
গোলাম রব্বানী ছোটন
আগে দু-একবার আকারে-ইঙ্গিতে চাকরি ছাড়ার কথা বলেছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটন। ইংল্যান্ড থেকে আসা স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলি যে তাঁকে কয়েকবার অপমান করেছেন, সেটাও জানিয়েছিলেন বাফুফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। কিন্তু ছোটনের মনের মধ্যে চলতে থাকা অস্থিরতা আমলে নেননি সেই কর্তাব্যক্তিরা। অবশেষে শুক্রবার মিডিয়াতেই ঘোষণা দেন, নারী দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে আর থাকছেন না তিনি। এর পরই নড়েচড়ে বসেন বাফুফে কর্তারা। গতকাল দুপুরে বাফুফের উইমেন উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ ফোন দেন ছোটনকে। কাজে ফেরার অনুরোধ জানান। আলোচনার জন্য বাফুফে ভবনেও আসতে বলেন। কিন্তু তিনি যে আর ফিরবেন না সেটা কিরণকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন। যদিও বাফুফে সূত্রের খবর, অভিমান ভেঙে ছোটনের কাজে ফিরে আসার ব্যাপার ভীষণভাবে আশাবাদী অনেকেই। বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার তাঁদেরই একজন। ‘ছোটন ভাই আগেও এমন করেছেন, ফিরেও এসেছেন। আশা করছি, এবারও ফিরবেন।’ ছোটনকে অভিমান ভেঙে ফিরে আসার জন্য গতকাল তিনিও ফোন দিয়েছিলেন। আশাবাদি কিরণও। ‘ আমাদের মধ্যে আলোচনা চলমান রয়েছে। আশা করি তিনি সিদ্বান্ত পরিবর্তন করে আবারও কোচিংয়ে ফিরবেন। এদিন কিরণ নিশ্চিত করেন জুলাইয়ে মঙ্গোলিয়া নারী দল এসে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে।
‘কিরণ আপা আমাকে ফোন করেছিলেন। অনুরোধ করেছেন কাজে ফিরে আসার। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। কিরণ আপার প্রতি আমার সম্মান ও ভালোবাসা আগের অবস্থানেই রয়েছে। কিন্তু আমি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছি, আমি আর কাজে ফিরছি না।’ কাজপাগল মানুষটি গতকাল বিশ্রামেই ছিলেন। ১৭ বছর ধরে যেখানে চাকরি করছেন, সেখানে কাল ছোটনকে ছাড়া প্রথমবারের মতো অনুশীলনে নামেন মেয়েরা। ছোটনের দীর্ঘদিনের সহকারী মাহবুবুর রহমান লিটুর নেতৃত্বে এদিন অনুশীলন করেন মেয়েরা। ‘আমি না থাকলেও মেয়েদের কোচিং করার মতো যোগ্য লোক আছে। আমি তো একজন সাধারণ কোচ। সাধারণ মানুষ।’ অভিমান ঝরে পড়ছিল ছোটনের গলায়। আসলে এর আগে বহুবার নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নারী ফুটবল দলের সাফল্যের পেছনে ছোটনের চেয়ে পল স্মলির ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন। অথচ এই পল স্মলিই বয়সভিত্তিক ছেলেদের দলের দায়িত্ব নিয়ে দু্বার অসফল ছিলেন।
এপ্রিল আর মে– দুই মাসের বেতন বকেয়া ছোটনের। অথচ পল স্মলিকে আরও ৫ হাজার ইউএস ডলার বাড়ানোর চিন্তা করছে বাফুফে। চাকরি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে পল স্মলি এখন বেতন বাড়ানোর দরকষাকষি করছেন বাফুফের সঙ্গে। একই দলের কোচিং স্টাফে এতটা বৈষম্য মেনে নিতে পারেননি ছোটন। এরই মধ্যে ঢাকার একটি ক্লাব প্রায় আড়াই গুণ বেশি বেতনে ছোটনকে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। সেই ক্লাবের সঙ্গে ছোটনের চুক্তি হয়েছে কিনা জানা যায়নি, তবে বাফুফের অনেক কর্মকর্তা ও স্টাফই মনে করছেন– ছোটন তাঁর প্রিয়া ছাত্রীদের ছেড়ে থাকতে পারবেন না। তাঁর হাতেই তিলে তিলে জাতীয় দল, বয়সভিত্তিক দল গড়ে উঠেছে আজ প্রায় এক যুগ ধরে। বাফুফে থেকে ছোটনের বেতন বাড়ানোর কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। যদিও আগের দিন মিডিয়াতে নারী দলের কোচ তাঁর ক্লান্তির কথাই বলেছিলেন। সে কারণে গতকাল মাহফুজা আক্তার কিরণও বলেছিলেন, প্রয়োজনে আরও ৫-৬ দিন ছুটি কাটিয়ে আপনি মাঠে ফিরুন। বাফুফে চাইছে, ছোটনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে। তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তাঁর অভিযোগ আর অনুযোগগুলোর ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু মিডিয়াকে গতকালও ছোটন জানিয়েছেন, তিনি সিদ্ধান্ত থেকে সরবেন না। কাজী সালাউদ্দিন অনুরোধ করলেও না। ‘সভাপতি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, কিন্তু আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। আমি আর কাজ করতে চাই না। সেই অবস্থানেই থাকব।’ ছোটন জানান, কাল তিনি বাফুফেতে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।
মন্তব্য করুন