বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার একটি ক্লাবে অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছেন মিনহাজুল করিম স্বাধীন। সেখানকার তৃতীয় বিভাগের দল অ্যাটলেটিকো ভিলা স্যান কার্লোস ক্লাব থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন যশোর শামস-উল-হুদা একাডেমির তরুণ খেলোয়াড় স্বাধীন। ওই ক্লাবে এক মাসের অনুশীলনে নজর কাড়তে পারলে স্বাধীন ওই ক্লাবের হয়ে খেলবে সেদেশের তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে।

স্যান কার্লোস ক্লাবের সাথে স্বাধীনের যোগাযোগ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ট্রেইনার অ্যারিয়েল কোলম্যানের মাধ্যমে। কোলম্যান শামস উল হুদা একাডেমী পরিদর্শনে এসেছিলেন। স্বাধীনের খেলা দেখে মুগ্ধ হন তিনি। তার উদ্যোগে স্বাধীনের খেলার ভিডিও পাঠানো হয় আর্জেন্টিনায়। তাতেই ভাগ্য খুলেছে তরুণ এই ফুটবলারের। এসেছে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দেশের ক্লাব থেকে ডাক। তুখোড় মিডফিল্ডারের সঙ্গে উইঙ্গার হিসাবেও পারদর্শী স্বাধীনের এই আর্জেন্টিনা যাত্রায় নতুন করে বাংলার ফুটবলে স্বপ্ন দেখাবে তরুণদের বলে মনে করছেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা।

যশোর শহরের পুরাতন কসবা পালবাড়ির সন্তান মিনহাজুল করিম স্বাধীন। বয়সভিত্তিক ফুটবলের পরিচিত মুখ তিনি। ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৪ সুপার কাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। ছিলেন ২০১৭ সালের নেপালের মাটিতে আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ দলেও। ২০১৮ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ দলেও খেলেছেন তিনি। ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের যুব দল নিয়ে অনুষ্ঠিত বাফুফে অনূর্ধ্ব-১৮ লিগে চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন।

আর্জেন্টিনার ক্লাব থেকে ডাক পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত স্বাধীন। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে যশোরের এই ফুটবলার বলেন, 'আমার কাছে পুরো বিষয়টা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমি নিজে ছোটবেলা থেকে আর্জেন্টিনা ও লিওনেল মেসির ভক্ত। সেই আর্জেন্টিনায় আমি ফুটবল অনুশীলন করতে যাব, এটার চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে?'

স্বাধীনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ফজলুল করিম নিজেও ফুটবল খেলেছেন সেনাবাহিনী দলের হয়ে। বাবার উৎসাহে বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে স্বাধীন। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শামস উল হুদা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা নাসের শাহেরিয়ার জাহেদি, কর্মকর্তা আর কোচ কাজী মারুফের প্রতি।

শামস উল হুদা একাডেমির কোচ কাজী মারুফ জানান, 'স্বাধীন কয়েক বছর ধরেই বয়সভিত্তিক ফুটবলে নিজেকে প্রমাণ করে আসছে। সে তুখোড় উইঙ্গার। একদিন বাংলাদেশের সেরা উইঙ্গার হবার সম্ভাবনা তার মধ্যে রয়েছে। সে নিজে গোল করতে পারে। করাতেও পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে প্রথম ফুটবলার হিসেবে আর্জেন্টিনায় প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে এসে যদি ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, তাহলে সে বড় খেলোয়াড় হবে।'

২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত যশোর শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি এখন দেশের ফুটবলের আলোক-বর্তিকা। একাডেমিতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া এবং চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা। খেলাধুলা, পড়াশুনার পাশাপাশি মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধেরও শিক্ষা দেয়া হয়। আর ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার দৃঢ় স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলছেন ফুটবলাররা। 

শামস উল হুদা একাডেমি থেকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য খেলোয়াড়দের প্রেরণ করা নতুন না। ২০১৪ সালে এয়ারটেল রাইজিং স্টার্সের সাথে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে প্রশিক্ষণ, ব্রাজিলের সোসিয়েদাদ স্পোর্তিভো দ্য গামা ক্লাবের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ পান বাংলাদেশের ১১ জন তরুণ ফুটবলার। স্বাধীনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হলো নতুন আরেকটি পালক।