র ১৭ মিলিয়ন ইউরোতে। ভাবা যায়! আলভারেজ তখন তারকা হয়ে ওঠেননি, রিভার প্লেটে নিয়মিত সুযোগ পান না, তখনই তাঁকে কিনে ফেলেছিল সিটি। কেনার পর তাঁকে রিভার প্লেটেই ধারে দিয়ে রেখেছিল।