- খেলা
- খেলার চেয়ে বিতর্ক ছিল বেশি পিএসজির
খেলার চেয়ে বিতর্ক ছিল বেশি পিএসজির

লিগ ওয়ান জয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলেও ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের চলতি মৌসুমটা মোটেও ভালো কাটেনি। বাজে পারফরম্যান্সের সঙ্গে নানা বিতর্কে পুরো মৌসুমই নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। বাংলাদেশ সময় গতকাল গভীর রাতে স্ট্রাসবার্গের বিপক্ষে ড্র করলেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের। তবে লিগ ওয়ান জয় তো পিএসজির জন্য বড় কোনো বিষয় নয়। গত ১০ বছরে ৮ বার তারা জিতেছে এ শিরোপা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ব্যর্থ হয়েছে, লিগ কাপও জিততে পারেনি। পিএসজির এ ব্যর্থতার জন্য বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে বিখ্যাত ওয়েবসাইট ‘গোল ডটকম’। সমকাল পাঠকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তুলে ধরা হলো।
১. মেসির ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা
বিশ্বকাপ জয় করে মেসি ফেরার পরই যেন সবকিছু বদলাতে শুরু করে। আবার বার্সেলোনার ফিরে যাবেন, নাকি সৌদি ক্লাবের সঙ্গে মাল্টিমিলিয়ন চুক্তি করবেন– সে নিয়ে চলছে জল্পনা। তবে চলতি মৌসুম শেষে মেসি যে আর পিএসজিতে থাকছেন না, সেটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। একটি ম্যাচ হারার পর ক্লাবকে না জানিয়ে সৌদি আরব ভ্রমণে যান তিনি। এ জন্য ক্লাব তাঁকে শাস্তি দেয়, সমর্থকরা তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগানও দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মেসির থাকা-না থাকা নিয়ে বছরের প্রথম থেকেই ফুটবল থেকে মনোযোগ কিছুটা সরে যায় পিএসজির।
২. আবারও নেইমারের চোট
নেইমারের গোড়ালিতে চোট পাওয়াটা যেন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে গেছে। গত কয়েক মৌসুমের মতো এবারও তিনি গোড়ালিতে চোট পেয়েছেন। এবার অবশ্য তিনি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। তাই লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেছেন। অথচ এবার দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন নেইমার। লিগ ওয়ানে ২০ গোলের পাশাপাশি ২০টি অ্যাসিস্টও করেছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। তবে ৩০ বছর বয়সী এ তারকা অস্ত্রোপচারের পর আগের ধার ফিরে পাবেন কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সে সঙ্গে কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বও রয়েছে। এমবাপ্পে পিএসজিতে নেইমারকে চান না। এসব কারণে নেইমারের পিএসজি ছাড়াও একপ্রকার নিশ্চিত।
৩. দুর্বল রক্ষণভাগ
আক্রমণভাগে মেসি, নেইমার, এমবাপ্পের মতো বিশ্বসেরাদের সমাহার থাকলেও পিএসজির সাফল্যের পথে মূল অন্তরায় রক্ষণ। মার্কিনহোস, প্রেসনেল কিমপেম্বে, সার্জিও রামোস ও নর্দি মুকেইলের মতো চারজন নির্ভরযোগ্য সেন্টার-ব্যাক আছে তাদের। কিন্তু চোটের কারণে কিমপেম্বে ও মুকেইলের মৌসুম আগেভাগেই শেষ হয়ে যায়। মার্কিনহোসের সঙ্গে রামোসের জুটি ঠিক জমে ওঠেনি। বিশেষ করে বয়স হয়ে যাওয়ায় আগের সেই গতি নেই রামোসের। যে কারণে মৌসুমের শেষ দিকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার দানিলো পেরেরাকে কিছু ম্যাচে সেন্টার-ব্যাক হিসেবে খেলিয়েছেন কোচ।
৪. অনির্ভরযোগ্য দোনোরুমা
অনেক আশা-ভরসা নিয়ে জিয়ানলুইজি দোনোরুমাকে এসি মিলান থেকে উড়িয়ে এনেছিল পিএসজি। তবে পিএসজিতে আসার পর অসাধারণ অনেক সেভ করলেও বেশ কিছু শিশুতোষ ভুল করেছেন। ২০২২ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোতে তাঁর দুটি বড় ভুলের জন্যই রিয়াল মাদ্রিদ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। চলতি বছর বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে তাঁর ভুলের জন্যই কিংসলে কোম্যান গোল করে ম্যাচ থেকে পিএসজিকে ছিটকে দিয়েছিলেন।
৫. উগ্র সমর্থকগোষ্ঠী
কাতারি ধনকুবেররা পিএসজি কিনে নিয়েছেন ১০ বছর হলো। এই মালিকপক্ষের সঙ্গে সব সময়ই পিএসজি আলট্রাদের ঝামেলা লেগেই থাকে। বিনিয়োগকারীরা ব্যবসার জন্য ক্লাবের বাণিজ্যিকীকরণ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য প্যারিসের এ ক্লাবটিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এটা আল্ট্রারা মানতে পারেনি। প্রতি বছরই তারা নানা বিষয়ে অসন্তুষ্টির কথা তুলে ধরছে। চলতি বছর সমর্থকদের আচরণ সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। মার্চে মেসিকে মাঠে দুয়োধ্বনি দেয়। মেসির সৌদি আবর ভ্রমণ নিয়েও তারা স্টেডিয়ামের সামনে ঝামেলা করেছিল। নেইমারের বাড়িতে গিয়েও তারা আক্রমণ করেছিল।
৬. কোচ গালতিয়েরের চাপে থাকা
ক্রিস্টোফার গালতিয়ের। যখন ২০২১ সালে পিএসজিকে টপকে লিলেকে লিগ ওয়ান জিতিয়েছিলেন তিনি। দারুণ কৌশলী এ কোচ পিএসজিতে এসে যেন খেই হারিয়ে ফেলেন। অবশ্য শুরুতে তাঁর ৩-৪-৩ ফরমেশন বেশ কাজে লেগেছিল। মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে ত্রয়ীর সেরাটা বের করে আনছিল এ ফরমেশন। কিন্তু রক্ষণভাগের ক’জন চোটে পড়লে ফরমেশন অকার্যকর হতে থাকে।
৭. লুইস ক্যাম্পোসের খবরদারি
পিএসজিতে এক অদ্ভুত চরিত্র লুইস ক্যাম্পোস। প্রতিভা খুঁজে বের করার বিষয়ে তাঁর সুনাম আছে। গালতিয়েরের সঙ্গে জুটি বেঁধে তাঁর সফলতার ইতিহাসও আছে। কিন্তু পিএসজিতে তাঁকে বাড়তি ক্ষমতা দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর নন, কোচের স্পোর্টিং কনসালট্যান্ট হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তবে তিনি খেলোয়াড়দের ওপর খবরদারি করেন। এ কারণে অনেকেই তাঁর ওপর বিরক্ত বলে ফরাসি মিডিয়ায় রিপোর্ট বেরিয়েছে।
৮. কিলিয়ান সেন্ট জার্মেই
গুজব বেরিয়ে ছিল, রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তি নাকি করেই ফেলেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। অনেক নাটকের পর তাঁর রিয়াল যাওয়া আটকে ফরাসি তারকার সঙ্গে নতুন চুক্তি করে পিএসজি। নতুন চুক্তিতে বিশাল পারিশ্রমিকের পাশাপাশি ক্লাবের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশীদারও বানানো হয়েছে তাঁকে। এর মধ্যে একটি হলো খেলোয়াড় কেনা ও দলবদলে তাঁর জোরালো ভূমিকা থাকবে। এমবাপ্পেকে এই ক্ষমতা দিয়ে আসলে দলটির বাকি খেলোয়াড়দের অপমানই করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন