রোববার সন্ধ্যায় পর্দা নেমেছে প্রিমিয়ার লিগের ২০২২-২৩ মৌসুমের। অধিকাংশ সময় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান দখলে রেখেও শেষ দিকে এসে খেই হারিয়ে ফেলে আর্সেনাল। শিরোপা জিতে নেয় ম্যানচেস্টার সিটি। মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবেরদের ক্লাবগুলো এবার ভালোই করেছে। আবুধাবি গ্রুপের সিটি হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছে। সৌদি রাজপরিবারের মালিকানায় প্রথম মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নিয়েছে নিউক্যসেল ইউনাইটেড। তবে চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচের পরও সাফল্যের দেখা পায়নি চেলসি। মৌসুম শেষে এখন হিসাবের পালা। গোলডটকম বের করেছে তেমনি কিছু জয়ী ও বিজয়ী। সমকাল পাঠকদের জন্য এর কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরেছেন নাজমুল হক নোবেল

বোহেলে চেলসির দুর্দশা: প্রিমিয়ার লিগে ব্যর্থদের তালিকা করলে চেলসি মালিক টড বোহেল থাকবেন সবার ওপরে। অকাতরে অর্থ ঢেলে নিজেকে রীতিমতো হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধনকুবের। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে শুধু বড় বড় তারকা নিয়ে এসেছেন, কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ স্কোয়াড তৈরি করেননি। ফলে এত খরচ করেও ব্যর্থ হয়েছে ক্লাবটি। প্রিমিয়ার লিগ জামানায় এবারই সবচেয়ে কম পয়েন্ট (৪৪) সংগ্রহ করে চেলসি। ১২ নম্বর হয়েছে তারা। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে তিনজন কোচ বদল করেছেন বোহেল। মাত্র ছয় ম্যাচ পর আচমকা টমাস টুখেলকে বরখাস্ত করেন তিনি। ব্রাইটনকে সফলতা এনে দেওয়া গ্রাহাম পোটারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা হয়। তিনিও যখন সুবিধা করতে পারলেন না, মৌসুমের শেষ দিকে তাঁকে বরখাস্ত করে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বোদ্ধাদের মতে, ফুটবল সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকার কারণেই বোহেল এমনটি করেছেন।

আহা আর্সেনাল: আর্সেনালের জন্যই খারাপই লেগেছে সবার। মৌসুমের অধিকাংশ সময় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেও শেষ দিকে সবকিছু ভজকট পাকিয়ে ফেলে তারা। অনেকের মধ্যে, অভিজ্ঞতার অভাবেই আর্সেনাল শেষ দিকে চাপটা সহ্য করতে পারেনি। মিকেল আর্তেতা তরুণদের দিয়েই জাগরণটা ঘটাতে চেয়েছিলেন। বেশ কিছু জাদুকরী মুহূর্তও উপহার দিয়েছিলেন স্প্যানিশ এ কোচ। কিন্তু শেষ দিকে এ তারুণ্যই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সিটির অভিজ্ঞতার কাছে মার খেয়ে যায় তারা। লিগের শেষ দিকে সিটি যেখানে টানা ১১ ম্যাচ জেতে, তখন আর্সেনাল আট ম্যাচে মাত্র ৯ পয়েন্ট পেয়েছিল।

দুরন্ত ব্রাইটন: প্রিমিয়ার লিগে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাব কোনটি? ব্রাইটন ছাড়া আর কে! মন জিতে নেওয়া দুরন্ত ফুটবল খেলে পয়েন্ট টেবিলে ষষ্ঠ হয়েছে তারা। আসন্ন দলবদলের বাজারেও চুটিয়ে ব্যবসা করবে ব্রাইটন। ক্লাবটির দুই মিডফিল্ডার ম্যাক এলিস্টার ও ময়েসেস সাইসেদোকে নিয়ে এরই মধ্যে বড় বড় ক্লাবের মাঝে টানাটানি পড়ে গেছে। মৌসুমের শুরুতেই চেলসি তাদের কোচ গ্রাহাম পোটারকে ছিনিয়ে নিলে চিন্তার ভাঁজ দেখা গিয়েছিল অনেকের কপালে। তবে পোটার যেখানে দলকে রেখে গিয়েছিলেন, ঠিক সেখান থেকেই শুরু করেন রবের্তো ডি জেরবি। ইতালিয়ান এ কোচের অধীনে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ব্রাইটন।

লিভারপুলের ধস কী সমাগত?: ইয়ুর্গেন ক্লপ লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এনে দিয়েছেন। লিগ শিরোপার জন্য ২৯ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়েছেন। ২০২১-২২ মৌসুমে তো মাত্র দুটি ম্যাচের জন্য কোয়াড্রোপুল (এক মৌসুমে চার শিরোপা) ছুটে যায় তাদের। সেই লিভারপুল এবার কোনো শিরোপা জিততে পারেনি। আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও দেখা যাবে না তাদের। তাহলে কী লিভারপুলের দিন শেষ? যদিও ক্লপ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তবে এজন্য তাদের মিডফিল্ড পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে। এই পুনর্গঠন কাজে ক্লপের প্রধান টার্গেট ছিলেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহাম। কিন্তু তাঁকে নিয়ে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। ক্লপের আরেক টার্গেট ম্যাক এলিস্টারও মিস হওয়ার পথে। ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যানসিটির ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইন এ মিডফিল্ডারের সঙ্গে গার্দিওলাকে কানে কানে কথা বলতে দেখা গেছে।

হালান্ডের আবির্ভাব: প্রিমিয়ার লিগে প্রথম মৌসুমে বাজিমাত করেছেন আর্লিং হালান্ড। তিনি এখন বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার আর সিটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের সেরা ক্লাব। এ যেন একেবারে সোনায় সোহাগা। ৩৬ গোল করে তিনি শুধু মোহামেদ সালাহর ৩২ গোলের রেকর্ডই ভাঙেননি, শিয়েরার ও কোলের ৪২ ম্যাচের রেকর্ডও (৩৪ গোল) ভেঙে দিয়েছেন। সেটাও আবার ৩১ ম্যাচ খেলে! কাজটা দারুণভাবে করেছেন বলেই লিগের সেরা গোলদাতার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন নরওয়ের এই তরুণ। অথচ তাঁর বয়স মাত্র ২২ বছর!