গুলিস্তানের ক্রীড়া কমপ্লেক্স দেখে যে কারও মনে হতে পারে, ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজারে খেলাধুলার জন্য কিছু জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছে আসবাবের মার্কেটে। স্টেডিয়ামের ভেতরের সব সৌন্দর্য ম্লান করে দিতে এই দোকানগুলোই যথেষ্ট। মার্কেটময় স্টেডিয়াম বিদেশি খেলোয়াড়দের কাছে এক বিস্ময়। সুখবর হলো– কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে দোকানমুক্ত।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার সহকারী পরিচালক সুকুমার সাহা জানান, নতুন করে নির্মাণাধীন বা প্রস্তাবিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে বাণিজ্যিক স্থাপনা না রাখার নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কক্সবাজার ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সে নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপ সামনে রেখে সে সময় কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্ট সৈকতের পাশের গলফ কোর্সের জমিতে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কমপ্লেক্স গড়ে তোলে বিসিবি। ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে খেলার মাঠ করা হলেও স্টেডিয়ামে রূপ দিতে পারেনি। এনএসসি পরবর্তী সময়ে ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্প বাস্তবায়নযোগ্যতা নিরীক্ষা সম্পন্ন করে কমপ্লেক্সের ভেতরে একটি হকি স্টেডিয়াম রাখারও সুপারিশ রয়েছে কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে।

সুকুমার সাহা বলেন, “প্রাথমিক প্রস্তাব ছিল ক্রিকেট ও ফুটবলের জন্য দুটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম হবে। আমরা যাদের ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ করতে দিয়েছিলাম, তাদের একটা প্রস্তাবনা ছিল আরও কিছু জায়গা যেহেতু অব্যবহৃত রয়েছে– তিন থেকে চার একরের মতো, সেখানে একটি হকি স্টেডিয়াম করা যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সেভাবেই আছে, হকি স্টেডিয়াম যোগ করার সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

তবে ভালো দিক হলো স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের নকশায় মার্কেট রাখা হয়নি। এনএসসির সহকারী পরিচালক সুকুমারের মতে, “যে নকশা পাওয়া গেছে, তাতে মার্কেট নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এখন এ রকমই– ‘ক্রীড়া কমপ্লেক্স ক্রীড়ার মতো থাকবে। কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স আলাদা করতে হবে।’ আমরা এখন পর্যন্ত সেটা অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। যেসব স্টেডিয়ামে দোকান হয়ে গেছে, সেখানে কিছু করার নেই। নতুন যেসব স্থাপনা হচ্ছে, সেখানে দোকান রাখা হচ্ছে না।”

কক্সবাজার ক্রীড়া কমপ্লেক্সে ফুটবলের পাশাপাশি হকি স্টেডিয়াম রাখার পরিকল্পনা থাকলেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণে। সুকুমার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যা যা সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, সে মান বজায় রেখে একটি কমপ্লেক্স করা হবে। যেখানে একটি আউটার স্টেডিয়াম থাকবে। পাঁচতারকা মানের একটি আবাসিক ভবন থাকবে। আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা যা যা থাকার, সবই থাকবে।’

এনএসসির এ কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক প্রস্তাবনা অনুযায়ী ক্রীড়া কমপ্লেক্সটির আনুমানিক নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। একসঙ্গে পুরো কমপ্লেক্স গড়ে তোলা না গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা এনএসসির। ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সমুদ্র প্রান্তে কোনো গ্যালারি থাকছে না। এর পরও ৩০ থেকে ৩৫ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারবেন একসঙ্গে।

তবে ফুটবল স্টেডিয়ামটি ১৫ থেকে ২০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন করা হবে বলে জানান সুকুমার। প্রকল্প বাস্তবায়ন নিরীক্ষা সম্পন্ন করে এখন বাজেটের জন্য প্রস্তাবনা তৈরির কাজ করছে এনএসসি।